images

ককপিট

যুদ্ধবিমান যেভাবে রাডার ফাঁকি দেয়

এভিয়েশন ডেস্ক

১৫ জুলাই ২০২২, ১২:০০ পিএম

যুদ্ধক্ষেত্রে বোমা হামলার উদ্দেশ্যে বিমানের ব্যবহার শুরু হয় ১৯১১ সালে। প্রথমদিকে এটি ছিল অপরাজেয় যুদ্ধযান। এরপর এসেছে ক্ষিপ্রগতির যুদ্ধবিমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাডার প্রযুক্তি, এরপর এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল। 

বোমারু বিমান নিয়ে শত্রুদেশের হামলা তো দূরের কথা, আকাশসীমায় প্রবেশের আগেই সতর্ক করে দেয়ার জন্য বর্তমানে প্রায় সব দেশের কাছে রয়েছে আধুনিক রাডার। কিন্তু, ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যেকোনো যুদ্ধাস্ত্রের মোকাবেলায় পাল্টা অস্ত্র বানানো হয়েছে। এই যেমন রাডার নজরদারি ফাঁকি দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে স্টেলথ (Stealth) যুদ্ধবিমান। কীভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করে, কীভাবেই বা এই শ্রেণীর বিমান রাডারকে ফাঁকি দেয়? বিস্তারিত জানুন। 

stealth aircraftরাডার যেভাবে কাজ করে 

RADAR এর পূর্ণরূপ RAdio Detection And Ranging। এই প্রযুক্তিটি দুইভাবে কাজ করে। অ্যাক্টিভ হোমিং মোড এবং প্যাসিভ হোমিং মোড। অ্যাক্টিভ হোমিং মোডের ক্ষেত্রে বিশাল এন্টেনার সাহায্যে রেডিও তরঙ্গ আকাশে ছুড়ে মারা হয়। এই তরঙ্গ বিমানের গায়ে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। ফিরতি তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে রাডার স্টেশন থেকে বিমানের দূরত্ব, উচ্চতা, এমনকি আকারও বলে দেওয়া যায়। বেশিরভাগ দেশেই এই শ্রেণির রাডার রয়েছে।

অন্যদিকে, প্যাসিভ হোমিং মোডে বিমান থেকে নির্গত তরঙ্গ (যেমন- বিমানের রাডার) এবং অন্যান্য সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে এর অবস্থান, উচ্চতা নির্ণয় করা হয়। সাধারণ যেকোনো এয়ারক্রাফট ওড়ার সময় তা রাডারের ছায়া (shadow) অঞ্চলে থাকলে ধরা পড়ে না। এজন্য এটি সাময়িক সময়ের জন্য স্টেলথ। যেমন- পাহাড়ের আড়ালে বা সমুদ্রের পানি ঘেঁষে বিমান উড়লে সেটি রাডারে দেখা যায় না। 

stealth aircraftস্টেলথ যুদ্ধবিমান যেকোনো উচ্চতায় নির্দিষ্ট পরিধি পর্যন্ত অ্যাক্টিভ হোমিংকে ফাঁকি দিতে পারে। তবে এগুলো প্যাসিভ হোমিংকে পুরোপুরি ফাঁকি দিতে পারে না। এসব বিমান বিশেষ ডিজাইনে প্রস্তুত করা। তাই রাডার তরঙ্গ বিমানে ধাক্কা খেয়ে অন্যদিকে চলে যায়। এছাড়া বিমানের পুরো শরীরজুড়ে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক উপাদানের প্রলেপ দেয়া থাকে যা রেডিও তরঙ্গ শুষে নেয়। ফলে রাডারে বিমানটি ধরা পড়ে না। 

স্টেলথ হওয়ার আরেকটি উপায় হলো ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ারের মাধ্যমে রাডারকে ভুয়া টার্গেট দেখিয়ে নিজেকে আড়াল করা। রাডার অনেকটা এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলের চোখের মতো। রাডার যদি শত্রুবিমান খুঁজে না তবে যতই অত্যাধুনিক মিসাইল বানানো হোক তা কোনো কাজে আসবে না। এজন্যই সামরিকভাবে উন্নত রাষ্ট্রগুলো কীভাবে আরও আধুনিক রাডার বানানো যায় তার জন্য ব্যাপক হারে অর্থ বিনিয়োগ করছে। 

stealth aircraftতবে কি স্টেলথ বিমান রাডারে শনাক্ত করা অসম্ভব?

স্টেলথের পুরো বিষয়টি আপেক্ষিক। একটি রাডারের পরিসীমায় থাকা অবস্থায় একটি বিমান যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে সেটাই হলো স্টেলথ। রাডারের পরিসীমার ভেতর কত কিলোমিটার পর্যন্ত একটি বিমান ধরা না পড়ে থাকতে পারবে তা বিমান ও রাডার ভেদে ভিন্ন হয়। 

স্টেলথ টেকনোলজি যেভাবে কাজ করে

অ্যাক্টিভ রাডার হোমিং নিজ থেকে রেডিও তরঙ্গ ছুড়ে টার্গেট শনাক্ত করে। আধুনিক রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার (RWR) সেন্সর সেই তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে পাইলটকে জানিয়ে দেয় কোথায় থেকে তাকে ট্র্যাক করা হচ্ছে। এরপর রাডার ধ্বংসের জন্য ফায়ার করা হয় এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল।

radarপ্রতিটি রাডারের নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যসহ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন রয়েছে। এই রেডিয়েশনকে এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল অনুসরণ করে রাডার ধ্বংস করতে এগিয়ে যায়। এভাবেই স্টেলথ বিমান দিয়ে শত্রুর চোখে ধুলো দেওয়া হয়। 

স্টেলথ বিমান শনাক্তে সাধারণত লংরেঞ্জ অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ হোমিং এর সমন্বিত রাডার ব্যবহার করা হয়। তবে এ ধরনের রাডার খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় মাত্র গুটিকয়েক দেশের কাছে তা রয়েছে। এটি স্টেলথ বিমান থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের তরঙ্গ, যেমন- বিমানের রাডার তরঙ্গ, ইঞ্জিনের ইনফ্রারেড সিগনেচার, দৃশ্যমান সিগন্যাল লাইট, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রাম ইত্যাদির সাহায্যে উক্ত বিমানকে শনাক্ত করে। এক্ষেত্রে টাইম ডিফারেন্স অফ অ্যারাইভাল (টিডিওএ) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। 

stealth aircraftএই পদ্ধতিতে ৩/৪টি প্যাসিভ রাডার থাকে যা নির্দিষ্ট দূরত্বে মোতায়েন করা হয়। এতে ভিন্ন সময়ে ভিন্নভাবে বিমানের সিগনেচার রাডারে ধরা পড়ে। তবে কেবল এই তথ্য দিয়ে তো বিমানের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তখন নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে সবগুলো রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে থ্রিডি ম্যাপ তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে বিমানের দূরত্ব, উচ্চতা নির্ণয় করা যায়। এয়ার ডিফেন্স মিসাইল ব্যাটারির সঙ্গে এই তথ্য শেয়ার করে কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। 

অনেক সময় প্যাসিভ হোমিংকে ফাঁকি দিতে স্টেলথ বিমান নিজের রাডারসহ রেডিও কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্টগুলো সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার কৌশল অবলম্বন করতে পারে। তবে বর্তমান যুগে এসব ছাড়া লম্বা সময় ধরে বিমান চালানো প্রায় অসম্ভব। আর তাই স্টেলথ অবস্থাও দীর্ঘ সময় বজায় রাখা সম্ভব নয়। 

তথ্যসূত্র: রোর মিডিয়া

এনএম