জেলা প্রতিনিধি
২৯ জুন ২০২৩, ০৩:০৭ পিএম
বগুড়ায় চামড়া কেনার মানুষ পাচ্ছেন না কোরবানিদাতারা। সকালে নামাজ শেষে কোরবানির পর অনেকের বাড়িতেই পড়ে আছে চামড়া, কিন্তু দাম বলতে যায়নি কেউ। কিছু এলাকায় সকালে ক্রেতারা ঢুকলেও বেলা বাড়ার পর আর দেখা মেলেনি তাদের।
বেলা ১২টা পর্যন্ত কোরবানি করা পশুর যে চামড়া ৮০০ টাকা দাম বলা হয়, সাড়ে ১২টার দিকে তার দাম নেমে যায় ৫০০ টাকায়। কারণ মাঠ থেকে ফড়িয়া ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে মূল বাজারে তা বিক্রি করতে পারবেন কি-না সেই শঙ্কা রয়েছে।
গত বছর যে দামে তারা মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া কেনেন তার অর্ধেক দামে আড়ততে বিক্রি করতে হয়। সেই লোকসানের আশঙ্কাতেই এবার মাঠে নেই তারা।
বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোরবানিদাতা, ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
বেলা ১১টার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা তাদের লোকজন নিয়ে চামড়া কিনতে বসেন। শহরতলী ও গ্রামাঞ্চল থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সেসব দোকানে চামড়া বিক্রি করতে আসেন। কিন্তু এবার সেসব দোকানে বেলা দেড়টা পর্যন্ত তেমন কোনো চামড়া এসে পৌঁছেনি।
যে দু’চারজন বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান ও ভটভটিযোগে চামড়া আনছেন তাদের সেই পরিবহণ আটকিয়ে আড়তদারের লোকজন এতোটাই কম দাম বলছেন যে আসল টাকাই উঠবে না ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান এলাকা থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা মামুনুর রশিদ নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ীর ভটভটি থানা মোড় এলাকায় আটকিয়ে একইভাবে কম দাম দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পুরো বাজারের ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে দাম কম দিচ্ছে। তার মতো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাও তুলতে পারবে না।
থানা মোড়ে চামড়া কিনতে বসা চামড়া ব্যবসায়ী জসমত উল্লাহ বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার লবনের দাম বেশি, এছাড়া আড়ত থেকে নগদ টাকা পাওয়া যায়নি, একারণে বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
শহরের লতিফপুর এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক রকেট হোসেন বলেন, তাদের এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরু কোরবানির পর থেকে দীর্ঘ সময় বাড়িতে পড়ে ছিল। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একজন ক্রেতাকে ডেকে এনে তার কাছে মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শফিউল আযম সজল বলেন, সকালে কোরবানির পর থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের বাড়িতে একটি গরু ও একটি খাসির চামড়া পড়ে আছে, কেউ দামও বলতে আসেনি।
একই কথা বলেন শহরতলীর ধাওয়াপাড়ার বাসিন্দা হোটেল ব্যবসায়ী রাজু হোসেন। তিনি বলেন, ক্রেতা না পেলে কোনো এতিমখানায় চামড়া পাঠিয়ে দিতে হবে। শহরের মালগ্রাম এলাকার বাসিন্দা শামীম হোসেন ৩০ হাজার টাকার কেনা খাসির চামড়া বিক্রি করেন মাত্র ৩০টাকায়।
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি একেএম আসাদুজ্জামান খান বলেন, ব্যবসায়ীদের আড়তে এখনো চামড়া কেনা শুরু হয়নি। মাঠ পর্যায়ে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছে। তারা হয়তো বাড়তি লাভের আশায়, অথবা ভালো মানের চামড়ার সঙ্গে খারাপ মানের চামড়ার গড় করতে কম দামে চামড়া কিনছে। তবে আড়তে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া কেনা হবে। এতে ভালো মানের চামড়ার দাম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হওয়ার কথা।
তিনি আরও বলেন, নগদ টাকার সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিচ্ছেন না। একারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিজ দায়িত্বে চামড়া কিনছে। তারা বিক্রি করতে না পারলে লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করবে। এবার বাজারে যে দাম আছে তা গত বছরের তুলনায় ভালো বলে জানান তিনি।
প্রতিনিধি/এসএস