‘শব্দ দূষণের প্রত্যক্ষ শিকার ট্রাফিক পুলিশ’

রাজধানীতে দায়িত্বরত বেশিরভাগ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যই কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন। শব্দ দূষণের সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে জাতিকে চরম মাসুল গুণতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অডিটোরিয়াম হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের’ আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে ওই সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে পরিবেশ অধিদফতর। বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতায় আছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ক্যাপস এর গবেষণায় দেখা যায়- পেশাগত দায়িত্বে থাকা ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩৩ দশমিক ৯ ভাগ ট্রাফিক পুলিশের অন্যদের কথা শুনতে কষ্ট হয়। শব্দ দূষণসহ পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বেশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সোহেল রানা বলেন, শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। যানবাহনের সৃষ্ট শব্দ দূষণের প্রত্যক্ষ শিকার ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা।
এ সময় শব্দ দূষণ রোধে যানবাহন এবং নির্মাণকাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
>> আরও পড়ুন: শব্দ দূষণ রোধে আইন আছে, প্রয়োগ নেই
এছাড়া সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বেগম ফারহানা মুস্তারী বলেন, পরিবেশ অধিদফতর শুরু থেকেই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। এই প্রকল্পের অধীনে পরিবেশ অধিদফতর নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছে। শব্দ দূষণ রোধে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
সভায় অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি ডা. এম এ বাকি বলেন, শব্দ দূষণ একটি নীরব ঘাতক। এটি পথচারী ও সড়কে কর্মরত ট্রাফিক কন্ট্রোলে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করছে। শব্দ দূষণ কানের সমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্টের রক্তনালী ব্লক, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বাড়াতেও ভূমিকা রাখে। জনস্বাস্থ্যের এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জনসচেতনতার জন্য আরও অধিকতরভাবে গণমাধ্যমে প্রচার করা উচিত এবং জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বুয়েটের অধ্যাপক শিফুন নেওয়াজ বলেন, প্রশাসনের উচিত উচ্চ ডেসিবল শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন আমদানি বন্ধ করা এবং পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান হর্ন নষ্ট করা। সপ্তাহে যে কোনো একটি দিন বা একটি ঘণ্টা অথবা একটি স্থান হর্নমুক্ত ঘোষণা করা যেতে পারে এবং তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
>> আরও পড়ুন: আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলবেন, বায়ু দূষণ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট
সভায় অন্যদের মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী- বাংলাদেশের ৯ দশমিক ৬ শতাংশ জনগণ অর্থাৎ ১ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের শ্রবণ হ্রাসজনিত জটিলতায় ভুগছে। এই শ্রবণ হ্রাসের অন্যতম মূল কারণ শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণ ক্রমাগত এক্সপোজার মানুষের শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ তৈরি করে।
এ সময় চিকিৎসার চেয়ে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
>> আরও পড়ুন: শব্দ দূষণ রোধে ব্যবস্থা নিতে ডিএমপিকে হাইকোর্টের চিঠি
পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বেগম ফারহানা মুস্তারীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সোহেল রানা। এছাড়া সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী।
এতে অন্যদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সার্জেন্ট ও ট্রাফিকগণ ছাড়াও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দসহ ডাক্তার, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গাড়ি চালক, সামাজিক ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএইচডি/আইএইচ