images

কৃষি ও পরিবেশ / জাতীয়

‘রেমাল’ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, প্রস্তুতি শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়েছে। এটি আগামীকাল শনিবার (২৫ মে) ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেমাল’। এখন পর্যন্ত আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের মধ্যে। ইতোমধ্যে এর ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান শুক্রবার (২৪ মে) জানিয়েছেন, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ রূপ নেওয়ার পর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলে মূলত খুলনা বিভাগ পড়ে। বাতাসের শক্তি নিয়ে এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড় (৮৯ কি.মি.) বেগে উপকূল পাড়ি দিতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর এর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে।

তীব্র ঘূর্ণিঝড় হলে উপকূল পাড়ি দিলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার পর থেকে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে আগামীকাল শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যার পর থেকে উপকূলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। প্রথম দিকে মেঘলা আকাশসহ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (বিজ্ঞপ্তি নম্বর-২) বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৫.৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৮° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

আরও পড়ুন

রেমাল: নিম্নচাপটি এগোচ্ছে বাংলাদেশের দিকে

বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত, ৪ বন্দরে সতর্কসংকেত

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে।

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

FFF3

রেমাল নামটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের দেওয়া নাম। আরবি রেমাল শব্দটির অর্থ বালি।

উপকূলীয় এলাকায় প্রস্তুতি

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলোতে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি আগাম প্রস্তুতি সভা করেছে। সভায় জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় ১৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে। এছাড়া জরুরি কাজে অংশগ্রহণের জন্য ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জরুরি ত্রাণকার্যে ব্যবহারের জন্য পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫১ জন মানুষ ছাড়াও গবাদি পশু আশ্রয় নিতে পারবে।  

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া নগদ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা এবং ৬৪৩.৪ টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। ডিসি জানান, জেলা ব্যাপী সিপিপির তিন হাজার ১৮০ জন সদস্য এবং রেডক্রিসেন্ট, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রায় ৫০০ সদস্য প্রস্তত রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের সংকেতের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন

ধেয়ে আসছে রেমাল, তাণ্ডব চালাবে ১২০ কিমি বেগে

রেমালের গতিপথ কোন দিকে, আঘাত হানবে কোথায়?

‘রেমাল’ মোকাবেলায় বরগুনায় সচেতনতামূলক মাইকিং করেছেন কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। শুক্রবার (২৪ মে) বিকেল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ প্রচার মাইকিং করা হয়।

কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এম ফিরোজ্জামানের নেতৃত্বে পাথরঘাটা পৌর শহরের লঞ্চঘাট, নিলিমা পয়েন্টসহ উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার মাইকিং করেন কোস্ট গার্ড সদস্যরা।

RRR

প্রস্তুতি শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরেও। এজন্য ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে বন্দর কর্মীদের। শুক্রবার (২৪ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজাভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। যদি ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে আসে তাহলে সম্ভাব্য মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে বন্দর।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রেমাল মোকাবিলায় বন্দর থেকে কর্মীদের প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি ও ধরণ পর্যবেক্ষণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ সম্পর্কিত জরুরি তথ্য সংগ্রহ এবং বিতরণের জন্য কন্ট্রোল রুম খুলেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুক্রবার (২৪ মে) বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনার তৈরি হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রীন রোডের পানি ভবনের লেভেল-২ এবং কক্ষ নম্বর ২১৪ এ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যার কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলবে। এর সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন দফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া।

জেবি