images

ককপিট

বিমান দুর্ঘটনা কেন হয়?

এভিয়েশন ডেস্ক

১৩ জুন ২০২৫, ১০:২৪ এএম

বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন প্রায় এক লাখের বেশি বাণিজ্যিক ফ্লাইট আকাশে উড়লেও, কিছু দুর্ঘটনা মাঝেমধ্যে আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই প্রযুক্তিনির্ভর যাত্রাও সর্বদা নিরাপদ নয়। প্রশ্ন জাগে, বিমান দুর্ঘটনা কেন ঘটে? এর পিছনে কী শুধু যান্ত্রিক ত্রুটি দায়ী, না কি আরও গভীর কোনো কারণ লুকিয়ে আছে?

১. যান্ত্রিক ত্রুটি

বিমান হলো হাজারো যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি একটি জটিল কাঠামো। ইঞ্জিন, ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম, হাইড্রলিক্স, সেন্সর ইত্যাদির যেকোনো একটি অংশে ত্রুটি দেখা দিলে উড়ন্ত অবস্থায় তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি থেকেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে।

২. মানবিক ভুল (Human Error)

গবেষণায় দেখা গেছে, বিমান দুর্ঘটনার প্রায় ৬০-৭০ শতাংশই ঘটে পাইলট বা কন্ট্রোল টাওয়ারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। ভুল সময়ে অবতরণ, উড্ডয়নে বিলম্ব, বা পরিস্থিতি মূল্যায়নে ভুল থেকেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

৩. খারাপ আবহাওয়া

ঝড়, বজ্রপাত, ঘন কুয়াশা, তীব্র তাপমাত্রা অথবা তুষারপাতের মতো খারাপ আবহাওয়া বিমান চালনায় বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় ঘূর্ণিঝড় বা বিদ্যুৎপূর্ণ মেঘের কারণে বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন: 2025 সালে কতটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে?

৪. এভিয়েশন প্রযুক্তির ত্রুটি

বিমান চালনার জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার, রাডার, জিপিএস বা অটোমেটেড ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমে কোনো গ্লিচ (bug) থাকলে সেটাও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে আধুনিক ফ্লাইটে ‘fly-by-wire’ প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা থাকায় সফটওয়্যারের ত্রুটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

৫. বাইরের আক্রমণ ও নাশকতা

যাত্রীবাহী বিমানকে লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত, সাইবার হ্যাক বা বোর্ডে বিস্ফোরক বহনের মতো ঘটনাও ইতিহাসে দেখা গেছে। ১৯৮৮ সালের লকারবি বোমা বিস্ফোরণ কিংবা ২০১৪ সালের MH17 দুর্ঘটনা এর উদাহরণ।

৬. পাখির সঙ্গে সংঘর্ষ (Bird Strike)

অনেকেই অবাক হন জেনে—পাখির সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষও দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। উড্ডয়ন বা অবতরণের সময় পাখি ইঞ্জিনে ঢুকে গেলে তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এজন্য বড় এয়ারপোর্টগুলোতে বিশেষ বার্ড কন্ট্রোল ইউনিট কাজ করে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB, FAA, ICAO)-এর মতে, প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে একাধিক কারণ থাকে। যান্ত্রিক ত্রুটি একা নয়, বরং তা পাইলটের সিদ্ধান্ত, আবহাওয়া এবং কমিউনিকেশনের সমন্বয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিমানে নিরাপত্তা বাড়াতে করণীয়

নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও টেকনিক্যাল চেক

পাইলট ও কন্ট্রোলারদের উন্নত প্রশিক্ষণ

আবহাওয়া পূর্বাভাসের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার

বিমানে অগ্নিনির্বাপক ও জরুরি অবতরণ প্রযুক্তির আধুনিকায়ন

যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো

আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ গণপরিবহন বলা হলেও, বিমান কখনওই শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। দুর্ঘটনার পেছনে থাকে নানা কারণ—যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে শুরু করে মানবিক ভুল কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিটি দুর্ঘটনা আমাদের শেখায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন কতটা জরুরি।

এজেড