শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কেন হয়

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২৫, ০২:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

রান্নাঘর থেকে শুরু করে দোকান, হোটেল কিংবা বাসাবাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার (LPG Cylinder) ব্যবহার খুবই সাধারণ বিষয়। তবে কখনো কখনো এই সিলিন্ডারই হয়ে ওঠে ভয়াবহ বিস্ফোরণের উৎস, যার ফলে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ হয়ে মৃত্যু, ঘরবাড়ি ধ্বংস এমনকি প্রতিবেশীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। অথচ একটু সতর্ক থাকলেই এসব দুর্ঘটনা সহজেই এড়ানো সম্ভব।

চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্যাস সিলিন্ডার কেন বিস্ফোরণ ঘটে, এর কারণগুলো কী এবং কীভাবে আমরা নিরাপদ থাকতে পারি।


বিজ্ঞাপন


গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের প্রধান কারণসমূহ:

১. গ্যাস লিকেজ (Leakage)

সবচেয়ে সাধারণ এবং ভয়ঙ্কর কারণ। সিলিন্ডারের মুখ, রেগুলেটর বা পাইপ লিক হলে গ্যাস ধীরে ধীরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসে মিশে বিস্ফোরণ ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে ওঠে।

GAS3


বিজ্ঞাপন


বিপজ্জনক ভুল:

– গ্যাসের গন্ধ উপেক্ষা করা

– ইলেকট্রিক সুইচ/লাইট চালু করা গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার পর

২. ভুল রেগুলেটর ব্যবহার

ভেজাল বা মানহীন রেগুলেটর সঠিকভাবে সিলিন্ডারের মুখে আটকায় না, যার ফলে লিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

৩. জীর্ণ বা পুরনো পাইপ

অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস পাইপ পরিবর্তন করেন না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাইপ ফেটে যায়, নরম হয়ে যায় বা ফেটে গিয়ে লিক করে।

GAS2.

৪. সরাসরি আগুন বা স্পার্কের সংস্পর্শে আসা

যদি গ্যাস লিক হয়ে ঘরে জমে থাকে, তখন একটিমাত্র আগুনের ফুলকি বা বৈদ্যুতিক সুইচ চাপলেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

৫. সিলিন্ডার অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া

ধরুন সিলিন্ডার রোদে রাখা বা রান্নার চুলার খুব কাছাকাছি রাখা হলো—তাহলে সিলিন্ডারের ভেতরে চাপ বেড়ে গিয়ে তা ফেটে যেতে পারে।

৬. ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার

অনেক সময় বাজারে ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয়। এসব সিলিন্ডারে সেফটি ভালভ ঠিকমতো কাজ করে না, ফলে বিপদ ডেকে আনে।

৭. ভেতরে গ্যাস জমে থাকা অবস্থায় ঝাঁকানো বা ধাক্কা খাওয়া

অনেকেই সিলিন্ডার জায়গা থেকে সরানোর সময় ঝাঁকিয়ে দেন বা টান দেন। এতে লিকের জায়গা থেকে গ্যাস বেরিয়ে গিয়ে স্পার্ক পেলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

GAS

কীভাবে নিরাপদ থাকবেন? গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে করণীয়:

১. গ্যাসের গন্ধ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিন

লাইট বা সুইচ চালু বা বন্ধ করবেন না

জানালা-দরজা খুলে দিন

মূল গ্যাস রেগুলেটর বন্ধ করুন

পরিবারের সবাইকে দ্রুত বাইরে নিয়ে যান

২. রেগুলার চেকআপ করুন

রেগুলেটর, পাইপ ও চুলার সংযোগ মাসে অন্তত একবার পরীক্ষা করুন

১–২ বছর পর পর পাইপ পরিবর্তন করুন

ফাটা বা নরম পাইপ দেখলেই বদলান

৩. সিলিন্ডার স্থাপন করুন সঠিকভাবে

রান্নার জায়গায় রাখুন, রোদে বা আগুনের কাছে নয়

সোজা অবস্থায় রাখুন, কখনোই উপুড় করে রাখবেন না

ভালো ব্র্যান্ডের এবং বিএসটিআই অনুমোদিত সিলিন্ডার ব্যবহার করুন

৪. রেগুলেটর লাগানো ও খোলার সময় সতর্ক থাকুন

গ্যাস বের হচ্ছে কি না তা সাবান পানির ফেনা দিয়ে পরীক্ষা করুন

গ্যাস লিকের ক্ষেত্রে আগুন নয়, সাবানের ফেনা ব্যবহারেই ফাঁস ধরা যায়

৫. সচেতন থাকুন এবং পরিবারকেও সচেতন করুন

বাসার গৃহকর্মী বা শিশুদের গ্যাস সিলিন্ডারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিন

রান্নাঘরে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা বালির বস্তা রাখুন

আরও পড়ুন: অন্যের চার্জার দিয়ে নিজের ফোন চার্জ দিলে কী হয়?

গ্যাস সিলিন্ডার একদিকে যেমন দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ, ঠিক তেমনি এটি হতে পারে এক বিপজ্জনক বিস্ফোরক বস্তু—যদি আপনি সচেতন না থাকেন। বাসাবাড়িতে ছোট একটি ভুল, যেমন লিক চেক না করা, পুরনো পাইপ বদল না করা বা আগুনের কাছে সিলিন্ডার রাখা—এই সবই ডেকে আনতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সতর্কতা মানেই নিরাপত্তা। নিজের জীবন, পরিবারের নিরাপত্তা এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর