images

কৃষি ও পরিবেশ / সাক্ষাৎকার

‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ’

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন

০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৫৭ এএম

স্বপ্নটা শুরু হয় ১৯৬১ সালে। ওই বছর পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান সরকার। সাত বছর পর ১৯৬৮ সালে জমি অধিগ্রহণসহ কিছু কাজ শেষ হলেও পরে প্রকল্পটি বাতিল করে তৎকালীন সরকার।

দেশ স্বাধীনের পর আবার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। নানা সীমাবদ্ধতায় শেষ পর্যন্ত কাজ তেমনটা এগোয়নি।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর ৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটির কাজে গতি পায়। ২০০৯ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করলে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। শেখ হাসিনার সরকারের টানা তিন মেয়াদের শেষ দিকে এসে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে দীর্ঘ ৬২ বছরের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ইতিহাসের বাঁক বদলের সাক্ষী হওয়া প্রকল্পটি।

 

আরও পড়ুন

ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশের অপেক্ষায় দেশ

দুপুরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যা দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

তবে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি কতটা পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ অনেকের মধ্যে তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। কারণ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনার ব্যাপারে একটা ভীতি সবসময় কাজ করে অনেকের মধ্যেই। তবে এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফরোজা শেলী।

প্রকল্পটির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত আফরোজা শেলী ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন। আলপাচারিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে নানা বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মেইলের নিজস্ব প্রতিবেদক তারিক আবেদীন ইমন।

ঢাকা মেইল: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কতটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন?

ড. আফরোজা শেলী: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও এর ব্যতিক্রম নয়। রিয়েক্টর এর চারপাশের ৩০০ মিটার এলাকাকে বলা হয় exclusion জোন। এই জোনে প্রবেশাধিকার সীমিত এছাড়াও ফুয়েল সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে টু পারসন নীতি অবলম্বন করা হয়। উক্ত কারণে, ফুয়েল মিসিং হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তায় বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকষ দল কাজ করছে।

ঢাকা মেইল: এখানকার নিউক্লিয়ারের মাধ্যমে কী ধরনের রেডিয়েশন তৈরি হতে পারে?

ড. আফরোজা শেলী: সাধারণত, ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল আলফা পার্টিকেল নির্গত করে। যেখানে এটি কয়েক সেন্টিমিটার বাতাসে আটকানো সম্ভব, সেখানে এটি ত্বক ভেদ করে আমাদের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কিন্তু, যখন রিয়েক্টর (পারমাণবিক চুল্লি) চালু হবে তখন ফিশনের কারণে ফিশন প্রোডাক্ট, গামা রশ্মি নির্গত হবে। তবে পরিবেশ এবং সর্বসাধারণের জন্য ভয়ের কিছু নেই। কারণ এর প্রতিকার হিসেবে রিয়েক্টর ভেসেল, কন্টেনমেন্ট বিল্ডিং কাজ করবে। সর্বোপরি পরিমিত শিল্ডিং ব্যবস্থা আছে।

ureni

ঢাকা মেইল: নিউক্লিয়ার আনার সময় পরিবহন বা এটার ফিউশন প্রোডাক্টে ক্ষতির কোনো শঙ্কা আছে কি না?

ড. আফরোজা শেলী: নিউক্লিয়ার ফুয়েল পরিবহনের সময় কোনো ক্ষতির সুযোগ নেই। যেমনটি দেখা গেছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়েই কিন্তু বাংলাদেশ সরকার রূপপুরে নিউক্লিয়ার ফুয়েল পরিবহন করেছে। আর যেমনটি আগে উল্লেখ করেছি, ফ্রেশ ফুয়েল পরিবহনের সময় কোনো প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, কারণ ফ্রেশ ফুয়েল শুধুমাত্র আলফা কণা নির্গত করে, সঙ্গে এর অর্ধাযু মিলিয়ন বছর।

ঢাকা মেইল: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কতটা পরিবেশবান্ধব?

ড. আফরোজা শেলী: রূপপুরে ব্যবহৃত VVER ১২০০ রিউক্টর জেনারেশন থ্রি প্লাস রিয়েক্টর। বিগত, নিউক্লিয়ার অ্যাকসিডেন্ট থেকে লব্ধ শিক্ষা ব্যবহার করে এই ডিজাইনকে করা হয়েছে আরও টেকসই এবং রোবাস্ট। প্যাসিভ সেফটি সিস্টেম ইনকর্পোরেটেড, সঙ্গে এক্সট্রিম কেসের জন্য কোর ক্যাচার ব্যবহার করা হয়েছে। মোটকথা, সকল ধরনের আধুনিক ডিজাইন, প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থা বর্তমান রিক্টরগুলোকে করে তুলেছে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, এবং ঝুঁকিমুক্ত।

ঢাকা মেইল: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যারা কাজ করবে তাদের স্বাস্থ্যে কোনো প্রভাব পড়বে কি না?

ড. আফরোজা শেলী: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যারা কাজ করবেন তাদেরকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হয়। এই লক্ষ্যে, IAEA কর্তৃক প্রদত্ত ডোজ লিমিট অনুসরণ করা হয়। উল্লেখ্য, এই পর্যন্ত বিশ্বে এমন কোনো নজির নেই যে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করার জন্য কোনো অপারেটরকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে।

 

আরও পড়ুন

সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় রূপপুরে পৌঁছাল ইউরেনিয়াম

ঢাকা মেইল: ইতোপূর্বে বেশ কয়েক জায়গায় নিউক্লিয়ার বিপর্যয়ের কথা শোনা গেছে। সেসব মাথায় রেখে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে?

ড. আফরোজা শেলী: ইতোপূর্বে সংঘটিত নিউক্লিয়ার বিপর্যয়গুলো প্রধানত হিউম্যান এরোর এবং ডিজাইন ফল্টের কারণে হয়েছিল। কিন্তু, এখন পুরোটাই অটোমেশন, হিউম্যান এররের সুযোগ নেই। আর চেরনোবিল, TMI, ফুকুশিমার রিয়েক্টরগুলো ছিলো জেনারেশন টু এর। রূপপুরে ইনস্টলড VVER ১২০০ রিয়েক্টর লেটেস্ট জেনারেশন থ্রি প্লাস ডিজাইনের।

ঢাকা মেইল: এখানে কীভাবে বা কী ধরনের দক্ষ জনবল প্রস্তুত করা হয়েছে?

ড. আফরোজা শেলী: বাংলাদেশ সরকার রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কিন্তু ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। NPCBL নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভাইভা বোর্ডে থাকার সুযোগ আমার হয়েছে, এবং আমি কাছ থেকে দেখেছি কীভাবে পুরোপুরি স্বচ্ছতার সঙ্গে ভালো ছেলেমেয়েদের রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্বাচন করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, নির্বাচিত একটা অংশকে রাশিয়াতে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।

টিএই/এমআর