প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। দিয়েছে আরাম আয়েশ। প্রযুক্তির অত্যাধিক ব্যবহারে ফলে ক্ষতিও হচ্ছে। এই যেমন স্মার্টফোনের কথাই ধরা যাক, ফোন যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু মানুষ এখন এতটাই ফোনের ওপর নির্ভরশীল যে, সারাক্ষণ চোখের সামনের ফোনের ডিসপ্লে জ্বলে থাকে। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণও বটে!
অন্যদিকে পৃথিবীর গরম বাড়ার কারণে ঘরে ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি শোভা পাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের স্বামর্থ্য আছে তারা অনায়াসেই বাসা-বাড়িতে বসিয়ে নিচ্ছেন এই যন্ত্র। অনেকেই এসি ছাড়া চলতেই পারেন না। তাদের ঘরে-বাইরে, শপিং মলে, গাড়িতেও এসি লাগে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সারাক্ষণ বা দীর্ঘক্ষণ এসির মধ্যে থাকলে উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতিই হয় বেশি।
বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে ঘরের তাপমাত্রার এত পার্থক্য যে, শরীর তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারে না। ফলে বুকে সর্দি বসে শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার মতো সমস্যা হতে পারে।
অফিস থেকে বাড়ি, বাড়ি থেকে অফিস। মাঝে যাতায়াতের সময়টুকু বাদ দিলে দিনের বেশির ভাগ সময়েই থাকতে হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। অনেকে তো এসি গাড়িতেও চড়েন।
আর দিন দিন যে হারে গরমের দাপট বাড়ছে, তাতে এসি ছাড়া থাকাও দায়। তবে সারা কষণ এই এসিতে থাকার অভ্যাস যে আদতে শরীরের জন্য ভালো নয়, তা জানেন অনেকেই।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইরের হাওয়া-বাতাসের সঙ্গে একেবারে কোনও রকম সম্পর্ক না থাকলে ‘সিক বিল্ডিং সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে একই মত।
তারা বলছেন, বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে ঘরের তাপমাত্রার পার্থক্য এতটাই যে, শরীর তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারে না। ফলে বুকে সর্দি বসে শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার মতো সমস্যা হতে পারে। এমনকি সেখান থেকে শ্বাসনালিতে সংক্রমণ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
সারাক্ষণ এসিতে থাকলে যে ক্ষতি
দিনের বেশির ভাগ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকার ফলে যে যে শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
‘ড্রাই আইজ’
সারাক্ষণ এসি চললে শরীর থেকে পানি শুকিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেন, চোখ ভালো রাখতে গেলে চোখের আর্দ্রতা বজায় থাকা দরকার। দীর্ঘ ক্ষণ এসিতে থাকলে চোখও শুষ্ক হয়ে পড়ে। চোখে নানা রকম অস্বস্তি হতে থাকে। এমনকি দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
মাথা ব্যথা
বেশিক্ষণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকলে কিন্তু মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। ‘অ্যানালস অব ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব নিউরোলজি’তে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, যারা দিনের বেশির ভাগ সময়ে অস্বাস্থ্যকর বাতাসযুক্ত পরিবেশে থাকেন তাঁদের ১৬ শতাংশ মানুষ প্রতি মাসে ১ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত এমন মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন। তার মধ্যে ৮ শতাংশের প্রায় রোজই কোনও না কোনও সময় মাথাব্যথা বা মাথাধরার মতো সমস্যা হয়।
অ্যালার্জি
বদ্ধ ঘরের মধ্যে এসির মাধ্যমে আবর্তিত হতে থাকা দূষিত বায়ু অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী জীবাণুর আঁতুড়ঘর। বাতাসে থাকা অ্যালার্জেন শরীরে প্রবেশ করলে ‘হিস্টামিন’কে উদ্দীপিত করে তোলে। ফলে চোখ, নাক এবং গলায় অস্বস্তি হতে থাকে। কারও ক্ষেত্রে অনবরত হাঁচি, নাক থেকে পানি পড়ার মতো লক্ষণও দেখা যায়।
শরীরে পানির ঘাটতি হয়
গরমকালে এমনিতেই শরীরে পানির ঘাটতি থাকে। এসি ঘরে থেকে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে। বাইরে বের হলে অতিরিক্ত ঘাম এবং ঘরে থাকা এসি, শরীরকে পানিশূন্য করে দেয়। যার ফলে ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্লান্তি
অনেকেই বলেন, সারা ক্ষণ এসিতে বসে কাজ করলে নাকি ক্লান্তি কাটতে চায় না মোটে। ফলে কাজের গতিও শ্লথ হয়ে পড়ে।
তাই প্রয়োজন অনুসারে এসি চালান। যতটুকু দরকার ততটুকুই। এসিতে সারাক্ষণ থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন না।
এজেড