শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কাঁদলেন, কাঁদালেন, বিদায় নিলেন রজার ফেদেরার

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

কাঁদলেন, কাঁদালেন, বিদায় নিলেন রজার ফেদেরার

টেনিসে আরও রথী–মহারথী আসবেন। হয়তো রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচের মতো অনেকে শিরোপার বিচারে ছাড়িয়ে যাবেন অনেকের কাছে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় রজার ফেদেরারকে। কিন্তু সুইস তারকার মতো এভাবে কেউ কি বিদায় নিতে পারবেন? যিনি বিদায় বেলায় নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদেরও! এমনভাবে বিদায় নেওয়া যে শুধু তার পক্ষেই সম্ভব। তিনি থাকবেন টেনিসপ্রেমীদের মনে চিরকাল। 

কয়েক বছর ধরে বয়স আর চোট নিয়ে টেনিস কোর্টে ছিলেন না থাকার মতোই। তাই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অবসরের। সেটার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন ১৫ সেপ্টেম্বর। ঘাসের কোর্টের রাজা টেনিস কিংবদন্তি জানান দেন  লন্ডনের লেভার কাপই হবে তার সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক টেনিসে অংশ নেওয়া।


বিজ্ঞাপন


সেই লেভার কাপে গতরাতে রাজার বেশেই বিদায় নিয়েছেন রজার। তবে শেষ প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার আগেই শেষ করতে হলো ফেদেরারকে। কারণ নাদালকে নিয়ে যে প্রতিযোগিতায় শেষ হাসি হাসবেন ফেদেরার, চাওয়া ছিল এমনটাই। 

কিন্তু টিম ইউরোপের ফেদেরার-নাদাল জুটি হেরেছেন টিম ওয়ার্ল্ডের জুটি ফ্রান্সিস তিয়াফো-জ্যাক সকের কাছে। প্রথম সেট জিতলেও পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি টেনিসের দুই স্টার। ৪-৬, ৭-৬ (৭ /২), ১১-৯ গেমের লেভার কাপ শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নিতে হলো রজারকে। 

তবে টেনিস রাজার তাতে কি কিছু্ই আসে-যায়? আসা-যাওয়ার কথাও নয়। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে ১৫০০ এরও বেশি ম্যাচ খেলা ফেদেরার যে শত শত ভালো মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন তাতে তার বিদায় কান্নাভেজা হবে সেটাই স্বাভাবিক।

টেনিসপ্রেমীদের এখন আক্ষেপ একটাই- আর কখনও কোর্টে দেখা যাবে না ২০টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী মহাতারকাকে। তাকে যে সবাই মিস করবেন, তিনি যে সবাইকে, টেনিস কোর্টকে মিস করবেন- এই দুইয়ে মিলে শেষ বিদায়ে তার বক্তব্যে আর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। চোখের পানিতে ভাসালেন সবাইকে। 


বিজ্ঞাপন


তবে কথা বলতে গিয়ে যেন শেষ বারের মতো আবারও শান্ত রাখতে চাইলেন সবাইকে, যেমনটা গত দুই যুগ ধরে তার টেনিসের জাদুতে রেখেছিলেন। 

গতরাতে লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় ফেদেরার শেষবারের মতো কোর্টে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমরা এটা (দুঃখের সময়) কাটিয়ে উঠব। দিনটা দারুণ। সবাইকে বলেছি, আমি সুখী। খারাপ লাগছে না। শেষবারের মতো নিজের জুতার ফিতা বাঁধা উপভোগ করেছি। সবকিছুই ছিল শেষবারের মতো।’

‘এখানেই সবকিছুর শেষ নয়; জীবন জীবনের মতোই এগিয়ে চলবে। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। একটি বার্তা দিতে চাই, খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে। ভক্তদের জানাতে চাই, আবারও দেখা হবে, বিশ্বের অন্য কোথাও, আলাদা কোনো টেনিস কোর্টে। তবে কবে, কোথায়, কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। এমন সব জায়গায় গিয়ে খেলতে চাই, যেখানে আগে কখনো খেলিনি। সামনের বছরগুলোয় শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে যেতে চাই সবাইকে, যাঁরা এত দিন ধরে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’ 

ফেদেরার শুধু একাই কাঁদেননি। কাঁদিয়েছেন তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ও বন্ধু নাদালকেও। দুইজনে পাশাপাশি বসে কেঁদেছেন যখন জানানো হলো ফেদেরারের এটাই শেষ। 

২০০৪ থেকে ২০১৯, এ ১৬ বছর ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছেন ফেদেরার-নাদাল। তাই এমন বন্ধুর বিদায় মানতে কষ্ট পাবারই কথা নাদালের। যিনি শক্ত হৃদয়ের মানুষ বলে পরিচিত সেই নাদালও গতকাল নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। 

ফেদেরারের সঙ্গে নিজের স্মৃতি আওড়ালেন নাদাল, ‘আমাদের এই খেলার ইতিহাসে অনন্য এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও অবসান ঘটা।’

সুইস তারকাও নাদালকে আরেকবার সবার সামনে পরিচয় করালেন কিংবদন্তি হিসেবে, ‘রাফার সঙ্গে একই দলে খেলা এবং বাকিদেরও কাছে পাওয়া, যেসব কিংবদন্তি এখানে আছে...ধন্যবাদ।’
 
গতকাল উপস্থিত টেনিসের ‘বিগ ফোর’ এর বাকি দুই তারকা জোকোভিচ ও অ্যান্ডি মারেও ছিলেন ফেদেরারের বিদায়ে বিষণ্ণ। তাই এ বিদায় যেন ফেদেরারের এলেন, দেখলেন, জয় করলেনের মতোই। 

এসও 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর