নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ জুলাই ২০২৪, ১০:০৪ পিএম
আরেক দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। এই দুই জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে পানিতে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এছাড়া ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আগামী তিন দিন আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত সিলেটে পাঁচটি নদীর পানি ছয়টি স্থানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলেটের চারটি উপজেলা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। সিলেট মহানগরেরও অনেক জায়গায় নতুন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একইসময় পানি বৃদ্ধির কারণে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পডেছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে সোমবার দিন ও রাতে অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে। একদিকে অবিরাম বৃষ্টি আর অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সব নদ-নদীর পানি বেড়ে ও নতুন নতুন এলাকা প্লাাবিত হয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। আর আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩ মিলিমিটার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী তিন দিন সিলেটে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগর ছাড়া জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলার এক হাজার ৮১টি গ্রামে এপর্যন্ত প্রায় সাত লাখ ৫০০ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এসব উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ রয়েছেন।
সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই সপ্তাহ ব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দী ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোররাত থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতিভারী বর্ষণে মহানগরসহ সিলেটের সব উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পরবর্তী এক সপ্তাহ সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। এরপর পানি নামতে শুরু করে। তবে সে গতি ছিল খুব ধীর। এর মধ্যেই তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো এই অঞ্চলের মানুষ।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গত তিন দিনে ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হলেই এখানে প্রবলেম হয়। কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি এখনও বিপৎসীমার উপরে এবং অমলশিদে কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিটা যদি আগামী তিন দিনে কমে তবে পানিটা নামবে নতুবা বন্যা বেড়ে যাবে। ভারী বৃষ্টি হলেই পানি নামতে দেরি হবে। সিলেটে কানাইঘাটের পানি বেড়ে গেলে তা নামতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে।
বন্যা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, পরবর্তী তিন দিনের ওপর বন্যা পরিস্থিতি নির্ভর করছে। এ তিন দিনে বৃষ্টিপাত কমলে পানি কমে যাবে। কিন্তু বেড়ে গেলে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতি বাড়বে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ ছাড়াও নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, শেরপুর- এই পাঁচটি জেলা এই মুহূর্তে বন্যা কবলিত রয়েছে। তবে মঙ্গলবার বিকেলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আরেও দুটি জেলায় নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নতুন করে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে হবিগঞ্জ ও ফেনী।
তারা বলছে, মঙ্গলবার সকালে হবিগঞ্জের খোয়াই নদী এবং ফেনীর মুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তবে, এই দুটো পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে থাকলেও বন্যা স্বল্পমেয়াদী হবে বলে আশা করছেন তারা।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটা পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
জেবি