images

সারাদেশ

প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করেও শোলাকিয়া ঈদ জামাতে মানুষের ঢল

জেলা প্রতিনিধি

২৯ জুন ২০২৩, ০১:০৩ পিএম

প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে আনন্দঘন পরিবেশে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া মাঠে অনুষ্ঠিত হলো দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজ।

গতরাত থেকেই বৃষ্টি। সকালে কর্দমাক্ত মাঠ। তবুও শোলাকিয়া মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা স্থানীয় মুসুল্লিদের কাছে একটি আবেগের জায়গা। সকাল থেকে মুসল্লিদের উপস্থিতি কম থাকলেও। নামাজের আগমুহূর্তে বাড়তে থাকে উপস্থিতি।

কেউ ছাতা মাথায়, কেউবা রঙ-বেরঙের পলিথিন। মাঠে জমে থাকা পানি ও মুশলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপস্থিত মুসল্লিরা।

আজ ছিল শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৬তম নামাজ। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও সকাল ৯টায় শুরু হয় এই নামাজ। এতে ইমামতি করেন, মার্কাস মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান।

নামাজ শেষে-হাওরের বন্যা রক্ষা, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

ঈদের জামাতকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনি পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হাসিমুখে সহযোগিতা করতে দেখা যায় মুসল্লিদের।

জেলা শহরের শিক্ষক পল্লীর বাসিন্দা সাইদুল হক শেখর ঢাকা মেইলকে বলেন, ৪০ বছর ধরে এখানে নামাজ পড়ি, ঝড় থাকুক কিংবা বৃষ্টি শোলাকিয়া মাঠে নামাজ পড়া ছাড়া ঈদই মনে হয় না।

গাইটাল এলাকার বাসিন্দা বুলবুল বলেন, বাসা থেকে না করতাছিল, একবার ভাবছিলাম আসব না, পরে মনে হইলো শোলাকিয়া মাঠের নামাজ ছাড়া ঈদ ভাবা যায় নাকি।

Eid

সকালে প্রচণ্ড বৃষ্টির মাঝেও ভোর থেকেই শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের দিকে যেতে থাকে মুসল্লিরা। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ ইজিবাইকে, কেউ সাইকেলে, কেউবা পায়ে হেঁটে। প্রতিবারের মতো এবারও মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধায় দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে, অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে যায়। ঈদগাহ এলাকায় কয়েকটি মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিল বিপুল সংখ্যক স্কাউট সদস্য।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাষক ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই এবারের ঈদ জামাত শেষ হয়েছে। জনগণও নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরেছে।

নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন- ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ।

ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুই প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‍্যাব আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। একই সঙ্গে মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরসহ প্রবেশ পথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাঠে স্থাপিত ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূরবীন ও স্নাইপার রাইফেল নিয়ে দায়িত্ব পালন করে র্যা ব ও পুলিশ সদস্যরা। শোলাকিয়া এলাকা ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাসেল শেখ ঢাকা মেইলকে বলেন, পুলিশের দায়িত্ব সর্বত্র। আমরা নিরাপত্তার পাশাপাশি এই বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও নামাজ আদায় করে জনগণ যেন গন্তব্যে ফিরতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম।

শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ উপলক্ষে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোরণ। রাস্তার দু’পাশে টাঙানো হয় রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার। সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জে ছিল বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ।

জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

প্রতিনিধি/এসএস