জেলা প্রতিনিধি
২৯ জুন ২০২৩, ০২:৪৭ পিএম
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এবারের কোরবানির ঈদের আগে ব্যাপক আলোচনায় আসে রাজবাড়ীর ৩০ মণ ওজনের ষাঁড় 'সিংহরাজ'। দাম হাকা হয়েছিল ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতার অভাবে ও প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় স্থানীয় হাটে গরুটিকে বিক্রি করেননি তার মালিক সুচিন্ত্য কুমার সেন।
পরে গরুটিকে তিনি ঢাকার আফতাব নগর হাটে তোলেন। আফতাব নগর হাটে গতকাল বুধবার (২৮ জুন) বিকেলে গরুটি তিনি ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
জানা গেছে, এবছর কোরাবানির ঈদে রাজবাড়ীর মধ্যে আলোচনায় আসা বড় গরুর মধ্যে 'সিংহরাজ' অন্যতম। ৩০ মন ওজনের গরুটি উচ্চতায় ৬ ফুট ও লম্বায় ১০ ফুট। রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিংগা বাজার সংলগ্ন সুচিন্ত কুমার সেনের খামারে সিংহরাজ বেড়ে উঠে।
প্রায় ৪ বছর আগে কুষ্টিয়া থেকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি কিনেছিলেন সুচিন্ত কুমার সেন। আদর করে যার নাম রাখেন সিংহরাজ। ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টি চার বছর ধরে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে লালন পালন করেছেন গরুর মালিক সুচিন্ত। এই বিশাল ষাঁড়টির গায়ের রং কালো। প্রতিদিন তার খাদ্যতালিকায় ছিল খেসারির ভুষি, ডাবলির ভুষি, ভুট্টার ভুষি, খুদের ভাত, ডাব ও গুড় দিয়ে তৈরি শরবত, কাঁচা-পাকা কলা, গমের ভুসি ও কাঁচা ঘাস।
সিংহরাজের মালিক সুচিন্ত্য কুমার সেন মুঠোফোনে বলেন, তিনি প্রায় ৪ বছর ধরে সিংহরাজকে লালন পালন করেছেন। গত বছর তিনি গরুটি বিক্রির জন্য ঢাকার গাবতলী হাটে তোলেন। সে সময় ৮ লাখ টাকা দাম হয়েছিল। কিন্তু তিনি ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশায় গরুটি ঢাকা থেকে ফেরত আনেন। এরপর এক বছর আবার লালন পালন করেন। ভেবেছিলেন এবছর তিনি আশানুরূপ দাম পাবেন।
কিন্তু স্থানীয় হাটে গরুটির কোনো ক্রেতা ছিল না। পরে তিনি ঈদের ৩/৪ দিন আগে ঢাকার আফতাব নগর হাটে নিয়ে যান। সেখানেও একই অবস্থা। বড় গরুর ক্রেতা কম। আবার দামও কম। সেখানে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা দাম হলেও তিনি বিক্রি করেননি। পরে গতকাল তিনি বিকেলে ৫ লাখ টাকায় সিংহরাজকে বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, আমরা প্রান্তিক খামারি। অনেক আশা নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করে গরু লালন-পালন করি। নিজেরা না খেয়ে থাকলেও গরুটিকে কখনও না খেয়ে রাখিনি। চার বছর ধরে আমি, আমার স্ত্রী, সন্তান অনেক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু আশানুরূপ দাম পেলাম না।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়েরউদ্দিন বলেন, সুচিন্ত সেনের গরু সিংহরাজ জেলার কয়েকটি বড় গরুর মধ্যে একটি। গত বছরই গরুটির দাম ৮ লাখ টাকা উঠেছিল। কিন্তু সুচিন্ত গরুটি বিক্রি করেনি। এই বছর সে গরুটি ২৫ লাখ টাকা দাম চেয়েছিল। ভেবেছিলো হয়তো ১৫ লাখ টাকা দাম পাবে। কিন্তু সর্বশেষ সে গরুটি ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সবসময় খামারিদের ছোট ও মাঝারি আকারের গরু লালন-পালন করতে পরামর্শ দেই। কারণ ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি থাকে। আর বড় গরুর ক্রেতা কম আবার দাম ও কম থাকে। বড় গরু পালন করে খামারিদের লাভের থেকে লোকসানই বেশি হয়।
প্রতিনিধি/এসএস