বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ‘ওয়ার্মহোলে’র মডেল তৈরি করেছেন

ফাহিমা তুজ জোহরা
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৪৩ এএম

শেয়ার করুন:

বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ‘ওয়ার্মহোলে’র মডেল তৈরি করেছেন

যারা সায়েন্স ফিকশন মুভি দেখেন, ‘ওয়ার্মহোল টার্মটির’ কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই? ওয়ার্মহোল এমন এক সেতু, যা কি না আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের মাঝে সংযোগ হিসেবে কাজ করে। এক বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে এও বলা আছে, কেউ যদি দুটি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরকে যুক্ত করতে পারে, সে নিজেই একটি ওয়ার্মহোল তৈরি করতে পারবেন।

যদিও এখন পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানীরা ওয়ার্মহোল সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানতে পারে নি। তারপরও তারা এতটুকু জানিয়েছেন, এই গহ্বরের অস্তিস্ব আছে। পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সমীকরণ এবং নানা তত্ত্ব দিয়ে ওয়ার্মহোলের অস্তিস্ব প্রমাণ করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।


বিজ্ঞাপন


ওয়ার্মহোল কেমন হতে পারে, সেটি জানার জন্য ক্যালটেক, হার্ভার্ড, এমআইটি, ফার্মিল্যাব এবং গুগলের  গবেষকরা ছোট্ট একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। গবেষকরা একই প্রসেসরে বসে থাকা দুটি কোয়ান্টাম সিস্টেমের মধ্যে একটি ছোট 'ওয়ার্মহোল' প্রভাব তৈরি করেছেন। এমন কি তারা একটি সংকেত পাঠাতেও সক্ষম হন।

warmholeকোয়ান্টাম বলছে, এটি ক্যালটেক-গুগল টিম একটি ওয়ার্মহোল টেলিপোর্টেশন স্থাপনের চেষ্টা করেছিল।

চলতি সপ্তাহে নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে যে ওয়ার্মহোল তৈরি করেছিল, সেখানে মূলত ওয়ার্মহোলের পরিচিত গতিকে অণুকরণ করা হয়।

পদার্থবিদ্যায় যেকোনো মৌলের ধনাত্মক-ঋণাত্মক শক্তি, মধ্যাকর্ষণ শক্তি বা কণার আচরণ বিবেচনা হয়, ঠিক তেমনি কম্পিউটার সিমুলেশনেও এই বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবেচনায় এটি একটি ক্ষুদ্র ওয়ার্মহোলের ন্যায় আচরণ করে।     


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে দলটি জানায়, মহাবিশ্বের মৌলিক সমস্যাগুলো এই পরীক্ষাগারে অধ্যয়ন করার অন্যতম একটি উপায়।  

ক্যালটেকের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মারিয়া স্পিরোপুলু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, 'আমরা একটি কোয়ান্টাম সিস্টেম খুঁজে পেয়েছি যা একটি মহাকর্ষীয় ওয়ার্মহোলের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদর্শন করে। তবে এটি আজকের কোয়ান্টাম হার্ডওয়্যারে প্রয়োগ করার জন্য যথেষ্ট ছোট।'

‘এই কাজটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ পদার্থবিদ্যা পরীক্ষা করার একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।' যোগ করেন মারিয়া।

warm holeমনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ আসলে কী? সহজ ভাষায়, এটি এমন একটি মাধ্যাকর্ষণ বল, যেটি পদার্থ ও শক্তির আচরণ বর্ণনা করে। আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরমাণু এবং কণাগুলোর আচরণ বর্ণনা করে। এই দুইটি মিলে মহাবিশ্বে কীভাবে এরা পাশাপাশি সহাবস্থান করছে, তার ধারণা প্রদান করে। যদিও এখন পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানীরা কোনো সমীকরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের এই গ্রাভিটি ব্যাখ্যা করতে পারেন নি।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যাকর্ষণ এবং ওয়ার্মহোলের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আসছেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালে তারা কোয়ান্টাম এনগেলমেন্ট ঘটনার কারণে এক যোগসূত্রের সন্ধান পান। এরপর ২০১৭ সালে একদল বিজ্ঞানী পরামর্শ দেন, ট্র্যাভার্সেবল ওয়ার্মহোলগুলো কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনের মতো কাজ করে। যেখানে এই এনগেলমেন্ট নীতির ব্যবহার করা হয়।

সবশেষ পরীক্ষায়, গুগলের সাইকামোর কোয়ান্টাম প্রসেসর ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক দলটি ওয়ার্মহোল সিস্টেমের একটি সরল সংস্করণ সেট আপ করতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করেন, যা যে কোনো সময় এনকোড করা যায়।

warmholeস্পিরোপুলু একে 'কোয়ান্টাম আর্কিটেকচার এবং এটি মহাকর্ষীয় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করবে' বলে ব্যাখ্যা দেন । পরীক্ষার সময়, তারা দেখিয়েছিলেন, অরবিট আকারে তথ্য একটি সিস্টেমের মাধ্যমে পাঠানো যেতে পারে এবং সঠিক ক্রমে সেটি অন্য সিস্টেমে পুনরায় আবির্ভূত হতে পারে, এর আচরণ অনেকটাই ওয়ার্মহোলের মতো।

পাঠকের মনে অবশ্যই প্রশ্ন জাগে, গবেষকরা কীভাবে মহাবিশ্বকে বাক্সবন্দি করতে প্রবেন তাও আবার নিজস্ব নিয়মে? এক ব্লগ পোস্টে গবেষকরা জানান, বিজ্ঞানীরা একটি হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স তৈরি করেছে যেখানে তারা ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত কিউবিটগুলোর নির্দিষ্ট অংশের সঙ্গে মহাকাশে বস্তুগুলোর সংযোগ ঘটাতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্যারামিটারগুলোকে নির্ধারিত করার মাধ্যমে আমরা একে একটি মডেল আকারে ব্যাখ্যা করতে পারি, যেখানে আমরা ব্ল্যাক হোলগুলো দেখতে পারি। শুধু তাই নয়, আমরা দুটি সংযুক্ত ব্ল্যাক হোলকেও দেখতে পারি, যেটি মূলত ওয়ার্মহোল নামে পরিচিত।

এখানে গবেষকরা নিখুঁত কোয়ান্টাম সিস্টেম খুঁজে পেতে মেশিন লার্নিং পদ্ধতিকে ব্যবহার করেছেন। এটি মূলত মহাকর্ষীয় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করবে এবং শক্তির গতিশীলতা বজায় রাখবে। এছাড়াও, এই গবেষণা করতে তাদের ফার্মিয়ন নামক এক কণারও প্রয়োজন হয়েছিল।   

warmholeসংবাদ সম্মেলনে দলটি জানিয়েছে, কোয়ান্টাম চিপ দিয়ে যেমন হলোগ্রাম মহাবিশ্ব পরিচালিত হয়, ঠিক তেমনি একই নিয়মে আমাদের মহাবিশ্বও পরিচালিত হয়। আমরা ঠিক এমনটিরই প্রমাণ পেয়েছি।

গবেষকরা গুগল ব্লগে লেখেন, গ্র্যাভিটি হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্বগুলো ব্যাখা করার শুধু একটি মাত্র উদাহরণ।

পপুলার সায়েন্স থেকে অনুদিত

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর