বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনার হিসেবে অপার সম্ভবনার নাম রিশাদ হোসেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ক্যাম্পের অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এই সিরিজে টাইগারদের ১৭ সদস্যের মূল স্কোয়াডে আছেন নীলফামারী জেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে নিজপাড়া গ্রামের ছেলে রিশাদ হোসেন।
এর আগে দুবাইয়ে এশিয়া কাপে টাইগার দলের সঙ্গে নেট বোলার হিসেবে ছিলেন তিনি। তার স্পিনে নেটে অনুশীলন সেরেছিলেন টাইগাররা। এদিকে রিশাদের জাতীয় দলের মূল স্কোয়াডে থাকার খবরে আনন্দের বন্যা বইছে পুরো জেলায়। টিভিতে এক পলক দেখার ইচ্ছা প্রতিবেশীদের।
বিজ্ঞাপন
রিশাদ হোসেন সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের নুর আলম ইসলামের ছেলে। দুই ভাই বোনের মধ্যে রিশাদই বড়। তবে রিশাদের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে কাছের মানুষদের সহযোগিতা আর নিজের কঠোর পরিশ্রম। বাবার মায়ের অনুপ্রেরণায় স্বপ্ন পূরণে গ্রামের মাঠ থেকে বেড়ে উঠে আজ হয়ে উঠেছেন দেশের ভরসাময় একজন লেগ স্পিনার।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর আগ্রহ রিশাদ হোসেনের। আর ক্রিকেটার হিসেবে পথ চলার শুরু টা হয়েছিল জেলার ছমিরউদ্দিন স্কুলের অভ্যন্তরীণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকেই। পর পর ৩ টুর্নামেন্টের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়ে গড়েছিল নিজের জীবনের প্রথম রেকর্ড। যদিও তা কোন গ্রন্থে বা খাতায় লিপিবদ্ধ হয়নি। তবে এখান থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার প্রবল প্রতিজ্ঞা মনে একেছিল রিশাদ।
এর পর জেলার নজরুল স্মৃতি একাডেমির হয়ে নীলফামারী শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করত সে। সে সময় রবি 'খোজ দ্য ১ নম্বর লেগ স্পিনার' ইভেন্টে সেরা হয়েছিল রিশাদ। শুরু হয়েছিল নতুন পথ চলা। আর ফিরে তাকাতে হয়নি পিছনে।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে যায়গা করে নেন এই লেগ স্পিনার। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বাংলাদেশকে। পরে সুযোগ হয় বিপিএলে খেলার।
রিশাদের ক্রিকেট জীবনের পথ চলায় ভরসার নাম ছিল বাবা নুর আলম। নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। এছাড়াও মামা আসাদুজ্জামান আসাদ ছিলেন তার এই পথ চলার আরেক সঙ্গী। এক জুতা পরেই দুজন প্রাকটিস করেছেন। কখনো পরেছেন একি জার্সি একি টাউজার।
রিশাদের বাবা নুর আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ছোট বেলা থেকে আমার ছেলে ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট। শুরুতে ওর খেলার জোগান দিতে পারতাম না। আমি ওরে কাঠ দিয়ে ব্যাট বানায় দিতাম। তখন ব্যাট কিনে দিতে পাইনি। প্রথম ব্যাট কিনে দেই আমি তাকে সাড়ে ৫০০ টাকা দিয়ে। সে অনেক বায়না করত, ওই ব্যাটে হয়না, পরে একটা ব্যাট কিনে দিয়েছিলাম ২০ হাজার টাকা দিয়ে। ওর মা আমি কখনো ওরে মানা করিনি খেলাধুলায়। আর তার ফল হিসেবে আজ সে জাতীয় টিমের মূল স্কোয়াডে। আজ আমার বুক গর্বে ভরে গেছে, এই আনন্দে আমি কথা বলতে পারছিনা।

রিশাদের মামা আসাদুজ্জামান বলেন, রিশাদের আজকের এই জায়গায় আসা তার কঠোর পরিশ্রম আর তার বাবা মায়ের সাপোর্টের কারণে। আর রিশাদের পাশে থাকার কথা যদি বলেন তাহলে আমরা একসাথে প্রাকটিস করতাম। সে আমার ভাগিনা, এমনও দিন গেছে যে সকালে আমি প্রাকটিস করতাম যে জুতা দিয়ে বিকেলে সে ওই জুতা দিয়ে প্রাকটিস করত। আমি প্রাকটিস মাঠে পৌঁছে দিতাম। রবং মাঝে মাঝে একটা জার্সি দুজন পালা করে পড়ে প্রাকটিস করেছি। আজ আমরা গর্বিত। প্রত্যাশা রাখি যেন সে ১১ জনের তালিকায় থেকে দেশের জন্য কিছু করতে পারে।
ছমির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ভুবন মোহন তরফদার বলেন, রিফাত আমার সরাসরি ছাত্র। আমি ছমির উদ্দিন স্কুলের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। স্কুল থেকেই তার ক্রিকেট জার্নিটার শুরু। সে স্কুলে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলনে ছিল। এবং সে স্কুলের ৩ টি টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফল করে। এবং তার অবদানেই আমাদের স্কুল বিভাগীয় পর্যায়ে রানারআপ হয়েছিল। সে মূলত একজন স্পিনার। আমরা সাধারণত তাকে ভারতের স্পিনার অনিল কুমারের সাথে তুলনা করি। রিশাদ আজ জাতীয় টিমে ১৭ সদস্যে স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছে। আমরা নীলফামারীবাসী গর্বিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি তাকে ব্যবহার করে সঠিকমত তাহলে সে আরো ভালো কিছু দিতে পারবে।
জাতীয় টিমের ১৭ সদস্যের স্কোয়াডে থাকার অনুভুতির কথা জানতে মুঠোফোনে কথা হয় রিশাদ হোসেনের সাথে।
রিশাদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, সব মিলিয়ে ভালো লাগছে। এখন কিছু বলতে চাইনা, ভালো কিছু করার চেষ্টায় আছি ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমার জন্য।
রিশাদ ২০০২ সালের ১৫ জুলাই জন্মগ্রহন করেন। বর্তমানে নীলফামারী ছমির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা করছেন।
রাজু আহম্মেদ/এসও

