বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিশ্বব্যাপী মেমোরি সংকট: ২০২৬ সালে স্মার্টফোনের দাম বাড়তে পারে

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

বিশ্বব্যাপী মেমোরি সংকট: ২০২৬ সালে স্মার্টফোনের দাম বাড়তে পারে
বিশ্বব্যাপী মেমোরি সংকট: ২০২৬ সালে স্মার্টফোনের দাম বাড়তে পারে

গত এক দশকে স্মার্টফোন বিলাসপণ্য থেকে দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। এটি কেবল যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই; বরং মানুষের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে, অফিসের কাজ করা, বিভিন্ন সেবা গ্রহণ এবং অন্যান্য কাজকর্মে স্মার্টফোনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গভীরভাবে একীভূত হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন শিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ, বিনোদন এবং ই-কমার্স পর্যন্ত, স্মার্টফোন এখন সব বয়স ও আয়ের মানুষের দৈনন্দিন রুটিনের কেন্দ্রীয় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর দামের বিষয়ে ভোক্তাদের প্রত্যাশাও পরিবর্তিত হয়েছে। ক্রেতারা এখন এমন ডিভাইস চান যা সাশ্রয়ী, টেকসই এবং দীর্ঘ সময় ধরে ভালো পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম। বাংলাদেশ মতো মূল্য-সংবেদনশীল বাজারে ভোক্তারা “মূল্যের বিনিময়ে সর্বোচ্চ সুবিধা”র ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তারা ফিচার ও দামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রায়ই স্মার্টফোনকে বিলাসিতা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনীয়তা হিসেবে দেখেন। 


বিজ্ঞাপন


smarphones-1500-800

আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন শিল্প ২০২৬ সালে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে, যেখানে হ্যান্ডসেটের দাম বাড়বে এবং শিপমেন্টের পরিমাণ কমতে পারে। প্রধান কারণ হলো উপাদানের খরচ বৃদ্ধি, বিশেষ করে DRAM এবং NAND ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপের দাম।

কাউন্টার পয়েন্টসহ (রিজার্স অর্গানাইজেশন) ইন্ডাস্ট্রি বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে ২০২৬ সালে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের শিপমেন্ট প্রায় ২.১ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। একই সময়ে, গড় বিক্রয়মূল্য প্রায় ৬.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে খুচরা বাজারেও স্মার্টফোনের দাম ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। 

DRAM এবং NAND ফ্ল্যাশ চিপের দাম বৃদ্ধিই বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মেমোরি চিপ উৎপাদনের একটি বড় অংশ এখন AI ডেটা সেন্টার এবং ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ব্যবহার হচ্ছে, যেখানে চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ভোক্তাদের স্মার্টফোনের জন্য মেমোরি সরবরাহ সীমিত হয়ে গেছে এবং স্মার্টফোনের উৎপাদন খরচ বাড়াচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


মেমোরি চাহিদা এবং দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্মার্টফোন উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব বাজারের বিভিন্ন সেগমেন্টে ভিন্নভাবে পড়বে। এন্ট্রি লেভেল বা কম দামের স্মার্টফোনগুলো সবচেয়ে বেশি চাপের মুখোমুখি হবে। ইন্ডাস্ট্রি বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ২০২৫ থেকে ২০০ ইএস ডলারের নিচের স্মার্টফোনের উপকরণের খরচ ২০–৩০ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০২৬ সালে আরও ১০–১৫ শতাংশ বৃদ্ধি অনুমান করা হচ্ছে। 

মিড লেভেলর স্মার্টফোনের খরচও ২০–৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং প্রিমিয়াম বা হাই-এন্ডের ডিভাইসগুলো তুলনামূলকভাবে এই মূল্য বৃদ্ধির চাপকে ধারণ করতে পারলেও, এগুলোর উৎপাদন খরচও ২০–২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। 

মেমোরি সংকট সব নির্মাতার জন্য সমানভাবে প্রভাব ফেলে না। বড় ব্র্যান্ড যেমন অ্যাপেল ও স্যামসাং তাদের বর্ধিত অ্যাভারেজ সেলিং প্রাইসের কারণে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে থাকবে, কিন্তু শাওমিসহ অন্যান্য চাইনিজ ব্র্যান্ড যারা স্বল্প মার্জিনের ব্যাবসা পরিচালনা করে, এই দাম বৃদ্ধি এদের উপরই বেশি চাপে ফেলবে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো মূল্য-সংবেদনশীল বাজারে।

gettyimages-2239832483

বাংলাদেশের মতো বাজারে, যেখানে স্মার্টফোনের ক্রয় সিদ্ধান্ত মূলত দাম ও সাশ্রয়ীতা দ্বারা প্রভাবিত হয়, দাম বৃদ্ধির প্রভাব বেশি অনুভূত হবে। অধিকাংশ ক্রেতা বাজেট ও মধ্য-শ্রেণির স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যেখানে মূল্যের মান প্রিমিয়াম ফিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দাম বাড়লে গ্রাহকরা হয়তো হ্যান্ডসেটের ব্যবহারকাল বাড়াবে, আপগ্রেড বিলম্ব করবে বা কম দামের মডেল বেছে নেবে। এটি বাজারের বৃদ্ধিকে ধীর করবে, স্মার্টফোন বিক্রয়কে হ্রাস করবে এবং নির্মাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াবে।

আরও পড়ুন: স্ন্যাপড্রাগন নাকি মিডিয়াটেক: ফোনের জন্য সেরা প্রসেসর কোনটি?

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, AI-চালিত চাহিদার কারণে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন চলমান থাকবে, যার ফলে স্মার্টফোনের দামের চাপ ২০২৬ সালের পরও থাকতে পারে।

যদি বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের দাম বৃদ্ধি পায়, বাংলাদেশেও দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশিরভাগ স্মার্টফোন এবং উপাদান আনা হয়, তাই বিশ্বব্যাপী দাম বৃদ্ধির প্রভাব দেশীয় মূল্যে পড়বে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা বুঝতে পারবে যে দাম বৃদ্ধির কারণ গ্লোবাল খরচ বৃদ্ধির কারণে, ফলে বাংলাদেশেও সময়ের সাথে ধীরে ধীরে দাম বাড়ানো সম্ভব হতে পারে।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর