images

অটোমোবাইল

সবচেয়ে কম দামের ইলেকট্রিক গাড়ি আনল মারুতি সুজুকি

অটোমোবাইল ডেস্ক

০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ এএম

ভারতের দ্রুত বাড়তে থাকা ইলেকট্রিক গাড়ির বাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে মারুতি সুজুকি। বহু প্রতীক্ষার পর তারা তাদের প্রথম সাধারণ গ্রাহকদের জন্য তৈরি ব্যাটারি-চালিত এসইউভি মারুতি সুজুকি ই-ভিটারাকে আবারও প্রদর্শন করেছে। কোম্পানি জানিয়েছে, এই ইলেকট্রিক এসইউভিটি ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চ করা হবে।

নতুন প্ল্যাটফর্মে তৈরি ই-ভিটারা

ই-ভিটারা তৈরি হয়েছে নতুন হিয়ারটেক-ই প্ল্যাটফর্মে, যা বিশেষভাবে ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ফ্ল্যাট ফ্লোর কাঠামো, ছোট ওভারহ্যাং এবং শক্তিশালী উচ্চ-ভোল্টেজ নিরাপত্তা কাঠামো গাড়িটিকে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করেছে। ডিজাইন কমপ্যাক্ট হলেও গাড়ির ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে, যাতে এটি সহজে কমপ্যাক্ট ইলেকট্রিক এসইউভি বাজারে অবস্থান নিতে পারে। মডেলটির জন্য মোট দশটি রঙের অপশন থাকবে, যার মধ্যে চারটি দ্বৈত-রঙের থিম।

ব্যাটারি, রেঞ্জ ও পারফরম্যান্স

গাড়িটিতে দুটি ব্যাটারি প্যাকের বিকল্প থাকবে। প্রথমটি ৪৯ কিলোওয়াট-ঘণ্টা ক্ষমতার এলএফপি ব্যাটারি, যা শুধুমাত্র দুই-চাকা চালিত ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাবে। এই মডেল ১৪২ বিএইচপি শক্তি ও ১৮৯ এনএম টর্ক উৎপন্ন করবে এবং চালানো যাবে সর্বোচ্চ ৩৪৪ কিলোমিটার পর্যন্ত (ডব্লিউএলটিপি রেঞ্জ)।

বড় ব্যাটারি প্যাকটি ৬১ কিলোওয়াট-ঘণ্টার, যা দুই-চাকা ও চার-চাকা— উভয় ধরনের ভ্যারিয়েন্টেই পাওয়া যাবে। দুই-চাকা চালিত মডেলটি ১৭২ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন করবে এবং এক চার্জে সর্বোচ্চ ৫৪৩ কিলোমিটার (এআরএআই রেঞ্জ) চলতে পারবে। চার-চাকা ভ্যারিয়েন্টে টর্ক বাড়িয়ে ৩০০ এনএম করা হয়েছে, যা অফ-রোড সক্ষমতাকে আরও উন্নত করবে।

৬১ কিলোওয়াট-ঘণ্টা ব্যাটারি ও চার-চাকা চালিত মডেলেই প্রথম দেখা মিলবে সুজুকির নতুন অলগ্রিপ-ই ইলেকট্রিক ফোর হুইল ড্রাইভ সিস্টেমের। এতে থাকবে স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রিত সামনে ও পেছনের ই-অ্যাক্সেল মোটর এবং ট্রেইল মোড, যা টর্ক বণ্টন ও ব্রেকিং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জিং রাস্তা সামলাতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন: স্পোর্টস সুবিধার এসব গাড়িতে পাবেন লিটারে ৩৫ কিমি মাইলেজ

ইন্টেরিয়র ও প্রযুক্তি সুবিধা

গাড়ির ভেতরে রয়েছে আধুনিক ও পরিপাটি ড্যাশবোর্ড ডিজাইন। থাকছে দ্বৈত-স্ক্রিন ব্যবস্থা— ১০.১ ইঞ্চি ইনফোটেইনমেন্ট ইউনিট এবং ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল। অ্যান্ড্রয়েড অটো ও অ্যাপেল কারপ্লে সুবিধা থাকছে।

ড্রাইভারের আসন হবে দশ-স্তরের বিদ্যুৎচালিত অ্যাডজাস্টেবল। সঙ্গে দুই-স্পোক স্টিয়ারিং হুইল, প্যানোরামিক সানরুফ, ঠান্ডা বাতাস চলাচলকারী সামনের সিট, তারবিহীন চার্জার, স্বয়ংক্রিয় জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বৈদ্যুতিক পার্কিং ব্রেক ও অটো-হোল্ড ফিচার যোগ করা হয়েছে।

ই-ভিটারা হবে মারুতির প্রথম মডেল যা লেভেল-২ ড্রাইভার সহায়ক প্রযুক্তি দেবে। এতে থাকবে লেন ধরে রাখার সহায়তা, স্বয়ংক্রিয় গতি নিয়ন্ত্রণ, জরুরি ব্রেকিংসহ আরও বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি। স্ট্যান্ডার্ড নিরাপত্তা সুবিধায় রয়েছে সাতটি এয়ারব্যাগ, চারদিকের ক্যামেরা, ইএসসি, এবিএস ও ইবিডি, এবং সামনে-পেছনে পার্কিং সেন্সর। ভারতীয় নিরাপত্তা রেটিং পরীক্ষায় গাড়িটি পেয়েছে পাঁচ-তারকা রেটিং।

লঞ্চের সময়

মারুতি জানিয়েছে, ই-ভিটারার লঞ্চ হবে জানুয়ারি ২০২৬-এ। দাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তবে বিশ্লেষকদের মতে এটি কমপ্যাক্ট ইলেকট্রিক এসইউভি বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পাওয়া যাবে। অগ্রিম বুকিং দ্রুতই শুরু হবে।

ই-ভিটারা শুধু একটি নতুন ইলেকট্রিক গাড়ি নয়— এটি মারুতির বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নতুন সূচনা। দীর্ঘ রেঞ্জ, শক্তিশালী পারফরম্যান্স, নিরাপদ কাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় এটিকে ভারতের ইভি বাজারে এক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এগিয়ে দেবে। দাম ও পরিষেবা নেটওয়ার্ক ঠিক থাকলে ই-ভিটারা হবে সাধারণ গ্রাহকের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইলেকট্রিক এসইউভিগুলোর একটি।

এজেড