বাংলাদেশে হাড় কাঁপানো শীত শুরু হয়েছে। শীতের এই সময়ে প্রতিদিনই কুয়াশা দেখা যায়। সকালে ঘাসের ডগায় জমে শিশির বিন্দু। এখন প্রায় সারাদিনই কুয়াশা পড়ে। তবে মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশা বেশি দেখা যায়। কুয়াশার ফলে দৃষ্টিসীমা কমে যায়। অর্থাৎ দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখা যায় না।
কুয়াশা কীভাবে সৃষ্টি হয়?
বিজ্ঞাপন
কুয়াশাকে বলা হয় লো ক্লাউড। শীতের সময় তাপমাত্রা কম থাকে এবং মাটিতে থাকা আদ্রতা উপরে উঠে গিয়ে কুয়াশা তৈরি করে।
এছাড়া ‘অ্যাডভেকশন ফগ’ বা মাটির তুলনায় বাতাস উষ্ণ এবং আদ্রতা বেশি থাকার কারণে যে কুয়াশা তৈরি হয়ে ভেসে বেড়ায়- এ ধরনের কুয়াশা ভারত থেকে বাতাসের তোড়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, কুয়াশা তৈরির পেছনে বাতাসের আদ্রতা ও তাপমাত্রার পার্থক্য দায়ী থাকে। তবে এবার রাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার আগেই কুয়াশা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর বাতাস কম থাকার কারণে কুয়াশা সরে যেতে পারছে না।

বিজ্ঞাপন
কুয়াশা আইসের(বরফের) একটা অংশ। এটা আমাদের দেশে ছোট থাকে, অন্যান্য দেশে তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে সেটা বড় আকার ধারণ করে ঝড়ে পড়ে, যাকে স্নো বলে। আমাদের দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে বলে স্নো হয় না, তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতো ছোট ছোট ফোটা হয়ে ঝড়ে পড়ে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং চীনেও কুয়াশা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: শীতকালে জানালার গ্লাসে পানি জমে কেন?
শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণ কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন জানান, পৌষ মাসে বা পৌষ মাসের শেষে কুয়াশা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ঘন কুয়াশা তৈরির পেছনে কিছু কারণ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের মতো হয় কিন্তু নিচের মাটি ঠাণ্ডা থাকার কারণে এটি উপরে ওঠে না। এর সাথে যোগ হয় ধুলা এবং গাড়ির ধোঁয়া।’

ঢাকা দূষণের শহর হওয়ার কারণে এখানে ধুলা এবং ধোঁয়ার আধিক্য থাকে। যার কারণে কুয়াশাও ঘন হয়।
এছাড়া যেখানে তাপমাত্রার উঠানামা বেশি থাকে সেখানেই কুয়াশা তৈরির সুযোগ বেশি থাকে।
দূষণ বেশি হলে কুয়াশাও বেশি হবে।
আরও পড়ুন: শীতকালে ঘাসের ডগায় শিশির জমে কেন?
এশিয়াতে বাংলাদেশ এবং ভারতে ঘন কুয়াশা বেশি হয়। পাকিস্তানে কুয়াশা হলেও ঘন কুয়াশা কম হয় বলে জানান তিনি।
কুয়াশা থাকলে কী হয়?
কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণ ঢুকতে না পারার কারণে তাপমাত্রা কম থাকে এবং শীত অনুভূত হয়।
এছাড়া সূর্যের কিরণ গাছপালায় পৌঁছাতে না পারায় পাতায় সালোক-সংশ্লেষণের পরিমাণ কমে যায়। এতে একদিকে গাছের খাদ্য কম পরিমাণে তৈরি হয়ে এবং গাছ পুষ্টি কম পায়, অন্যদিকে একই কারণে অক্সিজেনের উৎপাদনও কমে যায়।

কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণ ঢুকতে না পারার কারণে তাপমাত্রা কম থাকে এবং শীত অনুভূত হয়।
শীতে কুয়াশার কারণে রবি শস্যের উৎপাদন কমে যায়।
পোকা-মাকড়ের ক্ষেত্রেও তাই। কারণ তাদেরও ইকোলজিক্যাল একটা ব্যাপার থাকে।
এই পোকামাকড়ের কারণে শস্যে পরাগায়ন কমে যায়। আবার নানা ধরণের ক্ষতিকর পোকার আক্রমণেও ফসল কম হয়।
ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে, শিল্প-কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া বাতাসে মিশতে না দিলে এবং নির্মাণ কাজ থেকে তৈরি হওয়া ধুলা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কুয়াশার ঘনত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এজেড

