শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকারের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা ইউনেস্কোর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

Minister Shahab Uddin
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের একটি মুহূর্ত। ছবি: ঢাকা মেইল

সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদের ৪৫তম বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ গত এক দশকে সরকারের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

তিনি বলেছেন, সভায় পরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে কার্যকর সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সুন্দরবন তথা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্পদের সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনের অংশ হিসেবে ছয়টি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (৪ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সফলতা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী এ কথা জানান।

Minister-Shahab-Uddin1

মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, সুন্দরবনের ওপর উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রভাব নিরসনের লক্ষ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এর আলোকে স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রস্তুত করায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। কোভিড-১৯ এর কঠিন সময়ে ন্যাশনাল অয়েল অ্যান্ড কেমিক্যাল স্পিল কন্টিনজেন্সি প্ল্যান ২০২০ গ্রহণ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব প্রশমনে এটির বাস্তবায়নের জন্য কমিটি সভায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। এছাড়াও ভারত ও বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য উন্নয়নে যৌথ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি এই কার্যক্রম আরও জোরদার করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত গাছ কাটা, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সুন্দরবনে মোট আয়তনের ৫৩.৫২ শতাংশ রক্ষিত এলাকা থেকে সকল ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকার বন্যপ্রাণির প্রধান প্রজননকাল জুন, জুলাই এবং আগস্ট- এই তিন মাস সুন্দরবন থেকে সব ধরনের বনজদ্রব্য সংগ্রহ এবং পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও ২০২১ সাল থেকে রাস মেলা বন্ধ করায় সুন্দরবনে এই সময়ে আগের মতো হরিণ শিকারের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং এর পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি।


বিজ্ঞাপন


 

আরও পড়ুন

জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব মানবদেহে, বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

বাঘ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ টাইগার একশন প্লান ২০১৮-২০২৭ প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাঘ জরিপ, বাঘের শিকার বিষয়ক প্রাণি জরিপ, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের বেষ্টনী নির্মাণ, জলোচ্ছ্বাসের সময় বন্যপ্রাণির আশ্রয়ের জন্য মাটির উঁচু টিলা নির্মাণসহ বাঘ সংক্রান্ত অন্যান্য গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

 

মন্ত্রী বলেন, সরকার সুন্দরবনে স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা চালু করেছে। এর মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সফলতা পাওয়া গেছে। জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৯৮ জন অপরাধীকে আটক এবং ১ হাজার ১৬৯টি ট্রলার/জলযান জব্দ করা হয়েছে। সুন্দরবনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণি সুপেয় পানীয় জল সরবরাহের জন্য চারটি নতুন পুকুর খনন এবং ৮৪টি বিদ্যমান পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বন বিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্প, স্টেশন, রেঞ্জে অকেজো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সহ-ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, ইকোলজিক্যাল মনিটরিংয়ের ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত এবং টহলের জন্য জলযান ক্রয় করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ইকোট্যুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে কাজ চলমান।

 

আরও পড়ুন

পরিবেশের মানোন্নয়নে প্রতিযোগিতার সাথে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী

শাহাব উদ্দিন জানান, বর্তমানে সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে সরকার মোট ২৯৫ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রতিবেশ, বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, বিজ্ঞানভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।

 

বিয়াদে অনুষ্ঠিত ৪৫তম সভার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সুন্দরবনের অধিকতর টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে সুন্দরবনের ভূমি ও সামুদ্রিক ব্যবস্থার বাস্তুসংস্থান উন্নয়নে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী আরও গবেষণা পরিচালনা ছাড়াও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। তাই দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকায় ভবিষ্যতের সমস্ত শিল্প কারখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণকালে সুন্দরবনের ওপর প্রভাব মূল্যায়নে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহতভাবে বাড়ানো হচ্ছে।

ডিএইচডি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর