images

ককপিট

বিমান ভ্রমণের আদবকেতা জানেন কি?

এভিয়েশন ডেস্ক

৩১ মে ২০২২, ০২:০৪ পিএম

পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষ বিমানে চড়েননি। তাদের বিমান নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। আবার কেউ আছেন শিগগিরই বিমান ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রথমবার বিমান ভ্রমণ সুখকর করতে চাইলে আপনাকে জানতে হবে কিছু নিয়ম। কেননা, বাস-ট্রেন ভ্রমণের সঙ্গে বিমান ভ্রমণের বিস্তর তফাত। জানুন বিমান ভ্রমণের আদবকেতা। 

flyবিমানবালার নির্দেশনা মানুন

ধরুন, সবেমাত্র বিমানের চাকা রানওয়ের পিচ স্পর্শ করল, স্বয়ং বিমানবালাও এখনো নিজের সিটবেল্ট না খুলে বিমানের গতি শূন্যে পৌঁছানোর জন্যে অপেক্ষা করছেন। বিমানের গতি শূন্যে নেমে আসার পর সব ঠিকঠাক হলে বিমানাবালা যাত্রীদের নামার ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন। কিন্তু এমনই সময় দেখা গেলো, বিপুল সংখ্যক যাত্রী কোনোপ্রকার ঘোষণার আগেই আসন থেকে উঠে গিয়ে করিডোরের দিকে ভিড় করে ঠেলাঠেলি আরম্ভ করে দিয়েছেন। বিমান থেকে নেমে যাওয়ার জন্য। শিষ্টাচারের কথা না হয় বাদই দেয়া হোক, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু ব্যাপার থাকে, যেগুলোও তোয়াক্কা করার কোন মানসিকতাও কেউ দেখাতে চান না।

যাত্রীদের অনেকেই এ জাতীয় আচরণ দেখিয়ে থাকেন। ফলে বিশ্বের অনেক বিমানবন্দরেই এ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। 

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বিমানের ভেতর মারামারি করার মতো ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। তাই বিমান ভ্রমণের আগে বিমানের ভেতর কীভাবে আচরণ করতে হয়, কী করা যাবে আর কী কী করা যাবে না, তার বিস্তারিত এবং ভালো ধারণা থাকা জরুরি।

flyঅন্য যানবাহনের থেকে আলাদা বিমান ভ্রমণ

বিমান সম্পূর্ণ একটি আলাদা ধরনের যান। অন্য যেকোনো যানবাহন পরিষেবার থেকে এটি সব দিক দিয়ে আলাদা-নিরাপত্তা, সংবেদনশীলতা এবং অবশ্যই টিকিটের দামের দিক থেকে তো বটেই। বিমানের ভেতর বাস-ট্রেনের মতো আচরণ করা থেকেই মূলত ঝামেলা শুরু হয়। কোনো ব্যাপারে না জেনে না বুঝে কিছু বলেও অনেকে হাসির পাত্র হন, যেমন কেবিন ক্রুকে ডেকে বললেন ‘পাইলট এত জোরে চালাচ্ছে কেন, আস্তে চালাতে বলেন’, ‘পাইলট এত উপর দিয়ে কেন যাচ্ছে’, “জানালা কি খোলা যাবে?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আইনস্টাইন বোধহয় এ কারণেই বলেছিলেন যে মানুষের আহাম্মকির ক্ষমতা অসীম!

fly

নিশ্চিন্ত থাকুন, শিষ্টাচার হোন

শুরুতেই একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে নিন, আর তা হলো, যেকোনো এয়ারলাইন্স আপনার নিরাপত্তা এবং আরাম আয়েশের জন্যে ভালো মানের ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখে। বিমান চলাচল ও পরিষেবা আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ফলে সেবার ক্ষেত্রে কেউ পাবে কেউ বাদ পড়বে, এমনটা হওয়ার আশংক খুবই কম। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বিমান থেকে নামার পরে বাসে করে টার্মিনালে যাত্রীদের নেওয়া হয়, এসময় অনেক যাত্রীই হুড়োহুড়ি করে বাসে ওঠার চেষ্টা করে থাকেন। এটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়, শেষপর্যন্ত যদি মাত্র একজন যাত্রীও অবশিষ্ট থাকে, সেই একজনের জন্যে হলেও আবার গাড়ি পাঠানো হবে। কাউকে ফেলে রেখে যাওয়ার কিছু নেই, তাই অনর্থক তাড়াহুড়ো করে ‘লোকাল বাস’ বানিয়ে ফেলবেন না।

flyতাই বিমান ভ্রমণে আপনার আরো সংবেদনশীলতা ও শিষ্টাচার নিয়ে চলা প্রয়োজন। এখন চলুন আলোচনা করা যায় ভাল ভাবে বিমান ভ্রমণের কিছু ব্যাপার নিয়ে, যাতে আপনার নিজের ভ্রমণ আরামদায়ক হবে, পাশাপাশি আপনার সহযাত্রীও আপনার সম্পর্কে সম্মানজনক ধারণা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।

নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করুন

সঠিক শিষ্টাচার পালনের বিষয়টি বিমানে ওঠার আগেই শুরু হয়। চেকিং লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার সময়েই কিছু কাজ গুছিয়ে রাখুন, যেমন হাতের ঘড়ি খুলে ফেলুন, মোবাইল ম্যানিব্যাগ পকেট থেকে বের করে নিন, বেল্ট বা ধাতব কিছু থাকলে খুলে হাতে নিন। এতে আপনি স্ক্যানারে পৌঁছালে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হবে লাইনটিও দ্রুত আগাবে। সর্বোপরি নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আচরণ করুন, তারা আপনাকে চেক করছে বলে শত্রুভাবাপন্ন হিসেবে দেখার কিছু নেই। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যেই তারা কাজ করছেন।

fly

নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা মানুন

বিমান টেকঅফ করার আগে বিমানবালা কিছু নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কেবল বিমানে উঠেই সবাই ফেসবুকে চেকইন বা সেলফি তুলতেই ব্যস্ত থাকেন। বিপদের সময় এসব নিরাপত্তা নির্দেশনাই আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে। তাই নিরাপত্তা নির্দেশনাগুলো মন দিয়ে শুনুন।

নিজের জায়গায় ব্যাগ রাখুন

আপনার বড়সড় ব্যাগগুলো বিমানের আলাদা স্টোরে রাখা হলেও অনেকে এক বা একাধিক ‘হ্যান্ডব্যাগ’ বহন করে থাকেন। একটি হ্যান্ডব্যাগ হলে সমস্যা নেই, কিন্তু দুইটি হলে একটি ব্যাগ সিটের উপরকার তাকে আরেকটি নিজের পায়ের কাছে রাখুন। কেননা দুইটি ব্যাগই উপরে রাখতে গেলে অন্য ব্যক্তি জায়গা না-ও পেতে পারেন। আর ব্যাগটি তাকে আনুভূমিকভাবে না রেখে খাড়াভাবে রাখুন, যাতে অন্যের ব্যাগ রাখার জায়গায় আপনার মালামাল চলে না আসে।

flyইলেক্ট্রনিক্স ব্যবহারে বিধি-নিষেধ মেনে চলুন

ল্যান্ডিং এবং টেকঅফের সময় ইলেক্ট্রনিক পণ্য ব্যবহারে বিধি-নিষেধ থাকে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। কেবিন ক্রুদের কাছ থেকে ফোন বন্ধ বা ‘এয়ারপ্লেন মোড’ এ নেয়ার নির্দেশ পেলে তাৎক্ষণিক সেটা করুন। মনে রাখবেন এই নিয়ম বিমানবালারা তৈরি করেনি, নিয়মটি এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে।

ফোনে ফ্লাইট মোড চালু করুন

বিশেষ করে বিমানে সিটে বসে টেকঅফের সময় আত্মীয়কে ফোন দিয়ে ‘এই মাত্র বিমান টেকঅফ করলো’ এই কথা জানানোর আদৌ দরকার আছে কিনা, ভেবে দেখুন, বিদায় তো আপনি একবার নিয়েই এসেছেন সবার কাছ থেকে। টেকঅফের পরে আপনি আপনার ল্যাপটপ বা ট্যাব নিয়ে কাজ করতে পারবেন। আজকাল অনেক বিমানে যাত্রীদেরকে ওয়াইফাই ও ফোন করার সুযোগ দেয়। তাই ধৈর্য ধরে টেকঅফ আর ল্যান্ডিংয়ের সময়টা বাদ দিয়ে সঠিক সময়ের জন্যে অপেক্ষা করুন।

