স্মার্টফোন আসক্তি চরমে পৌঁছে গেছে। ঠিক যেনো নেশার মতোই! স্মার্টফোন ছাড়া চলেই না। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কুপ্রভাব পড়ছে শরীরে। এমনকি মনেও। কিন্তু এই নেশা ছাড়া যাচ্ছে না কিছুতেই।
কম্পিউটার ইন হিউম্যান বিভেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্মার্টফোনের নেশা ছাড়তে পারলে মস্তিষ্কের রাসয়নিক গঠন আমূল বদলে যায়। চাঙ্গা থাকে শরীর, মন। সম্প্রতি একদল তরুণ-তরুণীদের উপর একটি পরীক্ষা চালিয়েছিল তারা। তাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য।
বিজ্ঞাপন
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়েছিল, খুব প্রয়োজন না থাকলে স্মার্টফোনে হাত দেওয়া যাবে না। পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের তারা ফোন করতে পারেন। কোনও কাজ থাকলে সারতে পারেন তাও। তার বেশি নয়। ৭২ ঘণ্টা এভাবেই থাকতে হবে।
এটা ছিল এক ধরনের মানসিক পরীক্ষা। কিন্তু গবেষণার ফলাফল রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। তিন দিন পর ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিংয়ে (এফএমআরআই) মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের স্ক্যান করা হয়। দেখা যায়, ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে মস্তিষ্কের যে অংশ আকাঙ্খা বা পুরস্কার পাওয়ার আশা নিয়ন্ত্রণ করে, সেই অংশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন মাদক বা অ্যালকোহল আসক্তির মতোই মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে।
‘স্মার্টফোনে আসক্তি’ শব্দবন্ধ খুব পরিচিত। একইসঙ্গে বিতর্কিতও। কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ থেকে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের জটিল মানসিক, আবেগগত ও সামাজিক দিকগুলোর সঠিকভাবে বোঝা যায় না। এই নিয়ে নিউরোসায়েন্সে এখনও গবেষণা চলছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ল্যাপটপ থেকে ফোনে চার্জ করেন? জানুন কী ভুল করছেন
যাইহোক, এই গবেষণার জন্য নিয়মিত স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এমন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫ জন তরুণ-তরুণীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। গেমিং বা স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তাঁদের শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক জীবনে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না তা দেখা হয়।
অংশগ্রহণকারীদের মানসিক অবস্থা, স্মার্টফোন ব্যবহারের অভ্যাস এবং আসক্তি বুঝতে ব্রেন স্ক্যানের আগে দুটি প্রশ্নোত্তর ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়। এরপর, তাঁদের দেওয়া হয় ৭২ ঘণ্টার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত রাখার নির্দেশিকা।
তিনদিন পর অংশগ্রহণকারীদের এফএমআরআই স্ক্যান করা হয়। দেখানো হয় বিভিন্ন ছবি। প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি চালু এবং বন্ধ স্মার্টফোনের ছবি। ফলাফলে দেখা যায়, স্মার্টফোন কম ব্যবহার করার ফলে মস্তিষ্কের ডোপামিন ও সেরোটোনিন সংশ্লিষ্ট অংশে পরিবর্তন এসেছে। এই দুটি নিউরোট্রান্সমিটার মেজাজ, আবেগ ও আসক্তি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
গবেষকরা বলেন, স্মার্টফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে অনেকটা মাদক বা খাবারের প্রতি আসক্তি থেকে ফিরে আসার মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। এই প্রভাব অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এবং সাধারণ ব্যবহারকারী— উভয়ের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গিয়েছে।
এজেড