ঢাকা মেইল ডেস্ক
১০ জুলাই ২০২৩, ০৪:১৮ পিএম
মুন্সিগঞ্জ থেকে জ্বর নিয়ে ঈদের পরদিন রাজশাহীতে বাড়িতে এসেছিলেন সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মী পাপ্পু (২৫)। শনিবার (৮ জুলাই) সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
চিকিৎসকরা বলছেন, পাপ্পু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম রোগী তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২ জুলাই পাপ্পু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে ৪ জুলাই তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
পাপ্পুর স্ত্রী অঞ্জনা খাতুন জানান, তার স্বামী মুন্সিগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের দুই দিন আগে সেখানেই জ্বর হয়। জ্বর নিয়ে তিনি ঈদের পরদিন বাড়িতে আসেন। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, জুন মাস থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। তাদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালের ৩০নং পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ৮ জন পুরুষ ও ৮ জন নারীসহ মোট ১৬টি বেড রাখা হয়েছে। হাসপাতালে বর্তমানে ৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে চারজনেরই শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাকি তিনজন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এ পর্যন্ত হাসপাতালটি থেকে ২৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এছাড়া একটি বিশেষ চিকিৎসক টিমও প্রস্তুত রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে একেবারেরই খারাপ সেটাও না, তবে প্রতিনিয়ত তিন-চার জন রোগী আসছে, ভর্তি হচ্ছে। জটিল রোগীদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সেল সেপারেটর যন্ত্র ও এফেরেসিস মেশিন দুটোই আমাদের এখানে চালু আছে।
তিনি আরও বলেন, আক্রান্তদের প্রায় সব রোগীই ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত। তবে ঢাকা থেকে যারা আসছেন তারা তো ভাইরাস নিয়ে আসছে। আর তারা যদি মশারির ভেতরে না থাকে, এডিস মশা যদি এদেরকে কামড়ায় সেক্ষেত্রে ঝুঁকিটা আরও বাড়বে। হাসপাতালে যারা ভর্তি আছে তাদের শুরু থেকেই কঠোরভাবে মশারির ভেতর রাখা হয়। তাদের পুরো চিকিৎসাটাই মশারির ভেতর করা হয়। কোনো অবস্থাতেই মশারি থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকে না।
এছাড়াও হাসপাতালে যারা কাজ করছেন, কোথাও যেন কোনো পানি বা ময়লা জমে না থাকে সে ব্যাপারে সবার প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।
এদিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দুই সহোদর শামিম ও নূর নবী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। এদের মধ্যে শামিম ঢাকা মেইলকে জানান, তারা দুজনেই ঢাকায় থাকতেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে চারদিন ভর্তি ছিলেন। মেডিকেলের সেবার মানে সন্তুষ্টও প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি জানতে রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মাদ ফারুকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছু রোগী ভর্তি আছে। তারা সবাই রাজশাহীর না, শুধুমাত্র বাঘা উপজেলার দুইজন ভর্তি আছে। তাদের সবাই ভালো আছেন। শুক্রবার টেস্টে কাউকে পজিটিভ পাওয়া যায়নি। আগের দিনে শুধু বাঘাতেই পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন হাট-বাজারে মানুষজনকে সচেতন করছি। আমাদের যতগুলো হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, সাব-সেন্টার আছে প্রত্যেকটাতেই নতুন করে প্রচারাভিযান শুরু করছি আমরা। পাশাপাশি যারা চিকিৎসা নিতে আসছে তাদেরও সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটা উপজেলায় ডেঙ্গু টেস্ট কীট পর্যাপ্ত রয়েছে।
ডেঙ্গু রোগী কিছুটা বাড়লেও সিটি করপোরেশনের তৎপরতা যথেষ্ট আছে। তারপরও মশক নিধন কার্যক্রমটা বাড়লে রাজশাহীর পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাবে না বলে আশা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
নগরীর ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের কোনো ডেঙ্গু রোগী রিপোর্ট নাই। স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো রিপোর্ট দেয়নি, কোনো রোগী নাই।
প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও কীট রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার থেকে কারো অসুবিধা হলে টেস্ট করাতে পারবেন। নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সীমিত ফি পরিশোধ করে সন্দেহভাজন রোগীরা এই টেস্ট করাতে পারবেন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজশাহী বিভাগে স্থানান্তরিত কিছু ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, যারা ঢাকা থেকে এসেছিলেন। তবে সংখ্যাটা খুবই কম, পুরো বিভাগে প্রতিদিন দু-তিন জন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। একেক দিন একেক জেলার একটা করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এলাকাভিত্তিক ঝুঁকির ব্যাপারে এখনই বলা যাচ্ছে না।
প্রতিরোধের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিরোধে আমাদের টার্গেট সিটি করপোরেশন। আমরা সিটি করপোরেশন এলাকায় মশার লার্ভা উপস্থিতির সার্ভে করতেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে, তখন কি পরিস্থিতি সেটা বুঝা যাবে। এর বাইরে অন্য জেলায় সার্ভের এখন আপাতত চিন্তা-ভাবনা নাই।
প্রতিনিধি/এইচই