শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

এমন মায়ের সন্তান হওয়া গর্বের

সাজেদা সুইটি
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২২, ০৭:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

এমন মায়ের সন্তান হওয়া গর্বের

মেট্রিক পাস করে সবে চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ কলেজে ভর্তি হয়েছেন খালেদা খানম। রেলওয়ে কর্মকর্তা বাবার ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনিই বড়। নানা দিক থেকে বিয়ের প্রস্তাবে চিন্তা বাড়ে মা দিল আফরোজের। 

চিকিৎসক এক পাত্র পছন্দ হয়। মেয়ের বাবাকেও জোরাজুরিতে নিমরাজি করানো গেল। আর খালেদার মত? বিয়েতে মেয়ের মত জানার রেওয়াজ তখনও শুরু হয়নি।


বিজ্ঞাপন


বিয়ে হয়ে যায় খালেদার। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হলেও অসুস্থ শাশুড়ির মতের প্রাধাণ্যে ফেনীতে শ্বশুরের গ্রামের বাড়িতেই তাঁর দাম্পত্য শুরু। পরে যদিও শাশুড়িসহ স্বামীর সঙ্গে মফস্বল শহরগুলোতে কেটেছে জীবনের বড় অংশ।

ঘরের আদরের বড় দুলালী, কখনও রান্নাঘরে যেতে হয়নি, অথচ বিয়ের পর লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্না শেখেন খালেদা খানম। শহুরে মেয়ে, ঘরালু কাজ পারে না বলে শ্বশুরবাড়িতে আসা মেহমানদের বিস্ময়মাখা নানা মন্তব্যতো শুনতেই হচ্ছিল। কিন্তু খালেদা যেন মাটির দলা, দ্রুত সময়ে একদম নতুন ছাঁচে গড়লেন নিজেকে।

সংসারে নিপুনা হয়ে ওঠেন, হাজারটা দায়িত্ব, সন্তান, ঘরভরা মেহমান সামলান। সবার মাঝে ভারী ‘লক্ষ্মী বৌ’ বলে পরিচিতি তাঁর। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হতো তার মায়া-মমতার। কেউ কেউ নিজের পুত্রবধূকে নিয়ে আসতেন, খালেদা খানমকে দেখে যেন শেখে।

কিন্তু এতকিছুর মাঝে বিসর্জন হয়ে গেছে খালেদার নিজের পড়ালেখা, গান-নাচ, আরো নানা শখ-আহ্লাদ। কাছেই সরকারি স্কুল, সেখানে শিক্ষকতার সুযোগটাও ঠেলতে হলো সংসারের চাপে। 


বিজ্ঞাপন


এভাবে নিজেরটুকু বিসর্জন দিতে হলেও চার সন্তানের চাহিদার কমতি যেন না পড়ে সেই চেষ্টা করে গেছেন প্রাণপণে। এ যুগের মতো একক সংসার হলে বেশ ভালোভাবেই চলতে পারতেন স্বামীর আয়ে। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন, অসুস্থ-অভাবী, দূরসম্পর্কের আত্মীয়-পরিজনসহ... সবাইকে নিয়েই বাঁচতে ভালো লাগে তাঁর।

অনেক বিষয়ে ছাড় দিলেও চার সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করা, ভালো মানুষ হিসেবে গড়ার চেষ্টায় কোনো ছাড় দেননি এই মা। নিজের সাজ-পোশাক, শাড়ি-গয়নার শখ জলাঞ্জলি দিয়ে সন্তানদের ছোট ছোট চাহিদা পূরণ করে গেছেন।

আজ তাঁর ছেলেমেয়েরা ব্যক্তিগত ও পেশা জীবনে মা-বাবার সেই দায়িত্ববোধ, ত্যাগ-বিসর্জন, মানুষের প্রতি মমতা আর সাদামাটা জীবনযাপনের শিক্ষাটা চর্চা করছেন।

এমন মায়ের সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত। তার আজীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কষ্টের স্বীকৃতি হিসেবে ‘রত্নগর্ভা’ খেতাবটা পেয়েছেন আমার মা। এই সম্মান ও স্বীকৃতি তাঁকে আনন্দিত করেছে। অন্য মায়েদেরও উৎসাহ বাড়াবে। সন্তানরাও যেন বোঝেন- মায়ের কষ্ট সফল করা ও সুস্বীকৃতির দায়িত্ব তাদেরই।

লেখক: সাংবাদিক

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর