হারুন জামিল
০৩ মে ২০২২, ০৯:২৫ পিএম
সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ততার সমস্যা বহু পুরনো। এখানকার খরস্রোতা নদীগুলোতে নাব্যতা সংকটে জোয়ার-ভাটা কমে যাওয়ার পর থেকে সমুদ্রের লোনাপানি ওপরে ওঠা শুরু হয়। ষাট ও সত্তর দশকে ওয়াপদা উপকূল রক্ষায় যে বেড়িবাঁধ দেয় এখন তা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ফি বছর নদীতে পানির চাপ বেড়ে গিয়ে বাঁধ ভেঙে লোনাপানি গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত করে।
বাঁধভাঙা এ লোনাপানিই এই এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এলাকায় গাছপালা মরে গেছে। ফসলি জমি অনুর্বর বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভূমিহীন কর্মহীন হয়ে গেছে সম্পন্ন মানুষেরা।
এককালের খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদী আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাকে বিভক্ত করেছে। এর একপাশে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ। সুন্দরবনের উপকূল দিয়ে এঁকেবেঁকে সাগর মোহনায় মিশেছে এ নদী। ২০২০ সালে হরিশখালি ও কুড়ি কাহুনিয়ায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে পড়ে প্রতাপনগর কল্যাণপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। পানি প্রবেশের পরই তছনছ হয়ে গেছে এলাকার মানুষের জীবনযাপন।
বিকালে খোলপেটুয়া নদীর তীররক্ষা বাঁধের কিনারে কথা হচ্ছিল স্থানীয় গোলাম বকশের সঙ্গে। পঁয়ষট্টি ঊর্ধ্ব গোলাম বকশ বললেন, তার বাড়ি প্রতাপনগর। এখন কল্যাণপুরে থিতু হয়েছেন। একসময় জমিজিরাত থাকলেও এখন রিক্ত। নিঃস্ব। ‘জন-মজুরি দিয়েই আমার দিন চলে।’
তিনি আরও বলছিলেন, ক্ষেত খামার নেই। চাষের জমি শেষ হয়ে গেছে। ঘেরে মাছ চাষ আর মজুরি দিয়েই দিন পার করতে হয়।
কথা হচ্ছিল খুচরো ব্যবসায়ী শহীদুজ্জামানের সঙ্গে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, এ এলাকার পরিবেশ বদলে গেছে। দুই বছরের বেশি সময় লোনাপানি ক্ষেতখামার নষ্ট করে দিয়েছে। মানুষ নিঃস্বপ্রায় হয়ে পড়েছে।
উপকূলীয় এই এলাকা এখন প্রায় বিরান প্রান্তরের মত পড়ে আছে। মাঠজুড়ে অসংখ্য ডোবা-জলাশয়। কোনো সবুজের চিহ্ন নেই। লোনাপানি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে আম, নারকেল, খেজুর এমনকি শক্তপোক্ত তালগাছ পর্যন্ত। উঁচু জায়গায় বেড়ে ওঠা বাবলাগাছগুলোই কেবলমাত্র টিকে আছে। এছাড়া রাস্তার ধারে আছে ফনি মনসার কাঁটার ঝোপ।
ক’বছর আগে এলজিআরডি গ্রাম উন্নয়ন সড়ক প্রকল্পের আওতায় যেসব পিচঢালা রাস্তা তৈরি করেছিল লোনাপানির ঢেউয়ের তোড়ে তা ক্ষয়ে গেছে। যেখানে সিমেন্ট বালু দিয়ে তৈরি ঘরবাড়ি খসে পড়ে পিচের রাস্তা সেখানে টিকবে কি করে? বলছিলেন, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান (৬২)। খোলপেটুয়া নদীর প্রশস্ততা ও নাব্যতা এখনও আছে।
ঢাকায় বিএসএমএমইউতে কর্মরত এ এলাকার সন্তান ডা. মোস্তফা নুরুজ্জামান বলছিলেন, তিনি শৈশবে নদীতে কুমির দেখেছেন। কিন্তু এখন আর কুমিরের আনাগোনা দেখা যায় না। চর পড়ে নাব্যতা হারানো নদী শীর্ণ হয়ে গেছে।
/আইএইচ