বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দেশের এক কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টিতে ভুগছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৭:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশের এক কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টিতে ভুগছেন

দেশে প্রজননক্ষম ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ৫০ লাখ নারীর ওজন কম এবং এক কোটি ২০ লাখ নারী স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন। গত এক দশকে বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ডেটাসেটের মাধ্যমিক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নারীদের অপুষ্টি দ্বৈত বোঝা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


এক দশকের তথ্য বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, ২০০৭-২০১৭ সালের মধ্যে দেশে মানব উন্নয়নের বিভিন্ন মাত্রাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের ১৫ থেকে ৪৯ বয়সী নারীদের মধ্যে পুষ্টির স্বল্পতার হার ৩০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ অপুষ্টি লক্ষণীয় মাত্রায় কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে একই সময়ে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার প্রবণতাও ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে নারীদের মধ্যে অপুষ্টি উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও তাদের মধ্যে সুপুষ্টির হার আগের মতোই রয়েছে। এ হার ২০০৭ সালে ৫৮ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ সালে ৫৬ শতাংশ হয়েছে। এ হার সংখ্যায় প্রকাশ করলে, বাংলাদেশে ১৫-৪৯ বছরের আনুমানিক ১ কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ৫০ লক্ষ নারীর ওজন কম এবং ১ কোটি ২০ লাখ নারী স্থূলকায়। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ৪৬ শতাংশ বিবাহিত প্রজননক্ষম নারী স্থুলকায় হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩৪ লাখ শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে প্রায় ৯ লাখ শিশুর জন্ম হয় স্থূলকায় নারীর গর্ভে এবং ৫ লাখ শিশুর জন্ম হয় কম ওজনের নারীর গর্ভে। বর্তমান এই অপুষ্টির অবস্থা চলতে থাকলে, গর্ভধারণ এবং শিশুর জন্ম এই দুটিই স্থুলকায় নারীর গর্ভ থেকে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এই দুই ধরণের অপুষ্টিই মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। কম ওজনের গর্ভবতী নারীর রক্তশুন্যতা, প্রসবপূর্ব বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ, অকালে ঝিল্লি ফেটে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে।

himu-2


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, মা যদি স্থুলকায় হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা, যেমন গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, সিজারিয়ান শিশুর জন্ম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যায় যেমন, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করানোর হার কম হওয়া, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালও কমে যাওয়ার প্রবণতা দেয়। এই সবগুলো কারণই নবজাতকের বেঁচে থাকার, বেড়ে ওঠার এবং বড় হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ইউএসএআইডি-র সিনিয়র রিসার্চ মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লিনিং অ্যাডভাইজার ড. কান্তা জামিল বলেন,‘আমরা দেখছি যে পুষ্টি নীতিতে একটি বিচ্যুতি রয়েছে। তবে আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে যে, প্রজননক্ষম বয়সের বিবাহিত নারীদের মধ্যে কম ওজন থেকে অতিরিক্ত ওজনের ক্রসওভারটি-২০১২ সালের দিকে শুরু হয়েছিল এবং ২০১৭-১৮ বিডিএইচএস-এ এই ব্যবধানটি আরও দৃশ্যমান। এখন আমাদের অবশ্যই পরবর্তী কর্মসূচির পরিকল্পনা করতে হবে। এ সংক্রান্ত নতুন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনে নীতিগুলো সংশোধন করতে হবে।’

নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ বলেন, ‘অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার প্রভাব একটি দূরবর্তী সমস্যা নয়, যা শুধুমাত্র বয়স্ক জনগোষ্ঠির ক্ষতি করবে। এটি আমাদের মা এবং শিশুদের প্রভাবিত করছে এবং একটি আন্তঃপ্রজন্ম চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। পুষ্টি একটি অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার জন্য বহু খাতের সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তাই আমাদের এর ওপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।’

এমএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর