নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
নদী বিনাশী কোনো প্রকল্পে উন্নয়ন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘দেশের নদী ধ্বংস করে কখনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় না। বরং নদীই কর্মসংস্থান তৈরি করে দেয়। তাই নদী বিনাশী কোনো প্রকল্পে উন্নয়ন হতে পারে না। নদী জীববৈচিত্র্যের যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে সেটা অন্য কিছু পারে না। আর জীববৈচিত্র্য ভালো না থাকলে মানুষও ভালো থাকবে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর আয়োজনে অনুষ্ঠানে সংগঠনটির পক্ষ থেকে নদী রক্ষায় ৯টি দাবি জানানো হয়।
আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের নদীগুলো ধ্বংস করছে মূলত তিনটি গ্রুপ। তারা হলো পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভারত ও বিভিন্ন ক্ষমতাধর কোম্পানি বা গ্রুপ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো নদীর জন্য ক্ষতিকর। আর বর্তমান সরকার যদি এই তিন গ্রুপের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান না নিতে পারেন তাহলে বোঝা যাবে তারা আগের সরকারের মতো দুষ্টুচক্রের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, এই সরকারের প্রধান কাজ হলো নদী রক্ষায় জাতিসংঘের আইনে স্বাক্ষর করা এবং নদী কমিশনের তথ্য অনুসারে কাজ করা। আর আগের নদী রক্ষার যেসব ডেল্টা প্ল্যান ছিল সেগুলো পর্যালোচনা করা। কারণ অনেক প্ল্যান রয়েছে যার মাধ্যমে নদী রক্ষার চেয়ে ধ্বংস বেশি হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সংগঠনটির প্রধান দাবিসমূহ হলো- ১. অবিলম্বে আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের সব নদ-নদী ও জলাধারের দখলদারদের তালিকা ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। ২. সর্বোচ্চ ৩-৪ মাসের মধ্যে নদ-নদী ও জলাশয় দখলমুক্ত করতে হবে। দখলদারদের জেল-জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৩. নদী রক্ষা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং অবৈধ দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। ৪. নদ-নদীর সীমানা ও মালিকানা সংরক্ষণে নিয়মিত সীমানা নির্ধারণ ও হালনাগাদ করতে হবে। আইনানুগভাবে জলাধারের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ৫. নদীভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ, পানি সংরক্ষণ অবকাঠামো নির্মাণ এবং গবেষণার মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। ৬. প্রশাসনিক সমন্বয় ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যাতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত না হয়। প্রশাসনিক ও নির্বাহী কার্যক্রমে স্বচচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় জনগণকে নদী রক্ষার উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা এবং নদী ও পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সমন্বয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ৮. ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের নদী রক্ষায় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশকে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন, গঙ্গা চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনার জন্য বৈশ্বিক কূটনৈতিক সমর্থন বাড়াতে হবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে নদীর ন্যায্য পানির দাবিতে জোরালো কণ্ঠস্বর তুলতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন (JRC) এবং অন্যান্য আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনা চুক্তির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৯. নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। নদীপাড়ের মানুষদের একত্রিত হয়ে নিজেদের নদীকে নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলে ঠেকাতে হবে দখল ও দূষণ। এতে যুবসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সংগঠনের সদস্য সচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আসিল মোহাম্মদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশাহিদা সুলতানা, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন, মো. নূর আলম শেখ, তোফাজ্জল সোহেল প্রমুখ।
এসএল/এমআর