বোরহান উদ্দিন
১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১০ এএম
অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় এবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কপ-২৯ সম্মেলন। গত ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। একদিকে যেমন সম্মেলন চলছে তখন অন্যদিকে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন নানা দাবিতে বিক্ষোভ করছে। তবে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ'র কড়া নির্দেশে শুরুতে পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা ভেন্যুতে ঢুকতে না পারলেও পঞ্চম দিনে তাদের বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তখন থেকে একেক স্পটে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। তবে স্লোগান দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিশ্ব মোড়লদের সাফ কথা, পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে জলবায়ু সম্মেলনস্থলে বিক্ষোভ করা যাবে কিন্তু দেওয়া যাবে না স্লোগান, করা যাবে না কোনো শব্দ। তাই বিশ্বের দুইশ’রও বেশি দেশ থেকে আসা শত শত কর্মী এমন ব্যতিক্রর্মী মুখের শব্দ ও হাতে তুড়ি দিয়ে নীরব প্রতিবাদে মুখর করে তুলেছে বাকু অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সম্মেলনস্থল।
কপ-২৯ এ এবারের আয়োজনে লিডার সামিট চলাকালীন আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি কোনো পরিবেশকর্মীকে ভেতরে বিক্ষোভ করার অনুমতি দেয়নি। পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী রাষ্ট্রের বিশ্ব মোড়লরা বাকু ছাড়ার পর জলবায়ু সম্মেলনে এমন আয়োজনের সুযোগ পান ক্ষুব্ধ তারুণ্য।
যেখানে এক কাতারে অংশ নেন দক্ষিণ এশিয়ার নদী ভাঙনের শিকার তরুণ থেকে শুরু করে গাজায় গণহত্যায় ঘর ও স্বজনহারারা। শুরুতে কাস্পিয়ান হলরুমের ভেতরে সমাবেশের মাধ্যমে দাবি দাওয়া তুলে ধরে পরিবেশকর্মীরা। তারা নীরব মানববন্ধনে অংশ নেন সম্মেলনস্থলের মূল চত্বরে। ব্যানার ফেস্টুনে তারা বিশ্বজুড়ে গ্যাসসহ পরিবেশবিরোধী জ্বালানি বন্ধের জোরালো দাবি জানান।
এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পরিবেশকর্মীরা বলেন, উন্নত বিশ্ব কার্বন নিঃসরণ না কমিয়ে উল্টো কার্বন বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে, যা বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এ সময় ফিলিস্তিনের গাজা গণহত্যায়ও পরিবেশবিরোধী মরণাস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে এর বিরুদ্ধে নীরব বিশ্বকে সরব হওয়ার আহ্বান জানান। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর নেতারা বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলেও জানান বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পরিবেশকর্মীরা।
রোববার বিরতির পর সোমবার থেকে শুরু হবে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব। বাংলাদেশের পরিবেশ উপদেষ্টা ড. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান এদিন একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
যে কারণে নীবর বিক্ষোভ
বাকুতে জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ‘স্বৈরাচারী, অত্যাচারী ও নিপীড়ক’ বলে দাবি করেছেন তিনি।
গ্রেটা থুনবার্গের ওই ভূমিকায় বেজায় চটেছিলেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট। তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে থুনবার্গ জর্জিয়া থেকে চলে যান আর্মেনিয়া। যে দেশের সঙ্গে আজারবাইজানের পুরোপুরি বৈরী সম্পর্ক।
যদিও সম্মেলনের পঞ্চম দিনে পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতি মেলে। অবশ্য বিক্ষোভকারীরা এমন সময় অনুমতি পান যখন আগত বিশ্বনেতারা ভাষণ পেশ করে আজারবাইজান ছেড়ে ফিরে গেছেন যে যার দেশে।
শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের গাইড লাইন অনুসারে, সংস্থাটির যেকোনো আয়োজনের মূল ভেন্যুর আশপাশে গণবিক্ষোভ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও জলবায়ু সম্মেলনের ক্ষেত্রে সে নিয়ম তুলে নিয়েছে জাতিসংঘ। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা চাইলে সম্মেলন চলাকালেই ভেন্যুর পূর্বনির্ধারিত জায়গায় যেকোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেন।
একজন পরিবেশকর্মী বলেন, ‘ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে-এটা জানাতেই এখানে এসেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত দেশগুলো ক্ষতিপূরণের দায় এড়াতে পারে না। এটা আমাদের প্রাপ্য।’
এদিকে কপের ভেন্যুতে জি টোয়েন্টি জোটের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতাদের ছবি ব্যবহার করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্রাজিলের বেশ কিছু আদিবাসী সংগঠন। ১৮ নভেম্বর ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শুরু হতে যাচ্ছে জি টোয়েন্টি সামিট-২০২৪। সম্মেলনের ঠিক তার আগ মুহূর্তে প্রতীকী এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দেশটির আদিবাসীরা।
বিইউ/এমআর