শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অল্প বয়সে গর্ভধারণে এগিয়ে রংপুরের নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

অল্প বয়সে গর্ভধারণে এগিয়ে রংপুরের নারীরা

সরকার ও বিভিন্ন সংস্থাগুলোর নানা প্রচারের পরেও বন্ধ হয়নি বাল্যবিবাহ এবং ১৮ বছরের আগে গর্ভধারণ। এর মধ্যে দেশে অল্প বয়সে গর্ভধারণের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে উত্তরের জেলা রংপুর। জেলাটিতে এর হার শতকরা ৪৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। একইসঙ্গে তুলনামূলক কম আয়ের মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা অধিক বলেও জরিপে উঠে এসেছে।

সম্প্রতি সারাদেশের তিন হাজার ১৭৫ পরিবারের ওপর পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি যৌথভাবে আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ইয়েস বাংলাদেশ এবং ইউথ ফর চেঞ্জ।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (২২ মার্চ) রাজধানীর হোটেলের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সভায় ‘মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফর এনশিওরিং গার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই জরিপটি প্রকাশ করা হয়।

এতে জানানো হয়, জুন ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২ সময়কালে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে জরিপটির উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের ৬৪ জেলায় তিন হাজার ১৭৫ পরিবার, বিশেষ করে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীর অংশগ্রহণে এই জরিপটি পরিচালিত হয়।

জরিপের ফলে দেখা যায়, সর্বনিম্ন আয়ের পরিবারে (মাসিক ২৫০০ টাকা) ১৮ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি। শতকরা বিবেচনায় এই হার ৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশই জানান যে, তারা ১৮ বছর বয়সের আগেই গর্ভধারণ করেন, যার হার রংপুরে সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

অংশগ্রহণকারীদের (১৪-৪৯ বছর বয়সী নারী) ৯৩ দশমিক ৯০ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন এবং ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ তা অনুসরণ করেন। ৬৯ দশমিক ৩০ শতাংশ পরিবারে পুরুষ এবং নারী সদস্য একত্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। এই পদ্ধতি সম্পর্কে তারা তথ্য পান মূলত টেলিভিশন (৫৩ দশমিক ৭০), কমিউনিটি ওয়ার্কার (৩৩ দশমিক ২০ শতাংশ) এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।


বিজ্ঞাপন


যুব উন্নয়ন সংস্থা ইয়েস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ মূল প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, জরিপকৃতদের ১৮ শতাংশ নারীই জানিয়েছেন তারা বিগত ১২ মাসে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ নারীর মাসিক পারিবারিক আয় আড়াই হাজার টাকার কম এবং ৯ দশমিক ৫০ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১০ হাজার টাকার বেশি।  ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশের দাবি তারা পড়াশোনা এবং চাকরি ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। জরিপকৃত ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারে শিশুরা কোনো না কোনোভাবে বাসায় কিংবা ঘরের বাইরে শারীরিক কিংবা মানসিক শাস্তি বা আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।

জরিপের সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, বাল্য বিবাহ ও অল্প বয়সে গর্ভধারণের বিষয়ে আরও একাগ্র প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজের আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মনিটরিং ব্যবস্থা, বাজেট বৃদ্ধি, তথ্যের ঘাটতি পূরণ করার তাগিদ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক বলেন, নারী, বিশেষ করে কন্যা শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই জরিপের ফলাফল সেই কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধশীল করতে সহায়তা করবে। যুবরা পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। তাদের সঙ্গে নিয়েই সবাই মিলে একত্রে কাজ করার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

বিশেষ অতিথি হিসেবে সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতা বলেন, শিশুদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অগ্রগতি ঘটছে। বাংলাদেশ সরকার নারীবান্ধব সমাজব্যবস্থা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। গোটা বিশ্বেই নারীদের প্রতি সহিংসতার চিত্র বিদ্যমান। নারীদের গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন এখনো অনুপস্থিত।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি একটি দেশের নারীদের সার্বিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। নারীদের নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে- এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি, কিন্তু আরও অনেক দূর যেতে হবে। এটা আমাদের সামগ্রিক দায়িত্ব।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (কৈশোরকালীন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য) ডা. মনজুর হোসেন বলেন, কিশোর কিশোরীদের উন্নয়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সবার স্বাস্থ্য উন্নয়ন কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। সব সংস্থার সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাদের একত্রে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে এবং কৈশোরকালীন গর্ভধারণের হার কমাতে আমাদের কাজ করতে হবে। এজন্য জন্ম নিবন্ধনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আয়েশা সিদ্দিকী নার্গিস, গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ) উপপরিচালক (ইনোভেশন) আরিফুল হক মামুন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উপপ্রধান মুস্তাসিম বিল্লাহ, জয়েন্ট চিফ ড. মুনিরা বেগম, ফেরদৌসি বেগম প্রমুখ।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর