শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইন্টারনেট কি শেষের পথে?

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ইন্টারনেট কি শেষের পথে?
ফুরিয়ে আসছে ইন্টারনেট

ইন্টারনেট—যেন এক অসীম জগৎ। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ তথ্য আদান-প্রদান করছে, ভিডিও দেখছে, ছবি শেয়ার করছে, ক্লাউডে ডেটা রাখছে। সবকিছু এত বিশাল ও সহজলভ্য যে, আমাদের অনেকের কাছেই ইন্টারনেটকে অসীম মনে হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এখন সতর্ক করছেন—এই অসীম মনে হওয়া ইন্টারনেট আসলে সীমিত, এবং একে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন এক ভয়াবহ শব্দ: ‘ডেটা অ্যাপোক্যালিপ্স’ বা ইন্টারনেটের শেষের দিন।

ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা: আইপি অ্যাড্রেস সংকট


বিজ্ঞাপন


ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইস—কম্পিউটার, ফোন, সার্ভার বা রাউটার—এর জন্য একটি ইউনিক আইপি (IP) অ্যাড্রেস প্রয়োজন। পুরনো IPv4 সিস্টেমে এই অ্যাড্রেসের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন, যা এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

এই সীমাবদ্ধতা কাটাতে নতুন প্রজন্মের IPv6 চালু করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে প্রায় ৩৪০ আনডিসিলিয়ন (৩৪০ এর পরে ৩৬টা শূন্য) অ্যাড্রেস! অর্থাৎ, পৃথিবীর প্রতিটি বালুকণার চেয়েও বেশি।

তবে সমস্যা হলো—সব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এখনো IPv6-এ স্থানান্তরিত হয়নি। অনেক পুরনো সার্ভার, নেটওয়ার্ক ডিভাইস এবং সিস্টেম এখনো পুরনো IPv4-এই চলছে। ফলে বৈশ্বিক সংযোগে একটি প্রযুক্তিগত সীমা তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে নতুন ডিভাইস সংযুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ডেটা স্টোরেজের সঙ্কট: তথ্যের পাহাড় জমছে


বিজ্ঞাপন


প্রতিদিন পৃথিবীতে প্রায় ৩২৮.৭৭ মিলিয়ন টেরাবাইট ডেটা তৈরি হচ্ছে—ভিডিও, ছবি, অডিও, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ই-মেইল, অনলাইন ট্রানজ্যাকশনসহ নানা কিছুতে।

এই বিশাল ডেটা সঞ্চয় করছে গুগল, মেটা, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল ডেটা সেন্টারগুলো। কিন্তু সমস্যা হলো—এই ডেটা সেন্টারগুলো পরিচালনায় লাগে বিপুল জায়গা, ঠান্ডা রাখার জন্য শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম, আর অগণিত বিদ্যুৎ।

বর্তমানে বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রায় ২–৩% ডেটা সেন্টারগুলোর পেছনে খরচ হয়, এবং এই হার দ্রুত বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, শক্তি সংকট ও পরিবেশগত প্রভাব মিলিয়ে এই প্রবণতা এক সময় অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

net

ডেটা অ্যাপোক্যালিপ্স: ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত

বিশেষজ্ঞরা এই সম্ভাবনাকে বলছেন ‘ডেটা অ্যাপোক্যালিপ্স’— এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে পৃথিবী এত বেশি তথ্য উৎপাদন করবে যে, সেই ডেটা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা আর থাকবে না। ফলে হয়ত পুরনো ডেটা মুছে ফেলতে বাধ্য হতে হবে, ইন্টারনেটের কিছু অংশ অকার্যকর হয়ে পড়বে, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধও হতে পারে।

তবে আশাও আছে

তবে প্রযুক্তিবিদরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। ডেটা সংকট রোধে চলছে নানা উদ্যোগ—

কোয়ান্টাম স্টোরেজ, ডিএনএ ডেটা স্টোরেজ, ও অপটিক্যাল ফাইবার মেমোরির মতো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি ইতোমধ্যে পরীক্ষাধীন।

পাশাপাশি, IPv6-এর বিশ্বব্যাপী রূপায়ণ ইন্টারনেটের আয়ু আরও শতাব্দী বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ, ইন্টারনেটের “শেষ” এখনও অনেক দূরে—তবে প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।

ইন্টারনেটকে আমরা প্রায় চিরস্থায়ী ধরে নিয়েছি, কিন্তু এটি একেবারে অমর নয়। প্রযুক্তির সীমা, শক্তির অভাব ও ডেটার অতিভার—সব মিলিয়ে ইন্টারনেট এক সময় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়েও নামতে পারে।

আরও পড়ুন: কোন দেশে ইন্টারনেট খরচ কত?

তবে মানবজাতির উদ্ভাবনী শক্তি যেভাবে এগোচ্ছে, আশা করা যায়—ইন্টারনেট শেষ নয়, বরং এক নতুন যুগের সূচনা ঘটাবে।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর