আমের জেলা নওগাঁ। ফাগুনের শুরু থেকে মুকুলে ছেয়ে গেছে প্রতিটি আম গাছ। মুকুলের ভারে যেন এখনই ভেঙে পরবে ডাল। চারিদিকে মো মো করছে সেই ঘ্রাণ। পাগল করা মুকুলের গন্ধ যেন আবহমান বাংলার স্বর্গীয় রূপ মেলে ধরেছে জেলার আনাচে কানাচে।
শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তী এ জেলাতে এ বছর ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আম চাষ হচ্ছে। গতবারের চেয়ে গাছে মুকুল এসেছে বেশি। তাই ফলনও বেশি পাওয়ার আশা করছেন বাগান মালিকরা। তবে বাগান মালিকদের দাবি, বিদেশে অধিক পরিমাণে আম রপ্তানি করা গেলে তারা আরও বেশি লাভবান হবেন। এছাড়াও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, এবার নওগাঁতে আম উৎপাদনে সব রেকর্ড ছাড়াতে পারে।
জেলার প্রতিটি উপজেলার যেদিকে চোখ যায় এমনই অনিন্দ সৌন্দর্য চোখে পড়ে। যা সহজেই হৃদয় কাড়ে সবার। এ বছর আমের ফলন নিয়ে দারুণ আশাবাদী জেলার কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি বছর আমের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তী এ জেলাতে এ বছর ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আম চাষ হচ্ছে। গতবারের চেয়ে গাছে মুকুল এসেছে বেশি। তাই ফলনও বেশি পাওয়ার আশা করছেন বাগান মালিকরা। তবে বাগান মালিকদের দাবি, বিদেশে অধিক পরিমাণে আম রপ্তানি করা গেলে তারা আরও বেশি লাভবান হবেন। এছাড়াও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, এবার নওগাঁতে আম উৎপাদনে সব রেকর্ড ছাড়াতে পারে।
চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
নওগাঁ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে নওগাঁয় আম বাগান ছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১২ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত ২০২০-২১ মৌসুমে আমবাগান ছিল ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
চলতি মৌসুমে উপজেলা ভিত্তিক আম চাষের পরিমাণ হলো— সদর উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর, রানীনগরে ১১০, আত্রাইয়ে ১২০, বদলগাছীতে ৫২৫, মহাদেবপুরে ৬৮০, পত্নীতলায় ৮ হাজার ৮৬৫, ধামইরহাটে ৬৭৫, সাপাহারে ১০ হাজার, পোরশায় ১০ হাজার ৫২০, মান্দায় ৪০০ ও নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে।
জেলার বিভিন্ন আম বাগান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আম বাগানগুলো মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। মুকুলের মো মো গন্ধে মুখরিত পুরো এলাকা। চারিদিকে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালি মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছ। আবার কিছু কিছু গাছে এরই মধ্যে আমের গুঁটি আসতে শুরু করেছে। ভালো ফলনের আশায় গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পারছেন বাগান মালিকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তার। এদিকে, আমের ভালো ফলন পেতে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।
জেলার পোরশা উপজেলার আম বাগান মালিক আব্দুল কুদ্দস জানান, এবার গাছে বিপুল পরিমাণ মুকুল এসেছে। কিছু কিছু গাছে গুঁটিও আসতে শুরু করেছে। তাই ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়াটা একটু ভালো থাকলেই হয়।
সাপাহারে আইহাই ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আম বাগান মালিক নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। বাগানের সবগাছে মুকুল আসছে। এই সময়ে গাছে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা ও মুকুল ভালো থাকার জন্য কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এছাড়া গাছের গোড়ায় গর্ত করে সেখানে সার দেওয়া।’
একই উপজেলার চাচাহার গ্রামের আমচাষি মো. আলামিন বলেন, ‘৩৫ বিঘা জমি বিভিন্ন মেয়াদি লিজ নিয়ে আম বাগান করেছি। তাতে আম্রপালি, বারি ফোর, গৌড়মতি ও আশ্বিনা জাতের ৩ হাজার ৫০০ অধিক আম গাছ রয়েছে। এবারে গাছে যথেষ্ট পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে। মুকুল রক্ষায় গাছের পরিচর্যায় বিভিন্ন ধরনের সুষম খাবারসহ সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সেওয়াপাড়া গ্রামের আরেক আমচাষি জাকারিয়া বলেন, ‘১০০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমের বাগান তৈরি করেছি। গতবারের তুলনায় এবার সবার বাগানে আম মুকুল অনেক ভালো এসেছে। গাছে মুকুল যেন ঝড়ে না পরে সেজন্য সার, কিটনাশক ও সেচ দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আর বলেন, ‘গত বছরে করোনার কারণে আমের তেমন দাম পাই নাই। যার কারণে তেমন লাভ করতে পারি নাই। আশা করছি, এবার লাভবান হবো। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে আম রফতানি করা গেলে আমচাষিরা আরও বেশি লাভ হবে।’
জেলা কৃষিম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ ঢাকা মেইলকে জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আম গাছে মুকুল বেশ ভালো আসছে। এই সময়ে সাধারণত হুপার পোকার আক্রমণ করে। এছাড়া বিচিং পদ্ধতিতে সেচ না দেওয়ার কারণে মুকুল শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে ও ফলন ভালো পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমচাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমচাষিরাও সে মোতাবেক গাছের পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারে আমের ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে। এবছর আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে হচ্ছে।
আম রফতানির চিন্তা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে স্বল্প পরিসরে আম বিদেশে রফতানি হয়েছিল এই জেলা থেকে। কিন্তু এবার আম রফতানির সকল নির্দেশনা মেনে বড় পরিসরে আম বিদেশে রফতানির চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
টিবি