ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে পেরিয়ে গেছে ৩৬টি বছর। এর মাঝে স্বাদ নেওয়া হয়নি বিশ্বকাপের। এমন হিসেব-নিকেশ নিয়ে মরুর দেশে পা রেখেছিল আর্জেন্টিনা। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে সেই আশায় গুড়ে বালি হয়েছিল আলবিসেলিস্তাদের। কিন্তু সেই দৃশ্যপট বদলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মেসিরা।
এদিকে আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরের ক্যারিয়ার জুরে কি নেই! ক্লাব ফুটবলে এমন কিছুর অর্জন নেই যেটা মেসির নেই। বার্সেলোনার হয়ে স্পেনে হয়েছেন সর্বজয়ী। এরপরে ফ্রান্সেও পিএসজিকে জিতিয়েছেন লীগ ওয়ান শিরোপা। গোল্ডেন বুট, বেস্ট প্লেমেকার অ্যাওয়ার্ড তো আছেই, জিতেছেন রেকর্ড গড়া সর্বোচ্চ সাতবার ব্যালন ডি’অর।
বিজ্ঞাপন
তারপরও সমালেচনায় আসতেন এই জাদুকর। কারন জাতীয় দলের হয়ে মেসি কোনও অর্জন নেই। সেই সমালেচনাও মেসি ঘুচিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২০২১ সালে ঘরে আনে কোপা আমেরিকা শিরোপা। এত শত অর্জনের ভীড়েও যদি লিওনেল মেসির জীবনে অপ্রাপ্তি বলতে যদি কিছু থাকে, তা হলো বিশ্বকাপপের সোনালী ট্রফি। তবে ৩৫ বছর বয়সী এই ক্ষুদে জাদুকর কাতের এসে শেষ অপূর্নটাও পূরণ করলে হাতে উচিয়ে ধরলেন সেই সোনালী শিরোপা। আর এতেই উৎসবে মেতে উঠে গোটা আর্জেন্টিনা দেশ থেকে তার ভক্ত সমগ্র।
অপরদিকে বিশ্বকাপ জিতে যখন দেশে ফিরে শিরোপা উৎসবে যোগ দিতে খোলা বাসে করে আর্জেন্টিনা দল জড়ো হয়েছিল বুয়েন্স এইরেস শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত মনুমেন্ট অবেলিস্কে। সেখানে লাখো মানুষের উৎসবে যোগ দেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়রা।
এ উৎসবে যোগ দেয়ার আগে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সেই ভিডিওতে উঠে এসেছে তার শৈশবের প্রথম ক্লাব গ্রান্দলির হয়ে খেলার দিনগুলো থেকে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেকের মুহূর্ত, ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে বেদনাদায়ক হারের মুহূর্তগুলো। আছে কাতার বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি; শিরোপা জয় ও জয়োৎসবের দৃশ্য।
বিজ্ঞাপন
তিনি লিখেছেন, 'গ্রান্দলি থেকে কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর কেটে গেছে। প্রায় তিন দশকের এই সময়ে ফুটবল আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে, কিছু দুঃখও দিয়েছে। সবসময়ই আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, আমি চেষ্টা করা বন্ধ করতে চাইনি, এমনকি কখনও এমন কিছু নাও অর্জন করতে পারি-এটা জানার পরও।'
গত ৩৬ বছরে যারা চেষ্টা করেও পারেনি, শিরোপা জিতে নিজেদের সাফল্যের ভাগ তাদেরও দিচ্ছেন মেসি। তিনি লিখেন, 'এই ট্রফিটি আমরা জিতেছি তাদের জন্যও, যারা আগের বিশ্বকাপগুলোতে এটি অর্জন করতে পারেননি, যেমন ২০১৪ সালে ব্রাজিলে। সেবারও প্রত্যেকের এটি প্রাপ্য ছিল, কারণ তারা ফাইনাল পর্যন্ত লড়াই করেছিল, কঠোর পরিশ্রম করেছিল এবং জিততে চেয়েছিল, ঠিক আমি যতটা পরিশ্রম করেছিলাম ও চেয়েছিলাম, ও রকম বাজেভাবে শেষ হওয়া ফাইনালেও আমাদের ট্রফিটি প্রাপ্য ছিল।'
অপরদিকে বিশ্বকাপ মানেই আর্জেন্টিনার জন্য গ্যালারিতে হাজির ম্যারাডোনা। আকাশি-সাদাদের গোলে যেমন বাঁধনহারা উদ্যাপনে মেতে উঠতেন। তেমনই ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়তেন আলবিসেলেস্তেদের ফুটবল ঈশ্বর। শিরোপা জিতে মেসি স্মরণ করলেন বছর দুই আগে প্রয়াত হওয়া মহাতারকাকেও।
'ডিয়েগো ম্যারাডোনা জন্যও, যিনি স্বর্গ থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এই সাফল্য তাদের সবার জন্য, যারা সবসময় ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে জাতীয় দলের পাশে থেকেছে, আমাদের চেষ্টা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে, এমনকি যখন সবকিছু চাওয়া অনুযায়ী হয়নি তখনও। আর অবশ্যই কোচিং স্টাফ এবং জাতীয় দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য, যারা আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করতে দিনরাত কাজ করেছেন।'
আর্জেন্টিনার অধিনায়ক তার বার্তাটি শেষ করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, 'ব্যর্থতা অনেক সময় যাত্রা এবং শেখার অংশ। হতাশা, ব্যর্থতা ছাড়া সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। হৃদয় থেকে সবাইকে অনেক ধন্যবাদ! চলো আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাই।'