আসাদুজ্জামান লিমন
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৩৩ এএম
দুই দশক আগে (২০০১ সালে) ভারতে জন্ম নিয়েছিল স্পোর্টস বাইক বাজাজ পালসার। জন্মলগ্ন থেকে এই পর্যন্ত একইভাবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে পালসার। পালসার কমিউটার বাইক হলেও এর ইঞ্জিন শক্তিশালী। যদিও বাজাজ দাবি করছে পালসার ভারতের প্রথম স্পোর্টস বাইক। মূলত পালসারের ইঞ্জিনে স্পোর্টস ও কমিউটারের মিশেল রয়েছে। বাইকপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন এত বছর পরেও কেন পালসার একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে ঢাকা মেইল।
দেশের তরুণ অটোমোবাইল ব্লগার আলাউদ্দিন আল আজাদ আলিফের ভাষ্য, ‘পালসারের জনপ্রিয়তার মূল কারণ এর বিল্ড কোয়ালিটি। মডেলটিকে শক্তপোক্ত ডিজাইন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এর ইঞ্জিন যথেষ্ট শক্তিশালী ও টেকসই। এর রিসেল ভ্যালুর যথেষ্ট ভালো’।
আলিফ আরও বলেন, পালসার সিরিজের বাইকের ডিজাইনে তেমন পরির্বতন আসেনি। এ নিয়ে পালসারপ্রেমীদের মনে খেঁদ রয়েছে যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও পালসারের জনপ্রিয়তা এক বিন্দুও কমেনি। কেননা, পালসারের থ্রটল রেসপন্স বেশ ভালো। ব্যালেন্সও অসাধারণ।
একই কথা বললেন মমিন মোটরসের স্বত্বাধিকারী ও মোটর মেকানিক মো. মমিন। তিনি বলেন, পালসার তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর মেইটেনেন্স খরচ তুলনামূলক কম। বাংলাদেশে প্রায় সবখানেই এর পার্টস পাওয়া যায়। দামও তুলনামূলক কম।
বাজাজ পালসার সিরিজের যতগুলো বাইক এই পর্যন্ত এসেছে সবগুলো হইহই করে বিক্রি হয়েছে। এরপরও কয়েকটি মডেল তরুণদের নজর কেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পালসার ১৫০, পালসার ১৩৫, পালসার ১৬০ এনএস, পালসার এন২৫০ এবং এফ২৫০। যদিও শেষ দুইটি মডেল বাংলাদেশে মিলছে না। কেননা, সিসি লিমিটের কারণে বর্ডার পার হতে পারেনি মডেল দুইটি।
বাংলাদেশে বাজাজ পালসারের পরিবেশক উত্তর মোটর্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, বাজাজ পালসারে রয়েছে ডিটিএসআই ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন চালু করার জন্য দেয়া হয়েছে ডুয়েল স্পার্ক। ফলে এক নিমিষেই চালু হয় পালসারের শক্তিশালী ইঞ্জিন। এর টর্ক ও থ্রটল রেন্সপন্স অসাধারণ। মাইলেজও ভালো। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় পালসার সিরিজ। ভবিষ্যতে পালসার সিরিজের ডিজাইনে ব্যাপক পরির্বতন আসবে বলে তিনি জানান।
ভারতে পালসার সিরিজে ২৫০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন মডেলের পালসারে কার্বুরেটরের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে এফআই ইঞ্জিন। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে এবিএস।
অনেকেই মনে করেন সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পালসারের একই ডিজাইন। কিন্তু তারপরও পালসার কেন এত জনপ্রিয়? এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, পালসার এমন এক মোটরসাইকেল যেটাতে সবাইকেই মানায়। ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে সব বয়সীদেরই মানায় পালসারে।
বাজারের অন্যসব বাইকের তুলনায় পালসারের রিসেল ভ্যালু বেশি। কয়েক বছর চালিয়েও ভালো দামে পালসার বিক্রি করা যায়।
পালসারের জনপ্রিয়তার উল্লেখ্যযোগ্য আরেকটি কারণ হচ্ছে পালসারের খুচরা যন্ত্রাংশের দাম খুবই কম। আর সব জায়গায়ই পালসারের যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মডেলের পালসার বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬০ সিসির দুইটি মডেল এবং ১৫০ সিসির তিনটি মডেল রয়েছে। ১৬০ সিসিতে আছে পালসার এনএস ১৬০ এফআইএবিএস। এই মডেলের দাম ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ টাকা। এছাড়াও ১৬০ সিসিতে পাওয়া যাচ্ছে পালসার এনএস ১৬০ টুইন ডিস্ক এবিএস কার্বুরেটর ভার্সন। এর দাম ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা।
১৫০ সিসিতে এগিয়ে আছে পালসার ১৫০ টুইন ডিস্ক ভার্সন। এর দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা। একই মডেলের সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্সনের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯০০ টাকা।
এছাড়াও সাশ্রয়ী দামে বাংলাদেশে পালসারের আরেকটি মডেল পাওয়া যাচ্ছে। ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ টাকা দামের ওই মডেলটি হচ্ছে বাজাজ পালসার ১৫০ নিওন।
বাংলাদেশে পালসারের জনপ্রিয় ভার্সন ১৫০ টুইন ডিস্ক বা টিডি। এই ভার্সনটিতে কিকার নেই। নেই চেইন কভার। মিটার কনসোলেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। মিটারের ব্যাকগ্রাউন্ড কালারে দেয়া হয়েছে ব্লু টোন। ক্লিপ অন হ্যান্ডেলবারেও আনা হয়েছে নতুন ডিজাইন। এর সামনের সাসপেনশন আগের চেয়ে মোটা করা হয়েছে। সিট দেয়া হয়েছে স্প্লিট। গ্রাব রেইলেও আছে স্টাইলের ছোয়া।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের বাজারে আসে ১৫০ সিসির পালসারের টুইন ডিস্ক ভার্সন। পালসার ১৮০ সিসির মডেল থেকে চেসিস এবং ডিজাইন এনেছে ১৫০ টুইন ডিস্কে। সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্সন ও ডাবল ডিস্ক ভার্সনের ব্রেকিং সিস্টেমে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ইউজি ৫ এর সামনে আছে ১৬০ মিলিমিটারের ফ্রন্ট ডিস্ক। পেছনে ১৬০ মিলিমিটারে ডিস্ক ব্রেক। ব্রেকিং সিস্টেমে এগিয়ে আছে ডাবল ডিস্ক ভার্সন।
ডাবল ডিস্ক ভার্সনের পালসার অনেকেটাই মাসকুলার। এর ইঞ্জিনের নিচের অংশে কাউল যুক্ত হয়েছে। যা দেখতে অনেকেই আকর্ষণীয়। বাইকটি ওজন ১৪৪ কেজি।
এজেড/এএ