বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আইস স্তুপা: বরফের পাহাড় গলিয়ে পানিতে রূপান্তরের প্রযুক্তি

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২, ০৪:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

আইস স্তুপা: বরফের পাহাড় গলিয়ে পানিতে রূপান্তরের প্রযুক্তি

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পাহাড়ি উপত্যকা লাদাখ। এর দক্ষিণে হিমালয়। প্রকৃতি এখানে হিমশীতল। কিছুটা বিরূপও। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অত্যাধিক উচ্চতার কারণে পানির অভাব সেখানে। চাষের জন্য পানির অভাব তীব্র। ফলে চাষীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। লাদাখে পানির সমস্যা নিরসনে এগিয়ে এসেছেন সোনম ওয়াংচুক নামের একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। তিনি পাহাড়ের ঢালে জমানো বরফকে পানিতে রূপান্তরের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এই প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আইস স্তুপা’। এই প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে পুরো লাদাখের চিত্র। 

হিমালয় ঘেঁষা পাথুরে এলাকা লাদাখে শীতকালে তাপমাত্রা চলে যায় মাইনাস ৩০ ডিগ্রির নিচে। ঠান্ডার তীব্রতায় মাটি ওপরে বরফের আস্তর জমে। ফলে কৃষিকাজ করা অসম্ভব। শীতে লাদাখে যেই বরফগুলো জমাট বাঁধে সেগুলো গলেই গ্রীষ্মে কৃষকদের চাষাবাদের পানির যোগান দেয়। কিন্তু এই বরফ গলতে গলতে পার হয়ে যায় জুন-জুলাই। তখন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাওয়ায় বরফ গলে বন্যারও সৃষ্টি হয় অনেকসময়। 


বিজ্ঞাপন


iceএদিকে, কৃষিকাজের মূল দুই মাস এপ্রিল ও মে তে লাদাখজুড়ে তৈরি হয় তীব্র পানির সংকট। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সমস্ত কৃষিকাজ শেষ হয়। এসময় একটি ছোট পানির ধারা স্থিরভাবে প্রবাহিত হয়। যা বয়ে যায় সিন্ধু নদীতে। ফলে তা কারও কাজে লাগে না।

বৃষ্টির ওপর ভরসা করারও উপায় নেই। পাহাড়ি এই অঞ্চলে বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ মিলিমিটারেরও কম। সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে থাকেন সোনম। শীতের বরফকে কীভাবে অপচয় না করে গ্রীষ্ম পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় তা ভাবেন তিনি। এই ভাবনা থেকে ২০১৩ সালের শেষ দিকে ‘আইস স্তুপা’ উদ্ভাবন করেন। 

iceআইস স্তুপা কী 

তিব্বতীয় বৌদ্ধ মঠগুলোর বৃত্তাকার পিরামিড ঘরানার আকারের হওয়ায় সেগুলোকে ‘মন্দির’ বা ‘স্তুপা’ বলা হয়। এমন মঠের আকৃতিতে জমানো বরফের আধারকে আইস স্তুপা বলা হয়। 


বিজ্ঞাপন


কীভাবে আইস স্তুপা তৈরি হয়? 

বিজ্ঞানের অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে এটি তৈরি করা হয়। একটি হেলানো পাইপের সাহায্যে উৎস থেকে পানি দেওয়া হয়। পাইপ বেয়ে পানি যখন শেষ পর্যায়ে বের হবে, তখন অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে তা একটি ফোয়ারার মতো করে বের হয়। বাইরের তাপমাত্রা শীতকালে যেহেতু মাইনাস ৩০ বা তারও কম থাকে তাই পানি বাইরে বের হতেই বরফ হতে শুরু করে। 

iceএভাবে ফোয়ারার আকারে পানি বাড়তে বাড়তে ওপরের দিকে উঠতে থাকে এবং একসময় পুরো বরফের স্তুপটি একটি কৌণিক আকার ধারণ করে। এভাবে স্তুপীকৃত বরফের মধ্যে অনেকদিন পানি সংরক্ষণ করা যায়।

গঠনের কারণে আইস স্তুপাতে সূর্য রশ্মি সরাসরি কম পড়ে। তাই এটি ধীরে ধীরে গলে। এপ্রিল ও মে মাসে এখান থেকে বরফ গলে কৃষিজমিতে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে কৃষকরা নিশ্চিন্তে কৃষিকাজ করতে পারেন।

ice২০১৩ সালের অক্টোবরে আইস স্তুপার প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়। ৬ মিটার (২০ ফিট) উচ্চতার এই স্তুপায় ১ লাখ ৫০ হাজার লিটার বরফ জমা হয়। তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার পরও ২০১৪ সালের ১৮ মে তে এই স্তুপা পুরোপুরি গলেনি। 

এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর তা পুরো লাদাখে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৯ সাল অবদি সেখানে ১২টি আইস স্তুপা তৈরি হয়। ২০২০ এ তা বেড়ে ২৫ হয়।

এনএম/এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর