images

কৃষি ও পরিবেশ

‘অভ্যাস বদলাতে পারলে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার কমানো সম্ভব’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৩ মে ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম

পলিথিনসহ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে যেসব সামগ্রি ব্যবহার করা হচ্ছে তার বিকল্প বের করতে সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘আমাদের অভ্যাস বদলাতে পারলে এই ধরণের প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য দেশ পারলে আমরাও চাইলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পারবো।’

মঙ্গলবার (১৩ মে) একটি টেকসই, প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (PLEASE)’ প্রকল্পের জাতীয় জ্ঞান বিনিময় কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন ও সেরা চর্চার প্রসার’ শীর্ষক এই কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউট (IMS), আরণ্যক ফাউন্ডেশন, ও রেড অরেঞ্জ লিমিটেড। এতে অংশ নেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাতের অংশীজনরা। যারা কমিউনিটি-ভিত্তিক, উদ্ভাবনী প্লাস্টিক বর্জ্য সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকেই বলেন আমি শুধু পলিথিন নিয়ে কথা বলি। আসলে সব ধরণের সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আমাদের শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশগত দিক থেকেও অনেক ক্ষতি করছে। ফলে আমাদের এ দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ের কথা যদি চিন্তা করি, তারা কি এভাবে পলিথিন, প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করতেন? এখন তো প্লাস্টিকের বদলে অনেক ধরণের জিনিস তৈরি হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করতে পারি।’

বুড়িগঙ্গার নীচে কয়েক ফুট শুধু প্লাস্টিকের স্তর আছে- এমনটা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকার কয়েকটি খাল উদ্ধার করে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি খাল আছে কেরাণীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল নামে পরিচিত। অনেক টাকায় খাল উদ্ধার করতে হবে দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, আগে খালটি সরেজমিন দেখে পরে ফাইল স্বাক্ষর করবো। গিয়ে দেখলাম খালের অস্তিত্ব নেই। এটাকে প্লাস্টিকের খাল বলা যায়। বুড়িগঙ্গা খননের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে কমপক্ষে পাঁচ ফুট প্লাস্টিকের স্তর। এগুলো তোলার যন্ত্র নেই। বিআইডব্লিউটএ একটি যন্ত্র আনার চেষ্টা করছে। নভেম্বরে হয়তো আসবে। কিন্তু এত প্লাস্টিক উঠিয়ে কোথায় রাখবো?’

জুস খাওয়ায় সাধারণত ব্যবহার হওয়া স্ট্র-এর উৎপাদন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই থেকে আমরা এর উৎপাদন বন্ধে কাজ করতে চাই। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ তৈরি করে সুলভমূল্যে গ্রাহককে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ সুপার শপে গিয়ে অনেকে বেশি দাম দিয়ে একটি ব্যাগ কিনতে চান না।

সরকারি অনেক দফতরে এখন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে আসছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটাও কিন্তু এক ধরণের সফলতা। সরকারি দফতরগুলোর বাইরেও অনেক জায়গায় এসব প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়ে আসছে। সুপার শপগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।’

এদিকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘প্লিজ’ (PLEASE) প্রকল্পটি একটি আঞ্চলিক উদ্যোগ। যা বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (SACEP), এবং এটিতে সহযোগিতা করছে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রজেক্ট সার্ভিস অফিস (UNOPS)। বাংলাদেশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।  

n

প্রকল্পের বিষয়ে ও কার্যক্রম সম্পর্কে কর্মশালায় শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা রোধে ভাসমান প্লাস্টিক ব্যারিয়ার, সুন্দরবনে বায়োডিগ্রেডেবল পণ্যের কেন্দ্র এবং রিয়েল-টাইম প্লাস্টিক ট্র্যাকিং অ্যাপের মতো উদ্ভাবনসমূহ প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওগঝ উপকূলীয় অঞ্চলে ‘সার্কুলার ইকোনমি’ মডেল চালু করে পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল সংগ্রহ ও ২০ হাজারের বেশি পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করছে এবং অনেক মানুষকে ইকো-এন্টারপ্রাইজে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

রেড অরেঞ্জ লিমিটেড ঢাকার কল্যাণপুর খালে ভাসমান ব্যারিয়ার স্থাপন করে ইতোমধ্যে ৬৫ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য সংগ্রহ করেছে এবং আইওটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিক দূষণ ট্র্যাক করছে।

আর আরণ্যক ফাউন্ডেশন সুন্দরবনে প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক অডিট চালু করেছে এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্য খাতকে ডিজিটাল করার জন্য মোবাইল অ্যাপ ও নারী-অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমগ্র বাংলাদেশে ‘প্লিজ’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ, ২৫০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২,৩৬৬ জন বর্জ্য কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নারী।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় উদ্ভাবন ও অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য দেন। একইসঙ্গে এ ধরণের কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্ণব চক্রবর্তী বলেন, পরিষ্কার নদী, উপকূল ও কমিউনিটি যেন স্বপ্ন নয় বরং জাতীয় মানদণ্ড হয়, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।

আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. মো. আবদুল মোতালেব বলেন, আমরা যেসব কাজ করছি, সেগুলো পাইলট পর্যায়েই থামিয়ে রাখা যাবে না। নিরবিচ্ছিন্ন সহায়তা থাকলে এমন কাজের মাধ্যমে সারাদেশে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন এবং ইউএনওপিএস’র কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরলিধরণ বক্তব্য দেন।

বিইউ/এএইচ