এভিয়েশন ডেস্ক
১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:২৭ পিএম
আপনি জানলে অবাক হবেন আকাশে উড়ন্ত বিমানেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। বিমানে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয় বিশেষ এক কৌশলে। অনেকের জরুরি কাজে ভূমিতে থাকা অফিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। আবার লম্বা বিমান যাত্রায় ইন্টারনেটে অভ্যস্তদের কাছে ইন্টারনেট ছাড়া সময় কাটানো বিরক্তিকর লাগতে পারে। তাই যাত্রীদের কিছু কিছু বিমান কোম্পানি ইন্টারনেট পরিষেবা দেয়।
আরও পড়ুন: বিমানে কি টাকা দিয়ে খাবার কিনতে হয়?
বিমানে কি ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে কোন এয়ারলাইন্সে যাচ্ছেন, যাত্রার রুট অর্থাৎ কোথা থেকে যাচ্ছেন এবং আপনাকে বহনকারী বিমানটি কোন মডেলের। সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায় হ্যা, এখন অনেক এয়ারলাইন্সের বিমানে ইন্টারনেট চালাতে পারবেন আপনি, ইন ফ্লাইট ওয়াইফাই এর সাহায্যে। যাত্রীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে এখন অনেক এয়ারলাইন্সই এই সুবিধা দিচ্ছে। ধীরে ধীরে ওয়াইফাই সেবা প্রদানকারী এয়ারলাইন্সের সংখ্যা আরো বাড়ছে।
আপনাকে এজন্য এয়ারলাইন্সে বুকিং করতে হবে। কিছু অপারেটর সিঙ্গেল ইউজ পাস বা একবার ব্যবহারের জন্য ওয়াইফাই এর পাস দেয়। আবার কিছু কোম্পানির কাছ থেকে প্যাকেজও নিতে পারবেন। তবে বেশি ব্যান্ডউইথের জন্য বেশি টাকা গুণতে হবে। তবে যদি বিমানে অবস্থানের সময়ে অফিস বা ব্যবসার কাজের মধ্যে থাকতে চান, এতটুকু খরচ করতেই পারেন। নতুবা আপনাকে বই পড়ে, ঘুমিয়ে, নয়ত জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সময় কাটাতে হবে।
বিমানে ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে?
বিমানে ওয়াইফাই চালানোর জন্য দুই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম আছে। একটা হচ্ছে গ্রাউন্ড বেইজড, অর্থাৎ ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম বা এয়ার টু গ্রাউন্ড (এটিজি)। অন্যটি স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম।
মাটি থেকে আকাশে যে ওয়াইফাই কাজ করে তার ধরন অনেকটা মোবাইল ফোন সংযোগের মত। এখানে বিমানের মূল কাঠামোর নিচে থাকা একটা অ্যান্টেনা মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সংযোগ রক্ষা করে চলে। বিমান যখন চলে, তখন এই অ্যান্টেনা একটার পর একটা নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারের ট্রান্সমিটারের সঙ্গে সংযুক্ত হতে থাকে।
মোবাইল ট্রান্সমিটারের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ থাকার কারণে পুরো বিমানই ওয়াইফাই হটস্পট হয়ে ওঠে। তখন যাত্রীরা স্বাভাবিক ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের সব কাজ করতে পারে—যেমন ই-মেইল পাঠানো, ফোন কল করা এবং সিনেমা স্ট্রিম করা। তবে বিমান যখন বিশাল জলরাশির ওপর দিয়ে যায় তখন এই ব্যবস্থা কাজ করে না। যেমনটা হয় ট্রান্সআটলান্টিক পথে যাওয়ার সময়। তখন তখন বিমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হয়।

পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান অসংখ্য স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ আছে। এসব স্যাটেলাইটের সাহায্য নিয়েই স্যাটেলাইট ওয়াইফাই কাজ করে। এই ক্ষেত্রে বিমানের ওপরে থাকা নির্দিষ্ট অ্যান্টেনা দিয়ে স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিমান। বিমান আকাশে ওড়ার সময় সবচেয়ে কাছে যে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট খুঁজে পায়, সেটার সঙ্গে বিমানের ওপরে থাকার অ্যান্টেনার যোগাযোগ ঘটে।
স্যাটেলাইট ওয়াইফাই দুই ধরনের ব্যান্ডউইথ নিয়ে কাজ করে। ন্যারোব্যান্ড এবং ব্রডব্যান্ড। দুই ধরনের ব্যান্ডউইথেই যাত্রীরা পূর্ণ ইন্টারনেট সেবা পায়, তবে মুভি স্ট্রিম করার জন্য ন্যারোব্যান্ড কম উপযোগী।
কীভাবে বিমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন?
বিমানে ওয়া-ফাই সুবিধা থাকলে সচরাচর এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ টিকেট কেনার সময়, বিমান ওঠার সময় ও বিমান চলাকালে যাত্রীদের এই সুবিধার কথা জানিয়ে দেয়। এই সুবিধা ব্যবহার করার জন্য মোবাইল বা ডিভাইসে এয়ারপ্লেন মোড চালু করতে হবে। এরপর ওয়াইফাই সেটিংসে গিয়ে ইন ফ্লাইট ওয়াইফাই খুঁজতে হবে।

তবে বিমানযাত্রায় সব সময় ওয়াইফাই সংযোগ যথেষ্ট শক্তিশালী নাও থাকতে পারে। তখন ইন্টারনেটে ঢোকা বা স্ট্রিম করা কঠিন হতে পারে। এছাড়া কিছু বিমানে ওয়াইফাই এর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টেনা নাও থাকতে পারে।
ভবিষ্যতে বিমানের ওয়াইফাই সংযোগ সুবিধা আরও উন্নত হতে যাচ্ছে। এর প্রভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের ফ্লাইটে আরো বেশি সংখ্যক এয়ারলাইন্স ওয়াই-ফাই চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
বিমানগুলোর কি নিজস্ব ওয়াইফাই আছে?
কিছু এয়ারলাইনস নিজস্ব ব্র্যান্ডের ওয়াইফাই এর কথা বললেও, আসলে বিষয়টা ঠিক তা নয়। কারণ বিমান চলাকালে ওয়াইফাইয়ের জন্য মোবাইল টাওয়ার বা স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হয়। যে উৎসটি কাছে থাকে বিমান সেখান থেকে ইন্টারনেট সুবিধা নেয়। বিমান এখানে কেবল হটস্পট হিসাবেই কাজ করে থাকে।
এজেড