কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কড়া হেড মাস্টার খ্যাত এই লঙ্কান টাইগারদের তিন ফরম্যাটের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ দলে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ২০২৩ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু হয় হাথুরুর মিশন। ইংলিশ সিরিজ থেকে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের পাকিস্তান ম্যাচ পর্যন্ত টাইগার শিবিরে ব্যাপক রদবদল এনেছেন হেড কোচ। পরিবর্তনের এই মিশনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আলোচনার নাম লোয়ার ব্যাটিং অর্ডার।
২০২৩ সালের মার্চে ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে নিজের দ্বিতীয় মিশন শুরু করেন হেড কোচ হাথুরুসিংহে। জস বাটলারদের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর দল থেকে বিশ্রামের কথা বলে বাদ দেওয়া হয় অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। তার পরিবর্তে পরের সিরিজে দলে সুযোগ পান ইয়াসির আলী রাব্বি।
বিজ্ঞাপন
ইংল্যান্ড সিরিজের পর ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেড কোচ হাথুরুর দ্বিতীয় মিশনের বড় চমক টাইগারদের ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে নতুন দায়িত্ব দিয়ে ৬ নম্বর ব্যাটিং পজিশনে নিয়ে আসেন লঙ্কান মাস্টারমাইন্ড। অপরদিকে রিয়াদের পরিবর্তে ঘরের মাঠে আইরিশদের বিপক্ষে ৭ নম্বর ব্যাটিং পজিশনে ইয়াসির রাব্বিকে সুযোগ দেওয়া হয়। কয়েক ম্যাচ পর তাকেও ছেঁটে ফেলেন হাথুরু।

এরপর টাইগারদের লোয়ার মিডেল অর্ডার ব্যাটিং পজিশনে ক্রমান্বয়ে খেলানো হয় আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজকে। ঘরের মাঠে আইরিশদের দাপটের সঙ্গে হারিয়ে নিজেদের রেকর্ডবুক আরো সুদৃঢ় করে বাংলাদেশ। যেখানে ৬ নম্বর পজিশনে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে হাথুরুর নতুন পরিকল্পনা সফল হয়। অথচ ইংল্যান্ড সিরিজের আগে থেকেই নিয়মিত ৬ নম্বর পজিশনে ব্যাট করে আসছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
হাথুরুর নতুন অধ্যায় শুরুর এক সিরিজ পর রিয়াদকে দল থেকে সরিয়ে নির্বাচক অথবা বোর্ডের কর্তাদের কেউই সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করেন নি। শুধুই জানিয়েছিলেন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে তাকে। এরপর আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজ থেকে ধরে ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজের পর চলমান এশিয়া কাপ নিয়ে ১০টির বেশি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
যেখানে লোয়ার মিডেল অর্ডারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে আফিফ হোসেন, ইয়াসির রাব্বি ও মেহেদী হাসান মিরাজকে। চলমান এশিয়া কাপে আফিফ-মিরাজের সঙ্গে নতুন নাম শামিম হোসেন পাটুয়ারি।

এক নজরে বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডারদের সবশেষ ১০ ওয়ানডের ব্যাটিং পরিসংখ্যান:
ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজ:
৬ নম্বরে মুশফিকুর রহিম: ৪৪, ১০০
৭ নম্বরে ইয়াসির রাব্বি: ১৭, ৭
ইংল্যান্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ:
৬ নম্বরে মুশফিকুর রহিম: ৬১, ৩৬*, ৪৫
৭ নম্বরে মেহেদী হাসান মিরাজ: ২৭, ১৯, ৩৭
ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজ:
৬ নম্বরে মুশফিকুর রহিম: ১, ৬৯,
৭ নম্বরে আফিফ: ৪,০
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ:
৬ নম্বরে মুশফিকুর রহিম: ১৩
৭ নম্বরে মেহেদী হাসান মিরাজ: ৫
এশিয়া কাপে আফগানিস্তান ম্যাচ:
৬ নম্বরে সাকিবঃ ৩২
৭ নম্বরে শামিম: ১১
৮ নম্বরে আফিফ : ৪
এশিয়া কাপে পাকিস্তান ম্যাচ:
৬ নম্বরে মুশফিক: ৬৪
৭ নম্বরে শামিম: ১৬
৮ নম্বরে আফিফ: ১২
পরিসংখ্যান বলছে ইংল্যান্ড সিরিজের পর থেকে টাইগারদের ব্যাটিং অর্ডারে সব থেকে ব্যর্থ পজিশন তাদের লোয়ার অর্ডার। একমাত্র মুশফিকুর রহিমের ইনিংসগুলো ব্যতীত বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স করতে পারেনি অন্যান্য ক্রিকেটাররা। যা চলমান এই এশিয়া কাপেও।
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শান্ত-মিরাজের শতকে বড় জয় আসলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে আবারো ব্যর্থ সাকিব আল হাসানের দল। বাবর আজমদের সঙ্গে ৩৯তম ওভারেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের মতো মেগা আসরের আগে টাইগারদের এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্স অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ৭ মাস আগে থেকে নয়া কোচের অধীনে দলের ব্যাটিং অর্ডারে এতো পরিবর্তন বাংলাদেশ দলের জন্য কতটুকু সফলতা এনেছে?
নতুনদের উপর কোচের ভরসা মাঠের ক্রিকেটে যেন পুরোপুরি ব্যর্থ। তুলনামূলক শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে নেমে যেন নিজেদের সেরাটা দিতে পারছে না টাইগারদের লোয়ার অর্ডার।

ইয়াসির রাব্বি থেকে শুরু করে আফিফ-শামিম সবকিছুতেই পরীক্ষা চালিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। যেখানে তাদের পারফরম্যান্স একেবারেই হতাশ করেছে। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চের আগে টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা কি এভাবেই চলমান থাকবে নাকি হেড কোচ আবারো তার পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে যাবেন এমন প্রশ্ন চলমান ক্রিকেটপাড়ায়।
গুঞ্জন রয়েছে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহকে আবারো ফেরাতে চলেছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। তবে রিয়াদকে দলে যদি ফেরানো হয় বিশ্বকাপের আগ মূহূর্তে কেন লোয়ার ব্যাটিং অর্ডারে এতো পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ।
অভিজ্ঞ রিয়াদকে দলে ফেরানো হলে, তিনিও তার প্রতিদান দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। কেননা বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকা রিয়াদ ডিপিএল ছাড়া কোনো প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেননি।
বিশ্বকাপের জন্য ভারতের বিমানে উঠার আগে বাংলাদেশ কি তাদের লোয়ার ব্যাটিং অর্ডারে আফিফ-শামিমেই ভরসা রাখবে নাকি শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ রিয়াদেই উত্তর খুঁজবে।
এমএএম

