শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নারী-পুরুষ সমতা অর্জনে সামাজিক জাগরণ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:১৭ এএম

শেয়ার করুন:

নারী-পুরুষ সমতা অর্জনে সামাজিক জাগরণ জরুরি

দেশে অর্থনৈতিক মুক্তিতে অন্যতম অন্তরায় নারীদের অনগ্রসরতা। দেশকে এগিয়ে নিতে নারী-পুরুষ সমতা প্রয়োজন উল্লেখ করে তা অর্জনে পরিবার থেকে সামাজিক জাগরণ শুরু করা জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজন ও নারী অধিকারকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচার সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন: রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ক  মিডিয়া রাউন্ডটেবিলে আলোচকরা এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব  বলেন, ‘সিডও সমান অধিকারের কথা বলে কিন্তু আমরা পেছনে যাচ্ছি। নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশ এখনও আমরা তৈরি করতে পারিনি। অভিন্ন পারিবারিক আইন হয়নি। সংবিধানে নারীদের অধিকারের কথা বলা হলেও তারা তা ভোগ করতে পারে না। এজন্য  সামাজিক জাগরণ দরকার। দূর করতে হবে পারিবারিক, রাষ্ট্রীয়, আইনি বাধাগুলো। অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাড়াতে হবে।’

একইসঙ্গে সিডও সনদের দুইটি ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহারে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে বলে জানান এই প্রবীণ সাংবাদিক।

কালবেলার স্পেশাল করেসপনডেন্ট আঙ্গুর নাহার মন্টি বলেন, ধারা-২টির জন্য সংরক্ষণ তুলে না নেওয়ায় নারীরা কোথাও কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তা নিয়ে কেস স্টাডি রিপোর্ট দিতে হবে। সনদ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


কালের কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ফাতেমা তুজ জোহরা সিডিও এর দুটি ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সনদ বাস্তবায়ন হলেও সমাজ প্রস্তুত থাকবে না। কাজের আমাদের সমাজকে প্রস্তুত করতে হবে।’

 সংবাদ পত্রিকার নিউজ এডিটর কাজী রফিক বলেন, ‘দুটি ধারার সংরক্ষণের কারণে আমরা পিছিয়ে। এই ধারা দুটি থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হলে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর জীবনের সকল বৈষম্য দূর করার পথ সুগম হবে।  ডিজিটাল মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কঠোর আইন হওয়া দরকার। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যম কর্মীদের সিডও সনদের দুটি ধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।’

আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সিডও সনদ বাস্তবায়নে সমাজ প্রস্তুত করার কাজ সরকারের ও নাগরিকদের। রাষ্ট্র এবং গণমাধ্যমকে সংবেদনশীল হতে হবে। পাশাপাশি নারী সংগঠকদেরও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সিডও সনদের ২ নং ধারা ও ১৬.১ গ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। সাংবাদিকদের জন্য জেন্ডার সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ ধারাবাহিকভাবে চালু রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আর হক মিনু বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সবার আগে অনুমোদন দিলেও এখনও সিডও সনদেও দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করেনি। সিডও বিষয়ে সাংবাদিকদের সচেতন করতে বারবার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সম্পত্তিতে নারী পুরুষের সমান অধিকার দিয়ে উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন করতে, ধর্মান্ধতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলনের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সকল জনপরিসরে ও গণমাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, এখনও গণমাধ্যমে হাইকোর্টে প্রণীত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের রায় কার্যকর হয়নি। গণমাধ্যমকে এজন্য আরও রিপোর্ট করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। আইনের মাধ্যমে সমাজকে প্রস্তুত করতে হবে। 

অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের বিকল্প প্রতিবেদনে সংযুক্ত সুপারিশ উপস্থাপন করেন সংগঠনের প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক মাহফুজা জেসমিন। প্রতিবেদনে সিডও সনদের ধারা ২ এবং ১৬,১.গ এর উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়। পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে, বৈষম্য মূলক আইন, প্রথাগত আচার, রীতিনীতি, রাজনীতি ও জনপরিসরে নারীর সমতাপূর্ণ অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর অর্থনৈতিক কর্মসংস্থান এবং সনদ বাস্তবায়নে মিডিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেক বেশ কয়েকটি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। 

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আজ নারীর যে অগ্রগতি হচ্ছে তা প্রতীকী। এই প্রতীকী অর্জনকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে না পারলে প্রকৃত উন্নয়ন হবে না। সমাজের পশ্চাৎপদ শক্তি একটা বড় শঙ্কার জায়গা। বিশ্বব্যাপী সুস্থ রাজনীতির ধারা সংকুচিত হয়ে আসছে। প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয় অগ্রাধিকারের জায়গায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যে জোরালো ভূমিকা আছে তা বলতেই হবে। প্রতিটি ইস্যু ধরে সামনে নিয়ে আসার জন্য গণমাধ্যমকে দৃষ্টি দিতে হবে। গণমাধ্যমের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও মত প্রকাশে সরব। এখানে নারীর প্রতি নেতিবাচক প্রচার বন্ধে করণীয় বিষয়ে নারী আন্দোলনকে ভাবতে হবে।’

এ সময় তিনি সমাজ, রাষ্ট্র, গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর জীবনে সকাল প্রকার বৈষম্য নিরসনে সিডও সনদ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের একটা বাধ্যবাধকতা আছে। সরকার ২০১৫ সালে জাতিসংঘ সিডও কমিটির কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর এবারের নবম প্রতিবেদন জমা দেবে। একইসঙ্গে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করে সে বিষয়ে নাগরিক সমাজের বক্তব্য নিয়ে একটি বিকল্প প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গণমাধ্যম ধারাবাহিক ভূমিকা রাখছে। সিডও সনদ বাস্তবায়নেও গণমাধ্যম কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা আলোচনার জন্য আজকে মিডিয়া রাউন্ডটেবিলের আয়োজন করা হয়েছে।

এমএইচ/এমএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর