দেশে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ স্থানীয়ভাবে হোস্টকৃত টিয়ার-৪ ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম চালু করল এক্সেনটেক পিএলসি। এক্সেনটেক ক্লাউড নামে প্ল্যাটফর্মটি চালু করেছে রবি আজিয়াটা পিএলসির এই সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস মিটে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সচিব শিশ হায়দার চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে ক্লাউডটির অবকাঠামো, সক্ষমতা ও জাতীয় গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এক্সেনটেক ক্লাউড বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয়ভাবে হোস্টকৃত এন্টারপ্রাইজ ক্লাউড, যা বৈশ্বিক মানের নির্ভরযোগ্যতা, নিরাপত্তা ও সম্প্রসারণের মানদণ্ড পূরণ করে। এটি সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে পরিচালিত। যশোরে এর টিয়ার-৪ মানের ডাটা সেন্টার আছে এবং ভুলতায় অতিরিক্ত হোস্টিং সুবিধাও রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত হওয়ায় এতে তথ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য একটি বড় অগ্রগতি এবং স্থানীয় প্রযুক্তি সক্ষমতার মাইলফলক।
অনুষ্ঠানে এক্সেনটেক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আদিল হোসাইন নোবেল বলেন, 'বহু বছর ধরে বাংলাদেশের এন্টারপ্রাইজগুলোকে বিদেশে হোস্টকৃত ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। এর ফলে ডাটার সার্বভৌমত্ব, গতি, নিয়ম কানুন এবং খরচ নিয়ে নানা উদ্বেগ তৈরি হতো। এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের লক্ষ্যেই এসেছে এক্সেনটেক ক্লাউড। এটি স্থানীয় ও শক্তিশালী এবং আগামী দশকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করতে তৈরি হয়েছে।
এক্সেনটেক ক্লাউডের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো:
বিজ্ঞাপন
১. টিয়ার-৪ অবকাঠামো: সর্বোচ্চ স্তরের ত্রুটি সহনক্ষমতা ও আপটাইম নিশ্চিত করে, সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে হোস্টকৃত।
২. জাতীয় নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ: বাংলাদেশ সরকারের তথ্য সুরক্ষা ও শাসন কাঠামোর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সংগতিপূর্ণ।
৩. সর্বোচ্চ স্তরের ত্রুটি সহনক্ষমতা ও আপটাইম নিশ্চিত করে, সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে হোস্টকৃত।

প্রসঙ্গত, টিয়ার-৪ ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম হলো একটি অত্যন্ত উন্নত ও নির্ভরযোগ্য ডাটা সেন্টার অবকাঠামো, যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অত্যাধুনিক পদ্ধতির ডাটা সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, বিশ্লেষণ এবং দ্রুত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। এক্সেনটেক ক্লাউড ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, লজিস্টিকস, ই-কমার্স ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। কোনো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের জটিলতা ছাড়াই বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ডাটার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আইটি অপারেশনকে অপ্টিমাইজ করতে এবং কমপ্লায়েন্স প্রস্তুতি উন্নত করতে সহায়তা করবে এটি।
‘ক্লাউডের প্রসারে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তায় প্রস্তুত সরকার’
এদিকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সচিব শিশ হায়দার চৌধুরী বলেছেন, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগস্টের মধ্যে দুটি অধ্যাদেশ পাশ হতে যাচ্ছে। এআই নীতিমালায় নীতিবোধ যুক্ত করা হচ্ছে। ক্লাউডের প্রসারে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তায় সরকার প্রস্তুত।
প্রযুক্তিতে দ্রুততার চেয়ে প্রভাবক ভূমিকা পালনে খাত সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। ক্লাউড বা অনলাইন সেবার ক্ষেত্রে ম্যাক্সিমামের চেয়ে 'ফুল সিকিউরিটি'-তে জোর দিয়েছেন তিনি।
সচিব বলেছেন, যেহেতু এক্সেনটা ডাটার শতভাগ সুরক্ষা দেয়ার প্রত্যাশা করছে, সেক্ষেত্রে আশা করা যায়, ডার্কওয়েবে পার্সোনাল ডাটা ফাঁস হওয়া কমে যাবে।
সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, শুধু ডাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্মোচনের জন্যও আমাদের উচিত স্থানীয় ক্লাউড অবকাঠামোকে অগ্রাধিকার দেয়া। এক্সেনটেক ক্লাউড সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ, যা একদিকে বৈশ্বিক ব্যবসাকে আকৃষ্ট করবে এবং অন্যদিকে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষ বাড়াবে। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপ্লায়েন্স বা নিরাপত্তার সাথে আপস না করেই উদ্ভাবনের সুযোগ করে দেবে। এটি আমাদের স্থানীয় প্রযুক্তি- ইকোসিস্টেমে জন্য একটি নতুন মাইলফলক।
এক্সেনটেক পিএলসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল হোসাইন নোবেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রবির কোম্পানি সচিব সাহেদ আলম, সিসিও এ কে এম নাজমুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমআর/জেবি

