images

ককপিট

মাঝ আকাশে যাত্রীরা কেন তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করেন?

এভিয়েশন ডেস্ক

৩০ মে ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম

যারা নিয়মিত আকাশ পথে ভ্রমণ করেন তারা জানেন নিশ্চয়ই, মাঝ আকাশে আচমকা আবহাওয়ার মতিগতি বদলে গেলে, দুর্যোগ শুরু হয়ে গেলে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভূত হয় বিমানে। মনে হয় যেন পুরো বিমানটাই দুলে উঠল। ঝড়ো হাওয়ার গতি বাড়লে এক ধাক্কায় বিমান কয়েক হাজার ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে আসতে পারে। তখন ঝাঁকুনি আরও প্রবল হয়। পাইলট ঘোষণা করেন, বিমান ‘এয়ার টার্বুল্যান্স’-এ পড়েছে।

প্রচণ্ড ঝড় বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে পড়লে বিমান অনেক সময়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সাধারণত দেখা যায়, ঝড়ের সময়ে দুই বিপরীতমুখী হাওয়ার গতির মাঝে যদি বিমান চলে আসে, তা হলে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয় বিমানে। কিছু সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন বিমানচালক। বিমান তখন এক ধাক্কায় বেশ কিছুটা নিচে নেমে আসে। ঝড়ো হাওয়ার গতি যদি বেশি হয়, তা হলে ঝাঁকুনিও আরও তীব্র হয়। তখন বলা হয়, বিমান এয়ার টার্বুল্যান্সে পড়েছে।

plane_3

সাধারণত দেখা যায়, তুমুল ঝড়বৃষ্টি বা বজ্রপাতের সময়ে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। হাওয়ার চাপ খুব বেশি থাকলেও অনেক সময়ে বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। দুই বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ কখন একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করবে, তার আভাস আগে থেকে পাওয়া যায় না। ভুলবশত এই দুর্যোগের মধ্যে যদি বিমান চলে আসে, তখনই বিপদ ঘটে যায়।

আমরা জানি, ঝড়ের সময়ে গরম হাওয়া পাক দিয়ে ওপরে উঠতে থাকে, সেই শূন্যস্থান পূরণ করে ঠান্ডা হাওয়া। এই দুই হাওয়ার গতি ও অভিমুখ ভিন্ন। অনেক সময়েই দেখা যায়, বিপরীতমুখী এই দুই বায়ুপ্রবাহ এলোমেলো ভাবে বইছে। ফলে সেই জায়গায় হাওয়ার ঘূর্ণি তৈরি হয়। এটাই এয়ার টার্বুল্যান্সের কারণ। ইদানীংকালে বজ্রপাতের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। জলবায়ু বদলের কারণে আবহাওয়াও খামখেয়ালি। তাই বিমানে ঝাঁকুনির ঘটনা বেড়ে চলেছে।

এয়ার টার্বুল্যান্স চার রকমের হয়— হাল্কা, মাঝারি, তীব্র এবং অতি তীব্র।

ঝাঁকুনি যদি হাল্কা বা মাঝারি হয় এবং কয়েক সেকেন্ডের জন্য হয়, তা হলে তেমন কোনও সমস্যা হয় না। সিটবেল্ট বাঁধা থাকলেও ঝাঁকুনি অনুভব করতে পারেন যাত্রী। কিন্তু সিটবেল্ট পরা না থাকলে সিট থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত লাগতে পারে।

plane

কিন্তু ঝাঁকুনি যদি তীব্র বা অতি তীব্র হয়, তখনই নানা বিপদ ঘটতে পারে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েক হাজার ফুট নেমে আসতে পারে বিমান। তখন প্রচণ্ড ধাক্কায় আঘাত লাগতে পারে যাত্রীদের, মাথা ফেটে যেতে পারে, সিটবেল্ট খুলে গিয়ে বা ছিঁড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙতে পারে। এমনকি, বিমানের তীব্র ঝাঁকুনির কারণে যাত্রী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

কোনও যাত্রীর হৃদ্‌রোগ থাকে, তা হলে তার জন্য তীব্র ঝাঁকুনি প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন: বিমানে বজ্রপাত হলে যেভাবে নিরাপদ থাকেন যাত্রীরা

অনেক সময়েই দেখা যায়, বিমানে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি শুরু হলে ভয়ে ও আতঙ্কে ব্ল্যাকআউট হয়ে গিয়েছেন যাত্রী অথবা বমি করতে শুরু করেছেন অনেকে। আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় ‘প্যানিক অ্যাটাক’ও হতে পারে।

plane-inner

কোন দশটি আকাশ পথে সবচেয়ে বেশি ঝাঁকুনির মুখে পড়েছে বিমান?

ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফিয়ারিক রিসার্চের রিপোর্ট বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিমানে ঝাঁকুনির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে আমেরিকায়। যাত্রীদের আহত হওয়ার খবর এলেও বিমানের তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমেরিকা ও ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিসের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী বিমান চলাচলের এমন দশটি পথ আছে, যেখানে ঝাঁকুনির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। আচমকা কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই এয়ার টার্বুল্যান্সের মুখে পড়ে যায় বিমান।

কী কী সেই পথ—

১. সান্তিয়াগো থেকে সান্তাক্রুজ

২. আলমাটি থেকে বিশকেক

৩. ল্যানঝো থেকে চেংড়ু

৪. সেন্ট্রায়ার থেকে সেন্ডাই

৫. মিলান থেকে জেনেভা

৬. ল্যানঝো থেকে জিয়াংইয়াং

৭. ওসাকা থেকে সেন্টাই

৮. জিয়াংইয়াং থেকে চেংড়ু

৯. জিয়াংইয়াং থেকে চংকিং

১০. মিলান থেকে জুরিখ

ব্রিটেনের রিডিং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, ১৯৭৯ সালের পর থেকে ২০২০ সাল অবধি বিমানে ঝাঁকুনির ঘটনা প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল জলবায়ুর বদল। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রপৃষ্টের উষ্ণতাও ক্রমবর্ধমান। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে সাগর-মহাসাগরে। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতিতেও অনেক বদল আসছে। ফলে মাঝেমধ্যেই এমন ঘটনা ঘটছে।

polne

যাত্রীদের কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানযাত্রার পুরোটাই সিটবেল্ট বেঁধে রাখলে ভালো হয়। বিশেষ করে পাইলট যদি ঘোষণা করে যে বিমান দুর্যোগে পড়তে পারে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গেই সিটবেল্ট বেঁধে নেওয়া ভালো।

মন শান্ত রাখা জরুরি। বেশি চিন্তা বা আতঙ্কে শরীর খারাপ হতে পারে। অনেক সময়ে দেখা যায়, ঝাঁকুনি হাল্কা হলেও বেশি দুশ্চিন্তার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে যাত্রী।

এজেড