বোরহান উদ্দিন
১৪ মে ২০২৩, ০১:৩৯ পিএম
সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে রূপ। টেকনাফ ও এর আশপাশের এলাকায় তীব্র গতির বাতাস বইছে ও অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। অন্যদিকে তীব্র ঢেউয়ের কারণে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর।
রোববার (১৪ মে) বেলা ১টার দিকে টেকনাফ, শাহ পরীর দ্বীপ এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বাতাসের তীব্র গতির কারণে আশপাশের গাছগাছালি যেন ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সরেজমিনে টেকনাফে এই দৃশ্য দেখা গেছে। যদিও সকাল থেকে কক্সবাজার এলাকায় কিছুটা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। এছাড়াও মেরিনড্রাইভ হয়ে ইনানি বিচে প্রচণ্ড বাতাস থাকলেও খুব বৃষ্টি ছিল না। ১২টার পর থেকে ইনানী বিচ এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সাথে টেকনাফেও বাতাস থাকলেও বৃষ্টি ছিল কম। দুপুর ১টার পর থেকে বৃষ্টির তীব্রতা যেমন বেড়ে যায় সেই সাথে বেড়ে যায় বাতাসের গতিবেগও। এ যেন হঠাৎই অগ্নিমূর্তী রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড় মোখা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশের দোকানগুলো সবই বন্ধ। বন্ধ দোকানের সামনে বসে আছেন অনেকেই। খোলা জায়গায় অনেক স্থানে গরু বাধা থাকলেও কোনো মানুষ দেখা যায়নি। টেকনাফ সড়কের চেকপোস্টগুলো ফাঁকা দেখা গেছে। স্থানীয় পরিবহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, টেকনাফের সেন্টমার্টিনেও বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে, সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে সেন্টমার্টিনের সাধারণ মানুষ। রোববার দুপুর ১টার পর সেন্টমার্টিনে তাণ্ডব শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড়টি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, সময়ের সাথে সাথে বাতাসের তীব্রতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন জোয়ারের সময়। এই মুহূর্তে মানুষ খুবই আতঙ্কিত। তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, সকাল ১১টায় আবহাওয়া অধিদফতরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার পিক আওয়ার হবে দুপুর ১২টা থেকে ২টা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ অংশে আঘাত হবে। এর মধ্যে দুপুর ১২টা নাগাদ এটি সেন্টমার্টিনে আঘাত হানবে।
ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগর, নাফ নদী এবং সংলগ্ন নদীগুলোতে জোয়ার শুরু হয়েছে, এবং বিকাল চারটা নাগাদ জোয়ারের তীব্রতা বাড়বে। এ সময়ে আট থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা বা পানি জমে থাকবে না বলে জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, বিকেল চারটার পর থেকে মোখা দুর্বল হতে শুরু করবে এবং সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমবে।
আজিজুর রহমান আরও বলেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার মূল কেন্দ্রটি টেকনাফের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূর দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ঝুঁকির যে আশঙ্কা করা হয়েছে তা কমে আসছে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় দুর্বল হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এ সময়ে দ্রুত বেগে জলোচ্ছ্বাস প্রবাহিত হবে। তখন ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। যা বর্তমানে (সাড়ে দশটায়) প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
আজিজুর রহমান আরও বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা যদি ৮ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত হয়, তাহলে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা থাকবে। তবে পর্যায়ক্রমে তা কেটে যাবে।
টিএই/এএস