নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ মে ২০২৪, ০৭:২৭ এএম
ঘূর্ণিঝড় আইলার মতোই ভয়ঙ্কর হবে রেমাল। ঘূর্ণিঝড় আইলার সঙ্গে অনেকটা মিলও রয়েছে রেমালের। ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে রেমালের প্রভাব শুরু হবে। দুপুরে প্রবল ঘূর্ণিঘড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে রাতে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৫ ফুটের অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। শনিবার (২৫ মে) রাতে আবহাওয়ার বিশেষ বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ধারণার চেয়ে একটু বেশি শক্তিশালী হতে পারে। অতীতে আইলা, আম্ফানও ঠিক মে মাসের শেষ দিকে সংঘটিত হয় এবং ওই দু’টি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে।
ভারতের অলিপুর আবহাওয়া অফিস বলছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর দিকে এগোচ্ছে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়টির বর্তমান অবস্থা বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে ৩৬০ কিলোমিটার দূরে। সংস্থাটি জানিয়েছে, রোববার দুপুরের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এবং তা মধ্যরাতে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। এ সময় তার গতি থাকবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। সাময়িকভাবে হাওয়ার গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় হতে পারে ১৩৫ কিলোমিটার। আছড়ে পড়বে এ দেশের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে।
অপর দিকে শনিবার সন্ধ্যায় মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৭ নম্বর বিপৎ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৯.৪০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি শনিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎ সংকেত (পুন:) ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হলে সতর্কসংকেতও পরিবর্তন করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারিবর্ষণ (২৮৯ মিমি) হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এইউ