flyসিট বদল করার ব্যাপারে সতর্ক হোন

এয়ারলাইন্সগুলো মাঝেমাঝে কিছু সিট ব্লক করে রাখে বা বাড়তি ফি আরোপ করে রাখে। এর ফলে একই পরিবারের সদস্যদের এক সঙ্গে সিট পেতে কঠিন হয়ে যায়, একেকজনের একেক জায়গায় সিট পড়ে। আপনি যদি একা ভ্রমণ করেন সেক্ষেত্রে এমন কোন পরিবার যদি আপনাকে সিট অদল বদলের অনুরোধ জানায়, তবে আপনার সমস্যা না হলে সে অনুরোধ চাইলে রক্ষা করতে পারেন। অবশ্যই এতে কেউই আপনাকে জোর জবরদস্তি করতে পারবে না, তবে এ জাতীয় অনুরোধ রক্ষা করার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে সবাই উপকৃত হতে পারবে।

সিট পরিবর্তন করার পর বিমানবালাকে অবহিত করুন

বোর্ডিংয়ের সময় না করে বিমান যখন স্বাভাবিক উচ্চতায় পৌঁছাবে তখন অদল বদল করুন এবং আপনি যে অনুরোধে এবং স্বেচ্ছায় সিট পরিবর্তন করছেন, সেটা কর্তব্যরত বিমানবালাকে অবহিত করুন। কারণ আপনি অন্য নম্বরের সিটে বসছেন সেটা কর্তৃপক্ষের জানা থাকা জরুরি, যেকোনো ঝামেলা এড়ানোর জন্যে। আপনার সিট নম্বরই কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার পরিচয়ের সূত্র।

flyসিট হেলানোর আদবকেতা

সিট হেলানো কিংবা না হেলানো, অধিকারের দিক থেকে এটা এখনো পর্যন্ত বেশ বিতর্কিত বিষয়, আপনার যেমন হেলানোর অধিকার আছে তেমনি পেছনের জনের অসুবিধা হলে তারও অধিকার আছে আপত্তি জানানোর। তবে জেনে রাখা উচিত, এ জাতীয় সমস্যা মূলত সারাবিশ্বের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলোতে হয়ে থাকে, আন্তর্জাতিক রুটের বিমানগুলোর সিট ডিজাইন পর্যাপ্ত জায়গা রেখেই এমনভাবে করা থাকে যাতে কারোরই সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত ‘বাজেট এয়ারলাইন্স’ বা ‘ডমেস্টিক ফ্লাইটে’ এ জাতীয় সমস্যার কথা শোনা যায়।

সহযাত্রীর সুবিধার দিকেও নজর দিন

এটা নিয়ে অধিকার ফলিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই, এখানে অবশ্যই পারস্পরিক সমঝোতায় আপনাকে নিজের সুবিধা করে নিতে হবে। সিট হেলানোর আগে বিনয়ের সঙ্গে পেছনের যাত্রীকে অবহিত করুন, সব থেকে ভালো হয় নিজে কিছু না বলে বিমানবালাকে অবহিত করা। এতে আপনার পেছনের সিট সংলগ্ন ফোল্ডিং টেবিলে পানির গ্লাস বা অন্য কিছু থাকলে যাত্রী সেটা সরিয়ে নিতে পারবেন এবং আপনার ভদ্রতার কারণে অন্য যাত্রীও ব্যাপারটা মেনে নেবে বলে আশা করা যায়। আপনার পেছনের যাত্রীও যাতে নড়াচড়ার পর্যাপ্ত জায়গা পান সেটাও আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

extra

খোশগল্প থেকে বিরত থাকুন

এটা শুধু বিমান নয়, সব যানবাহনেই প্রযোজ্য। যাত্রাপথে, বিশেষ করে দীর্ঘ বিমানযাত্রায়, অনেকে সহযাত্রীর সঙ্গে গল্পগুজব করে সময় কাটাতে চান। কিন্তু সহযাত্রী হয়তো চুপচাপ সময় কাটাতে চান। এক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই জোর করে আলাপ জমাতে চেষ্টা করবেন না, এটা অভদ্রতা। আবার আপনার অবস্থান বিপরীতে হলে, অর্থাৎ কেউ আলাপ জমাতে চাইছে কিন্তু আপনি আগ্রহী নন, এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে বিরক্তির সঙ্গে অবজ্ঞাভরে উপেক্ষা করার চেয়ে বরং বিনয়ের সঙ্গে বুঝিয়ে বলুন আপনার অন্য কাজ আছে বা আগ্রহী নন। এক্ষেত্রে একটা বই খুলে বসতে পারেন বা কানে হেডফোন গুঁজে নিজেকে সরিয়ে নিন।

এজেড