নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম
আজ পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। পিতা আনসারউদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক।
আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) পল্লীকবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টায় রাজধানীর কমলাপুরে তার বাড়িতে বক্তৃতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কর্তৃক এক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি শাহজাহান আবদালী। আলোচনা সভায় পল্লীকবির কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন দেশের নবীন-প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকসহ শিক্ষাবিদগণ।
শৈশবে ফরিদপুর হিতৈষী স্কুলে জসীমউদ্দীনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। তারপর ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি এমএ পাস করেন।
জসীমউদ্দীনের কর্মজীবন শুরু হয় পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে দীনেশচন্দ্র সেনের আনুকূল্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এ কাজে তিনি নিযুক্ত হন। এমএ পাস করার পর থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ীর গবেষণা সহকারী ছিলেন।
১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করার পর ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে এখান থেকে ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
জসীমউদ্দীনের কবি প্রতিভার প্রকাশ ঘটে ছাত্রজীবনেই। কলেজজীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তার এ কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়।
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তার প্রধান গ্রন্থগুলো হলো: নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রঙিলা নায়ের মাঝি, মাটির কান্না, সুচয়নী, পদ্মা নদীর দেশে, ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে, পদ্মাপার, বেদের মেয়ে, পল্লীবধূ, গ্রামের মায়া, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, জার্মানির শহরে বন্দরে, বাঙালির হাসির গল্প, ডালিম কুমার ইত্যাদি।
তার নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যটি দ্য ফিল্ড অব অ্যামব্রয়ডার্ড কুইল্ট এবং বাঙালির হাসির গল্প গ্রন্থটি ফোক টেলস অব ইস্ট পাকিস্তান নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। বাংলা কবিতার ধারায় জসীম উদ্দীনের স্থানটি বিশিষ্ট। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও লোকজীবন জসীম উদ্দীনের কবিতায় নতুন রূপ লাভ করেছে। তার কবিতায় দেশের মাটির সাক্ষাৎ উপলব্ধি ঘটে। এ জন্য ‘পল্লীকবি’ হিসেবে তার বিশেষ ও স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে।
জসীম উদ্দীন বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ভূষিত হন।
এদিকে ফরিদপুরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ১০টায় কবির বাড়ির আঙ্গিনায় জেলা প্রশাসন ও জসিম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
এর আগে, কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, কবিপুত্র খুরশিদ আনোয়ার প্রমুখ।
এসময় কবিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস চর্চার তাগিদ দেন বক্তারা। শেষে কবির রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
/এফএ