শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অনিয়ম-দুর্নীতি

পলকের আশীর্বাদপুষ্ট স্টার্টআপ বাংলাদেশের এমডি সামি এখনো বহাল তবিয়তে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

পলকের আশীর্বাদপুষ্ট স্টার্টআপ বাংলাদেশের এমডি সামি এখনো বহাল তবিয়তে!

স্টার্টআপ বাংলাদেশ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামি আহমেদের পক্ষপাতমূলক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত, দুর্নীতি এবং উদ্যোক্তাদের প্রতি অবিচারের নানান অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি সামির নেতৃত্বে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তা হলো- অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম ‘টেন মিনিট স্কুল’ ও আরেকটি স্টার্টআপ ‘শিখো’ এর জন্য বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিল করা।

২০২২ সালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে এমডি হন সামি। এর পর থেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি সমর্থনের নামে শুধু আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিচয় অনুযায়ী স্টার্টআপগুলোকে বিনিয়োগ প্রদান করে যাচ্ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


সামি আহমেদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এটিই প্রথম নয়। বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল সামি। প্রতি ১০ লাখ টাকার বিনিয়োগ এবং অনুদান পেতে উদ্যোক্তাদের থেকে ৩ লাখ টাকা কমিশন দাবি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করার পর টেন মিনিট স্কুল ও শিখো-কে ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়েছিল, যা প্রতিটি উদ্যোক্তার জন্য একটি বিপদসংকেত। দেশের প্রতিভাবান উদ্যোক্তাদের প্রকল্পগুলো বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত করার প্রেক্ষিতে স্টার্টআপ বাংলাদেশের এমডি’র এমন আচরণে বিক্ষুদ্ধ উদ্যোক্তারা।

7

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সামি আহমেদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এটিই প্রথম নয়। বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল সামি। প্রতি ১০ লাখ টাকার বিনিয়োগ এবং অনুদান পেতে উদ্যোক্তাদের থেকে ৩ লাখ টাকা কমিশন দাবি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।


বিজ্ঞাপন


প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের পরামর্শে আইসিটি ভবনের অফিস থেকে আলাদা স্থানে স্টার্টআপ বাংলাদেশের আরও একটি অফিস স্থানান্তর করার মাধ্যমে সামি তার দুর্নীতি ও অনিয়মকে পাকাপোক্ত করেছেন। সেই অফিসের ঠিকানা হচ্ছে- কনকর্ড সিলভি হাইটস (৯ তলা), ৭৩ এ গুলশান অ্যাভিনিউ, গুলশান-১ ঢাকা।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি অনেক বেশি স্যালারি দিয়ে কিছু পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশে, যারা মূলত কমিশন ডিল এবং রাজনৈতিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করতো।

2
পলকের আশীর্বাদপুষ্ট স্টার্টআপ বাংলাদেশের এমডি সামি এখনো বহাল তবিয়তে! (ফাইল ছবি)

সামি রাজনৈতিকভাবে অনুদান দেওয়ার পর স্টার্টআপ করতে পারেনি এমন দুইটি প্রতিষ্ঠানের নামও জানা গেছে।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের পরামর্শে আইসিটি ভবনের অফিস থেকে আলাদা স্থানে স্টার্টআপ বাংলাদেশের আরও একটি অফিস স্থানান্তর করার মাধ্যমে সামি তার দুর্নীতি ও অনিয়মকে পাকাপোক্ত করেছেন।

স্টার্টআপ বাংলাদেশের থেকে অনুদান নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছে ড্রাইভারবিডিডটকমের মোহাম্মাদ শাহীন। তাকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়।

এছাড়া ১০ লাখ টাকা অনুদান নেওয়া স্মার্ট বেড ও হুইলচেয়ার তৈরির ‘ফাইভডি টেকনোলজি’ও এখন আর কার্যকর নেই।

সর্বশেষ, গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর পলক ও সামি সিন্ডিকেটের অনিয়ম গোপন করতে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দেয় সামি নিজে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি সেক্টরের দুর্নীতি ও পক্ষপাতের বিরুদ্ধে যখন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন সামি আহমেদ এখনো পদে বহাল থেকে তার কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সামি অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগের মুখে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। এতে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এমডি সামি আহমেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং অবিলম্বে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে বৈষম্য বিরোধী আইটি ও উদ্যোক্তা পরিষদের পক্ষ থেকে। যা শুধু স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের জন্য নয়, বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন পরিষদের সমন্বয়করা।

বৈষম্যবিরোধী আইসিটি ও উদ্যোক্তা কাউন্সিলের অন্যতম একজন সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার ইমরুল কায়েস পরাগ বলেন, জয়-পলক ডিজিটাল চক্রের সকল সহযোগীদের অবিলম্বে নিজ থেকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল। যেহেতু তারা এখনো বহাল তবিয়তে তাই তারা কু-কর্ম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ থাকবে তাদের অবিলম্বে অপসারণ করুন। অন্যথায় বৈষম্যবিরোধী আইসিটি ও উদ্যোক্তা কাউন্সিল দেশের স্বার্থে দুর্নীতিবাজদের অপসারণে যৌক্তিক জনমত গড়ে তুলতে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে স্টার্টআপ বাংলাদেশের এমডি সামিকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ‘মিটিংয়ে আছেন’ বলে কল কেটে দেন।

/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর