images

কৃষি ও পরিবেশ

কৃষকের উৎপাদিত শাক-সবজি নিয়ে কালকিনিতে ‘চাষির বাজার’

আসাদুজ্জামান লিমন

১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পিএম

কৃষকের উৎপাদিত ফসল কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে যায়। ফলে ভোক্তাকে কিনতে হয় বাড়তি দামে। অন্য দিকে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকও তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান না। কৃষক ও ভোক্তার মাঝে এই দূরত্ব ঘোচাতে মাদারীপুরের কালকিনিতে চালু হয়েছে কৃষকের বাজার। 

bazar

‘চাষির বাজার’ নামের এই ‍উদ্যোগের ফলে উপজেলার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি, মাছ-মাংস এবং অন্যান্য শস্য দানা সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারছেন। এতে করে কৃষক তার পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছেন। ক্রেতারাও তরতাজা পণ্য তুলনামূলক কম দামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনতে পারছেন।

7

৯ নভেম্বর শনিবার কালকিনি পৌরসভার ডাক বাংলা মাঠে এ বাজারের উদ্বোধন করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ। এই বাজার বসিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সহযোগিতায় করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

88

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১১টা কৃষকের বাজার বসার কথা রয়েছে। সোমবার সকাল সাতটায় চাষির বাজার গিয়ে দেখা যায়, কালকিনি সদরের আশেপাশের গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের ‍উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসছেন। বাঁশের ঝুড়ি, ডালা এবং গামলায় করে পণ্য এনে মাঠে বসেছেন। যাদের বাড়ি উপজেলা থেকে খানিকটা দূরে তারা তাদের পণ্য ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে আসছেন। 

তাজা, টাটকা শাক-সবজি ও ফল বাজারে আনা মাত্রই ক্রেতারা কেনার জন্য কৃষকদের ঘিরে ধরছেন। দাম দর করে কিনেও নিচ্ছেন। 

111

কালকিনি পৌরসভার উত্তর রাজদী গ্রামের বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম বাবু বলেন, চাষির বাজার নিয়ে মাইকিং শুনে আজ সকালের ঘুম উপেক্ষা করে বাজারে এসেছি। এখান থেকে কৃষকের উৎপাদিত টাটকা সবজি ও মাছ কিনলাম। অন্য কাঁচা বাজারের চেয়ে ‍কিছুটা কম দামেই পেয়েছি। 

অ্যালুমিনিয়ামের গামলা বোঝাই করে চাষির বাজারে পাঙ্গাশিয়া গ্রাম থেকে পেঁপে নিয়ে এসেছিলেন শহীদুল্লাহ। এসব পেঁপে তার গাছেই হয়েছে। সকালেই সেগুলো গাছ থেকে পেরে এনেছেন। দাম চাচ্ছেন প্রতি কেজি ৪০ টাকা করে। তার কাছ থেকে এক কেজি পেঁপে কেনেন কাওসার। তার ভাষ্য, পেঁপের দাম ঠিকই আছে। বরং বাজারের চেয়ে টাটকা পাওয়া গেছে। 

888

পাঙ্গাশিয়া গ্রামের আরেক কৃষক আবদুল হাকিম সরদার। এই বাজারে তিনি সোমবার এনেছিলেন শাক ও ফল। প্লাস্টিকের গামলার লাল রঙ ছাপিয়ে সবুজ পালং শাকের রঙ চোখে পড়ার মতো। বিক্রির জন্য আরও এনেছিলেন বড় আকারের একটি পাকা পেঁপে। যার দাম হাঁকছিলেন ২০০ টাকা। অন্য দিকে পালং শাকের আটি ১০ টাকা দরে বিক্রি করেন। 

টকটকে লাল রঙা শাক নিয়ে সাত সকালে বাজারে হাজির হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর সরদার। তিনি এসেছিলেন চরলক্ষী গ্রাম থেকে। প্রতি আটি লাল শাক ১০ টাকা করে বিক্রি করেন তিনি। 

44

শনিবার এই বাজার শুরু হলেও রবিবার ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক ছিল কম। সাতটার দিকে বাজার বসেছিল অল্প সময়ের জন্য। সেদিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম। রবিবার সকাল আটটার দিকে নতুন এই বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেখা যায়নি। বাজারটিকে জনপ্রিয় করতে দিনভর মাইকিং করা হয়। মাইকিং শুনে সোমবার ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ে। 

চাষির বাজারে আগত কৃষকদের অনেকেই জানালেন মাইকিং শুনে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে এই বাজারে এসেছেন। অন্যান্য বাজারের মতো এই বাজারে বিক্রীত পণ্যের ওপর খাজনা দিতে হয় না। ফলে লাভ হয় বেশি। 

22

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী কায়কোবাদ বলেন, চাষির বাজার নামের এই নিত্যদিনের বাজার যদি নিয়মিত বসে তবে সাধারণ কৃষকরা যেমন ‍উপকৃত হবে তেমনি ভোক্তারাও ন্যায্য দামে টাটকা শাক-সবজি কিনতে পারবেন। কেননা, এখন বাজারে কৃষকের উৎপাদিত ফসল ফড়িয়াদের হাত ঘুরে ক্রেতারা কাছে আছে। ফলে বেশি দামে কিনতে হয়। 

এদিকে যেসব কৃষক চাষির বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসেন তাদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিপিবদ্ধ করে রাখছে উপজেলা প্রশাসন। যাতে করে কৃষকদের খোঁজ-খবর রাখা যায়। 

5

এর আগে শনিবার এই বাজারের উদ্বোধনের সময় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ছাতা উপহার দেওয়া হয়। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ডাক বাংলার পূর্ব পাশে এক চিলতে জায়গায় বসে চাষীর বাজার। এদিকে সুবিশাল মাঠের অনেকটাই খালি পড়ে আছে। স্থানীয়রা মনে করছেন বাজারটি জনপ্রিয় করতে পারলে কৃষকদের পসরা সাজানোর পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া যাবে। কেননা, মাঠটি সুবিশাল। 

1

সকালের ঘুম উপেক্ষা করে মাঠে যখন শাক-সবজি কেনাবেচা চলছিল। এখন বাদামি রঙের এক জোড়া ঘোড়া মাঠের আরেক পাশে সবুজ ঘাসের ডগা ছিড়ে খাচ্ছিল। আর খানিক পর পর বাজারে শোরগোল শুনে সেদিকে খানিকটা তাকিয়ে আবার ঘাস খেতে মন দেয়। 

এজেড