টানা কয়েক দিন ধরে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশজুড়ে অব্যাহত আছে হিট অ্যালার্ট। গরমের তীব্রতায় জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। একটু বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে সবাই। তবে আবহাওয়া অফিস আপাতত কোনো স্বস্তির বার্তা দিতে পারছে না। কয়েকটি বিভাগে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানালেও তাপমাত্রা কমার কোনো পূর্বাভাস নেই। বরং আগামীকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) থেকে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও (২৩ এপ্রিল) দেশজুড়ে ছিল গরমের দাপট। দেশের অন্তত সাতটি জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালী জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে বেশকিছু জেলায়। গত দুই সপ্তাহে যা প্রায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই যশোরে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকায় এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৪ নির্দেশনা
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি: নির্দেশনা ও পরামর্শ কতটা মানছেন পথচারীরা?
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, কোনো বিশাল এলাকাজুড়ে যখন তাপপ্রবাহ হয়, তখন এরকম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে, সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরে থাকেন আবহাওয়াবিদরা।
এছাড়া তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটিকে ‘তীব্র তাপপ্রবাহ’ বলা হয়ে থাকে। আর তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায়, তখন তাকে বলা হয় ‘অতি তীব্র’ তাপপ্রবাহ।
তাপপ্রবাহের কারণে গত শুক্রবার প্রথমে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। পরে তা আরও তিন দিন বাড়ানো হয়, যা আগামীকাল বুধবার শেষ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ বছর এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হচ্ছে। ফলে গরম থেকেই যাচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলেই গরম কেটে যাবে।
আবহাওয়াবিদ শাহ আলম বলেন, কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমী বায়ু আসছে না। ফলে বৃষ্টিপাতও হচ্ছে না। এ বছর মৌসুমী বায়ু আসতে দেরি হচ্ছে। কাজেই ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য জুন পর্যন্তও অপেক্ষা করা লাগতে পারে।
জেবি