মোস্তফা ইমরুল কায়েস
২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০৭ এএম
কয়েক বছরে আকাশ পথে তেমন কোনো সুখবর ছিল না। উল্টো করোনার বিভীষিকা থমকে দিয়েছিল সবকিছু। থমকে গিয়েছিল আকাশ পথে যাত্রী চলাচলও। তবে ধীরে ধীরে শঙ্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু।
গুটিয়ে নেয়া আকাশ পথও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নতুন দুই দিগন্তে পথচলা শুরু হয়েছে নতুন দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের। সেগুলো হলো- এয়ার অ্যাস্ট্রা ও থাই এয়ার এশিয়া। এরমধ্যে এয়ার অ্যাস্ট্রা শুরুতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা ও ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে সেবা দেওয়া শুরু করেছে। আর থাই এয়ার এশিয়া যাত্রা শুরু করেছে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে থাইল্যাণ্ডের সুবর্ণ বিমানবন্দর পর্যন্ত।
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার ছাড়াও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সেবা দিচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বছরের শুরুতে কানাডায় রুট চালু করা হলেও সেই রুটে তেমন সাড়া নেই বললেই চলে। এছাড়া চীনের গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার কথা বললেও এখনো কোনো সুখবর দিতে পারেনি। ফলে বিমান বাংলাদেশ অনেকটা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।
অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতু খুলে যাওয়ায় বরিশাল রুটে আকাশ পথে যাত্রীর সংকট দেখা দেয়। ফলে নভোএয়ার ও বিমান যাত্রী সংকটে বরিশাল রুটে তাদের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে।
যদিও সাহস নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রত্যেকটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।
গত ২৫ বছরে দেশে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে- অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়্যাল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইনস, বেস্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ার। সবশেষ করোনার মধ্যে গত বছরের মার্চ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে রিজেন্ট এয়ার।
দেশীয় রুটে যাত্রীর আস্থা বাড়াতে চায় এয়ার অ্যাস্ট্রা
এয়ার অ্যাস্ট্রা চারটি এয়ারক্রাফট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর সকাল ৮টায় এয়ার অ্যাস্ট্রার এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট ৭০ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সেদিন ক্যাপ্টেন হিসেবে ছিলেন খালিদ সাইফুল্লাহ।
এয়ার অ্যাস্ট্রার হেড অব গ্রাউন্ড (অপারেশন অ্যান্ড ডিজিআর) কেএম জাফর উজ্জামান জানান, সেদিনই তারা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মিলে ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এয়ার অ্যাস্ট্রার এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফটি ফ্রান্সে নির্মিত। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক টার্বোপ্রপ প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্য এয়ারক্রাফট।
এয়ার অ্যাস্ট্রা কর্তৃপক্ষ জানায়, ফ্লাইট পরিচালনার জন্য এয়ার অ্যাস্ট্রার দুটি এটিআর ৭২-৬০০ মডেলের এয়ারক্রাফট দেশে পৌঁছেছে। এগুলোতে মোট আসন সংখ্যা ৭০টি। একই মডেলের আরও দুটি এয়ারক্রাফট এ বছরই যুক্ত হবে তাদের বহরে। ২০২৩ সালে আরও ৬টি এয়ারক্রাফট এনে ১০টির বহর তৈরি করবে এয়ার অ্যাস্ট্রা।
বর্তমানে দুই এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে দৈনিক ৩টি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ার অ্যাস্ট্রা। পর্যায়ক্রমে বরিশাল ছাড়া দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটেই ফ্লাইট পরিচালনার কথা বলেছেন তারা।
গত অক্টোবরের শুরুতে এয়ার অ্যাস্ট্রার এটিআর ৭২-৬০০ মডেলের এয়ারক্রাফট দেশে পৌঁছে। বুলগেরিয়ার সোফিয়া থেকে ৫ অক্টোবর রওনা হয়ে মিশরের কায়রো, ওমানের মাস্কাট ও ভারতের আহমেদাবাদ হয়ে দেশে পৌঁছে এয়ারক্রাফটটি।
এয়ার অ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ জানিয়েছেন, এয়ার অ্যাস্ট্রা চারটি এটিআর ৭২-৬০০ মডেলের প্লেন লিজ নিয়েছে। সেগুলো দিয়েই যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটের প্রতিটি বিমানবন্দরেই ফ্লাইট চলছে। বাকি তিনটি এয়ারক্রাফটও শিগগরিই দেশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা-ডনমুয়াং রুটে থাই এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট চালু
দেশের অভ্যন্তরে যেমন নবদিগন্ত খুলে দিয়েছে এয়ার অ্যাস্ট্রা, তেমনি আবার বেসরকারিভাবে ঢাকা থেকে থাইল্যান্ড যাওয়ার দ্বার খুলেছে থাই এয়ার এশিয়া। মালয়েশিয়া-ভিত্তিক এই বেসরকারি এয়ারলাইন্সটি গত ২৪ নভেম্বর রাত থেকে ঢাকা-ডনমুয়াং রুটে ফ্লাইট চালু করেছে। এয়ারলাইন্সটি আপাতত ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তবে যাত্রীর চাপ বিবেচনায় পরবর্তীতে সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে ব্যাংককের সুবর্ণ এয়ারপোর্টেও ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে এয়ারলাইন্সটির।
থাই এয়ার এশিয়ার সিইও সান্তিসুক ক্লোংচাইয়া জানান, সর্বনিম্ন ভাড়া ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু। তবে ভাড়া নির্ভর করবে যাত্রী কোন শ্রেণির টিকিট কিনবেন। যদিও এই রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা বলছেন, থাই এয়ার এশিয়া যা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে তা খুব সুলভ নয়। কারণ অন্যান্য বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোও একই ভাড়া নিয়ে থাকে।
এয়ারলাইন্সটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের লাগেজ বহন করতে পারবে। এর বেশি ওজন হলে তার জন্য চার্জ প্রযোজ্য হবে।
এমআইকে/জিএম/এমআর