শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দেশে নারী মাদক গ্রহণকারী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশে নারী মাদক গ্রহণকারী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেছেন, সামাজিক স্টিগমার কারণে নারী মাদকনির্ভশীলরা চিকিৎসা গ্রহণে অনাগ্রহী। দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদক গ্রহণকারীর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। নারীদের মাদক গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা সমাজে এক সময় ভয়ংকর রূপ নেবে।

বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে শ্যামলীর ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসায় সফলতার সাথে নয় বছর পেরিয়ে ১০ম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আক্তারুজ্জামান সেলিম, স্বাস্থ্য সেক্টরের সহকারী পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. নায়লা পারভীন, সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী।

এ সময় স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র  ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪৭ জন নারী মাদক নির্ভরশীল, মানসিক ব্যাধি ও আচরণগত বিষয়ক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১২৯ জন রোগী পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণ করে। চিকিৎসা সেবা গ্রহণকরী নারীদের মধ্যে ৩৩% ইয়াবা গ্রহণকারী, ২৮% গাঁজা, ১৬% ঘুমের ওষুধ, ১৫% একই সাথে বিভিন্ন মাদক গ্রহণকারী, ২% মদ, ২% শিরায় মাদক গ্রহণকারী বাকিরা অন্যান্য মাদক গ্রহণকারী। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া ৩৪%, মুড ডিজ্অর্ডার ৩০%, বাইপোলার ১২%, ডিপ্রেশন ১০%, ওসিডি ৬% বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।

এই কেন্দ্রে কেবল নারীদের দ্বারাই নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। যেহেতু মাদকনির্ভরশীলতা একটি অসুস্থতা বিধায় মাদকমুক্তরা পুনরায় মাদক গ্রহণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সমাজের সকল পর্যায় থেকে সচেতনতার কাজ করতে হবে। মাদক গ্রহণের কারণ হিসেবে দেখা যায়, কৌতূহলবশবর্তী হয়ে, মাদক গ্রহণকারী বন্ধুদের চাপ, একাকিত্ব, পরিবারের অন্য সদস্য বা বয়ফ্রেন্ড মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত থাকলে, বিষন্নতা, হতাশাগ্রস্ত হলে, অতিরিক্ত রাগ-জেদ ইত্যাদি কারণে মাদক ব্যবহার করে থাকে। পারিবারিক ও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে নারী নির্ভরশীলদের বিষয়টি আমাদের দেশে এখনো প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে না, ফলে এ সমস্যাটির সমাধান সহজ হয় না। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নারী নির্ভরশীলদের চিকিৎসায় কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের যুগ্ম পরিচালক কে এস এম তারিক, সহকারী পরিচালক মোখেলেছুর রহমানসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মাদকাসক্ত থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি এবং চিকিৎসাধীনদের পরিবারবর্গ।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা আহছানিয়া মিশন থেকে চিকিৎসা গ্রহণকারী ৬৪৭ জন রোগীর মধ্যে ৬৫% চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ণ করেছে। মেয়াদ পূর্ণ করা রোগীদের মধ্যে ৪০% মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করছে এবং নিয়মিত সেন্টারের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছে ২৪% এবং ১৭% রিল্যাপ্স (পুনরায় মাদক গ্রহণ) করেছে, .৯% মৃত্যুবরণ করেছে, বিভিন্ন কারণে ৪% রোগীকে রেফার করা হয়েছে, এর মধ্যে ২% শুধু ১৪ দিনের ডিটক্সিফিকেশন করেছে। ৬৪৭ জনের মধ্যে ৫১% জন সেন্টারের সাথে কোনো ধরনেরর যোগাযোগ রাখেনি এবং ৪% বর্তমানে সেন্টারে চিকিৎসারত আছেন। যারা সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত নেই তাদের অনেকে সুস্থ আছে, বিদেশ গেছে এবং বাকিরা লোক লজ্জার ও সামাজিক স্টিগমার কারণে চিকিৎসা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখে নাই। এছাড়া ৬৪৭ জন রোগীর মধ্য শুধু মাত্র মানসিক সমস্যার করনে চিকিৎসা নিয়েছে ১৩৩ জন নারী।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে এপ্রিল মাসে থেকে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি মাদকাসক্তিজনিত সমস্যা, মানসিক সমস্যা ও আচরণিক সমস্যাগ্রস্ত নারীদের চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে মাদকাসক্ত নারীদের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত চারটি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০০৪ সালে গাজীপুর, ২০১০ সালে যশোর, ২০১৪ সালে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ঢাকা এবং ২০২১ সালে মাসে হেনা আহমেদ মনোযত্ন কেন্দ্র, মুন্সীগঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে।

কেআর/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর