images

ককপিট

জ্বালানি ছাড়াই আকাশে উড়ছিল যে বিমান, অতঃপর...

এভিয়েশন ডেস্ক

০৪ মে ২০২২, ১০:২০ এএম

১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই হঠাৎই মাটি থেকে ৪১ হাজার ফুট উপরে জ্বালানি ফুরিয়ে যায় এয়ার কানাডা ১৪৩ বিমানের। কী হয়েছিল তারপর? কী ভাবেই বা যাত্রীদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বিমানচালকেরা?

এয়ার কানাডা১৪৩ বিমানটি পরিচিত ছিল ‘গিমলি গ্লাইডার’ নামে। ১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই ওই বিমানটি ওন্টারিওর রেড লেকের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। বিমান চালাচ্ছিলেন ৪৮ বছর বয়সি ক্যাপ্টেন রবার্ট পিয়ারসন। সহকারী চালক ছিলেন ৩৬ বছর বয়সি মরিস কুইন্টাল। 

ক্যাপ্টেন পিয়ারসন এক অত্যন্ত অভিজ্ঞ বিমানচালক। ১৫ হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল তার। কুইন্টালও অভিজ্ঞ বিমানচালক। তারও ৭ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল।

বিমান উড়ান শুরুর পর হঠাৎ ককপিটে বেজে ওঠে সতর্কীকরণ বিপদসঙ্কেত। এর অর্থ খুব শিগগিরই বিমানের বাম দিকের ইঞ্জিনের জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে। জ্বালানি পাম্পে কোনও ত্রুটি রয়েছে মনে করে পিয়ারসন ওই পাম্পটি বন্ধ করে দেন।

air candadaজ্বালানি পাম্পগুলো কাজ না করলেও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে বিমানের দুইটি ইঞ্জিনেই জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত থাকে। তা ভেবেই জ্বালানি পাম্প বন্ধ করে দিয়েছিলেন পিয়ারসন।

বিমানের প্রধান যন্ত্রাংশে ত্রুটির কারণে বিমানে জ্বালানির পরিমাণ কত ছিল, তা জানার কোনও অবকাশ ছিল না। বিমান চলাকালীন কম্পিউটার জানান দেয়, উড়ানের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে কিনা। ত্রুটি দেখা যায় সেই কম্পিউটারেই। বিমানটি ওড়ার আগেই সেই ত্রুটির কথা জানতেন বিমানচালকেরা। নির্দিষ্ট গন্তব্যে অবতরণের পর ওই ত্রুটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও ভেবেছিলেন তারা

আসলে জ্বালানির পরিমাণ কিলোগ্রামের পরিবর্তে পাউন্ডে গণনা করা হয়েছিল। বিমানবন্দরের কর্মীদের হিসাবের ভুলে বিমানে অর্ধেকেরও কম জ্বালানি ভরা হয়েছিল। 

বাম দিকের ইঞ্জিনে জ্বালানির ঘাটতির কারণে বিপদসঙ্কেত বেজে ওঠার কিছু পরেই বিপদসঙ্কেত বাজতে থাকে ডান দিকের ইঞ্জিনেও। 

তার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বাম দিকের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। বিমানচালকেরা সিদ্ধান্ত নেন, তারা একটি ইঞ্জিনের মাধ্যমেই বিমান অবতরণ করাবেন। কানাডার উইনিপেগ শহরের দিকে বিমানের মুখ ঘুরিয়ে নেন তারা।

উইনিপেগ বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন বিমানচালকেরা।

বাম দিকের ইঞ্জিনটি আবারও চালু করার চেষ্টা করার সময় বন্ধ হয়ে পড়ে ডান দিকের ইঞ্জিনটিও। ককপিটের বেশিরভাগ যন্ত্রও বিকল হয়ে পড়ে।  

তবে এর পরেও বিমানে কয়েকটি ব্যাটারিচালিত যন্ত্র কাজ করার কারণে অব্যর্থ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার ক্ষীণ আশা দেখতে পান বিমানচালকেরা।

কোনও রকমে বিমান খানিক নিয়ন্ত্রণে আনার পর বিমানচালক পিয়ারসন এবং কুইন্টাল বিমানটিকে উইনিপেগ বিমানবন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

air canada

কিন্তু রানওয়ের কাছাকাছি এসে একেবারে বিকল হয়ে পড়ে বিমানটি। দ্রুত গতিতে নামতে থাকে নিচের দিকে। 

গতি কমানোর জন্য কৌশল প্রয়োগ করা সম্ভব নয় বলে বুঝতে পারেন পিয়ারসন এবং কুইন্টাল।

এর পরই দ্রুত গতিতে রানওয়েতে কার্যত আছড়ে পড়ে বিমানের চাকা। বেশ কিছুক্ষণ ঘষতে ঘষতে রানওয়ে ধরে এগোতে থাকে বিমানটি। তার পর বেশ খানিটা দূরে গিয়ে থেমে যায়। প্রচন্ড গতিতে রানওয়েতে আছড়ে পড়ার অভিঘাতে ভেঙে যায় অবতরণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামনের চাকা।

বিমানে মোট ৬১ জন যাত্রী ছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওই ঘটনায় দুইজন যাত্রী ছাড়া অন্য কোনও যাত্রী ততটা আহত হননি। দুর্ঘটনায় কেউ নিহতও হননি।

এজেড