শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জামা-কাপড় থেকে উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ

মো. মাহফুজুল হক
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২২, ০৩:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

জামা-কাপড় থেকে উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ

এবার প্রসারণশীল এবং জলরোধী কাপড় তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই কাপড়টি শরীরের ক্ষুদ্রতম নড়াচড়া থেকে উৎপন্ন শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারে। সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (এনটিইউ) এবং চায়নার সিনহুয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এটি উদ্ভাবন করেছেন। 

এই কাপড়টিতে একটি পলিমার রয়েছে যা যান্ত্রিক চাপকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা পরে দেখান যে, নতুন এই উদ্ভাবিত কাপড়ের ৩ সেমি x ৪ সেমি টুকরোটে টোকা দিলে ১০০টি এলইডি বাতি জ্বালানোর মতন যথেষ্ট বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন হয়।


বিজ্ঞাপন


বিজ্ঞানীদের তৈরি করা প্রোটোটাইপ কাপড়টি দুটি উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। যখন এটিকে চাপা হয়, তখন এই চাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই পদ্ধতিকে বলে পিজোইলেকট্রিক ক্রিয়া। আবার যখন এটি অন্য কোনো উপাদানের (যেমন ত্বক অথবা রাবারের গ্লাভস) সংস্পর্শে আসে বা এদের সঙ্গে ঘর্ষণে লিপ্ত হয়, তখনও বিদ্যুৎ তৈরি হয়। ঘর্ষণ অথবা সংস্পর্শ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই প্রক্রিয়ার নাম হল ট্রাইবোইলেকট্রিক প্রভাব।

febricপ্রটোটাইপটি তৈরি করার জন্য, এটিতে বেস লেয়ার হিসাবে প্রসারণশীল পাতলা সিনথেটিক কাপড় (স্প্যান্ডেক্স) ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাপড়ের উপর তারা প্রথমে সিলভার এবং স্টাইরিন-ইথিলিন-বিউটিলিন-স্টাইরিন (এসইবিএস) সমৃদ্ধ একটি কালি দিয়ে স্ক্রিন-প্রিন্ট করে একটি প্রসারণশীল ইলেক্ট্রোড তৈরি করেন। এই ইলেক্ট্রোডটিকে তখন পলি (ভিনাইলিডিন ফ্লোরাইড-কো-হেক্সাফ্লুরোপ্রোপিলিন) (পিভিডিএফ-এইচপিএফ) এবং সীসামুক্ত পেরোস্কাইট দ্বারা গঠিত বিশেষ এক ন্যানোফাইবার বিশিষ্ট কাপড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। 

উল্লেখ্য, পিভিডিএফ-এইচপিএফর সঙ্গে পেরোস্কাইটযুক্ত করলে তা প্রটোটাইপেটির বৈদ্যুতিক প্রবাহ বাড়ায়। যদিও পেরোস্কাইট প্রকৃতিগতভাবে ভঙ্গুর, পিভিডিএফ-এইচপিএফের সঙ্গে সংযুক্তি এদেরকে ব্যতিক্রমী যান্ত্রিক স্থায়িত্ব ও নমনীয়তা দেয়। এছাড়াও পিভিডিএফ-এইচপিএফ এবং পেরোস্কাইটের জন্য সুরক্ষার একটি অতিরিক্ত স্তর হিসেবেও কাজ করে।

febricএই প্রটোটাইপ কাপড়টি প্রতি বর্গমিটারে ২.৩৪ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। কাপড়টি যতই ধোয়া অথবা ভাঁজ করা হোক না কেন, এটি পাঁচ মাস পর্যন্ত স্থিতিশীল বৈদ্যুতিক প্রবাহ বজায় রাখতে পারে। এটি স্মার্ট টেক্সটাইল এবং পরিধানযোগ্য শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহারের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। 


বিজ্ঞাপন


এই গবেষণার টিম লিডার অধ্যাপক লি বলেন, ‘দিনদিন ব্যাটারির ক্ষমতা ও গুণাবলী বৃদ্ধি এবং যন্ত্রপাতি চালনায় বিদ্যুৎ শক্তির চাহিদা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও পরিধানযোগ্য যন্ত্রপাতিতে ঘন ঘন ব্যাটারি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এসব যন্ত্রপাতিতে আমাদের নব্য আবিষ্কৃত প্রটোটাইপটির ব্যাবহারে মানুষের দেহের কম্পন থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ শক্তি ব্যাটারির জীবনকাল বাড়াতে পারে, এমনকি এসব যন্ত্রপাতিগুলোর জন্য শক্তির উৎস হিসেবে আর আলাদাভাবে ব্যাটারি ব্যাবহার করতে হবে না। এখন পর্যন্ত এটিই প্রথম হাইব্রিড পেরোস্কাইট-ভিত্তিক বিদ্যুৎ শক্তির উৎস, যা স্থিতিশীল, প্রসারণশীল, শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য, জলরোধী এবং একইসঙ্গে অসামান্য বৈদ্যুতিক কার্যক্ষমতা প্রদান করতে সক্ষম।’

তথ্যসূত্র: পেরোস্কাইট ইনফো ডট কম

এনএম/এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর