নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ জুন ২০২৩, ০৫:৫৮ পিএম
যত্রতত্র কোরবানির পশুর হাট বন্ধ, পর্যাপ্ত স্থায়ী জবাইকেন্দ্র স্থাপন এবং কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণসসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক নাগরিক সমাবেশে এসব দাবি জানায় পরিবেশবাদী সংগঠনটি।
বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য দেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, আমিনুর রসুল, ড. মাহবুব হোসেন, ইবনুল সাঈদ রানা, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, আদি ঢাকাবাসী ফোরামের সভাপতি জাভেদ জাহান, পুরান ঢাকা নাগরিক কমিটির সভাপতি, নাজিম উদ্দীন, নগরবাসী পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি হাজি আনছার আলী, গ্রিন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক রায়হান প্রমূখ।
এতে আয়োজক সংগঠনের অন্যান্য প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সামাজিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, যত্রতত্র কোরবানির পশুর হাট বন্ধ, স্থায়ী জবাইকেন্দ্র স্থাপন, কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ নিশ্চিত করা সরকার ও সিটি করপোরেশনের মূল দায়িত্ব। এর পাশাপাশি দেশের জনসাধারণকে অধিক সচেতন হতে হবে। নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি, জবাই পরবর্তী দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্জ্য নিজে অপসারণ করা এবং সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করা সবার দায়িত্ব।
নুর মোহাম্মদ বলেন, সরকার উন্নয়নের নামে গাছ রোপন করছে এর বেশির ভাগই অপরিকল্পিতভাবে। এর সুফল মানুষ পাবে না। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সরকারকে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবেশবান্ধব গাছ রোপনের আহ্বান জানান।
আলমগীর কবির বলেন, বছর ঘুরে আবার পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। ঈদ মানেই আনন্দ। সেই আনন্দ যেন অন্যের জন্য বিষাদের কারণ না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এই ঈদে বিশেষ করে পশু কোরবানি প্রধান অনুসঙ্গ। শিগগির বিদ্যমান পশুর হাটগুলো গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়ায় ভরে উঠবে। এক পর্যায়ে এসব হাটের বাইরেও সারাদেশের সব নগরেই বিভিন্ন অনির্ধারিত স্থানে বসবে অস্থায়ী পশুর হাট। বাপা এই ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এর ফলে কিছু সফলতা এসেছে। কিন্তু এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপরই পড়ে। আমরা এখনো দেখি ঢাকা শহরের বিভিন্ন খেলার মাঠ, স্কুল-কলেজ এবং রাস্তার ওপর কোরবানির পশু জবাই করা হয়। এটা মোটেও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো দিক নয়।
তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং একই সাথে তিনি এই যথাযথ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করেন।
জাকির হোসেন বলেন, প্রতি বছর রাজধানী ঢাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু বেচাকেনার অস্থায়ী হাট বসানো হয়। তাছাড়াও সব ওয়ার্ডে বা পাড়ায় পাড়ায় নতুন নতুন স্থানে, বিভিন্ন খেলার মাঠে, যেকোনো উন্মুক্ত স্থানে, ছোটখাট পার্কে, ছোট বা বড় রাস্তার ধারে দেখা যায় অসংখ্য পশুর সমাবেশ। এসব পশু তিন দিন পর্যন্ত কোরবানি দেওয়া হবে। যার ফলে এর বর্জ্য রক্ত রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়বে। সময়মতো এসকল বর্জ্য ও রক্ত অপসারণ না করলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্থায়ী জবাইখানা নির্মাণ ও সেখানে কোরবানির ব্যবস্থা করা। এদেশের অনেকেই দেশটাকে বাসযোগ্য করতে চায় না। কারণ তারা দেশটাকে একটি ব্যবসাকেন্দ্র বানিয়ে অর্থ উপার্জন করে আর পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রে স্থায়ীবসবাসের ঠিকানা বানিয়েছে সুযোগ বুঝে উড়াল দেবে।
বাপার ছয় দফা দাবি
১. যত্রতত্র পশুর হাট বসানো সম্পূর্ণ বন্ধ ও নির্ধারিত স্থানে পশুর হাট নিশ্চিত করতে হবে।
২. পশুর হাটের প্রতিদিনের বর্জ্য দিন শেষে নিয়মিত ও সম্পূর্ণ অপসারণ করতে হবে।
৩. এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত স্থানে কোরবানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কোরবানির পর অবিলম্বে সব বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।
৫. সিটি করপোরেশনের আর্থিক, জনবল, যানবাহনসহ সার্বিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
৬. পাড়া-মহল্লাভিত্তিক নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি ও নিয়মিত পশু জবাইয়ের পর্যাপ্ত স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
কারই/জেবি