ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ২০২৫ সালটা যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো। একের পর এক তারকা ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। মাঠে তাদের ব্যাটিং, বোলিং আর নেতৃত্ব দেখে যে প্রজন্ম বড় হয়েছে, তাদের চোখে জল এনে দিয়েছে এই বিদায়গুলো। ভারতের দুই মহারথী রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলির টেস্ট অবসর থেকে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিস্ফোরক নিকোলাস পুরানের পূর্ণ বিদায়। এ বছরটা ক্রিকেটের ইতিহাসে 'যুগের অবসান' হিসেবে লেখা থাকবে। চলুন, দেখে নিই ২০২৫ সালে অবসর নেওয়া ক্রিকেট বিশ্বের সেই বড় বড় তারকাদের তালিকা।
রোহিত শর্মা
বিজ্ঞাপন
৭ মে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা করেন অভিজ্ঞ ওপেনার ও প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ১১ বছরের টেস্ট কেরিয়ারের ইতি টেনে রোহিত জানান, তিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের হয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের ঠিক আগে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি, যার পর শুভমান গিলকে নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এর আগেই ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক থেকে অবসর নিয়েছিলেন রোহিত। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ২৪টি টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে ১২টি জয় এনে দেন। ভারতকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। আইপিএলের মাঝেই এই খবর এসে ভক্তদের হতাশ করেছে।
বিরাট কোহলি
১২ মে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ১৪ বছরের বর্ণাঢ্য টেস্ট কেরিয়ারের ইতি টেনে কোহলি জানান, সিদ্ধান্তটি আবেগের হলেও সঠিক। ১২৩টি টেস্টে ৯২৩০ রান, ৩০টি সেঞ্চুরি এবং ৪৬.৮৫ গড়ে রান করে তিনি নিজেকে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অধিনায়ক হিসেবে ৬৮টি টেস্টে ৪০টি জয় এনে দিয়ে তিনি ভারতের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক হিসেবেও ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। মাঠের পরিসংখ্যান ছাড়াও, টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রাসী মানসিকতা ও আবেগ দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বিজ্ঞাপন
তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের ওপেনিং কিংবদন্তি তামিম ইকবাল ১০ জানুয়ারি ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। দেশের হয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান, অসংখ্য রেকর্ড এবং স্মরণীয় ইনিংস নিয়ে তিনি মাঠ ছাড়লেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছে, তামিমের অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
মাহমুদউল্লাহ (বাংলাদেশ)
দীর্ঘ সময় দেশের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন মাহমুদউল্লাহও অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ২০২৫ সালে আর কেন্দ্রীয় চুক্তির অংশ হবেন না। তাঁর শক্তিশালী ব্যাটিং ও নির্ভরযোগ্য বোলিং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক বছর এগিয়েছে।

নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
মাত্র ২৯ বছর বয়সে পূর্ণ আন্তর্জাতিক অবসর। টি-টোয়েন্টির সুপারস্টার, বিশাল ছক্কা মারার জন্য বিখ্যাত। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলবেন, কিন্তু দেশের জার্সি আর নয় – এটা সত্যিই শকিং!
হেইনরিখ ক্লাসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
জুনে সব ফরম্যাট থেকে অবসর। পাওয়ার হিটিংয়ের রাজা, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রোটিয়াদের মিডল অর্ডারকে শক্তিশালী করেছেন। ফ্যামিলি আর ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য এই সিদ্ধান্ত।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)
ওয়ানডে থেকে অবসর। 'বিগ শো' নামে পরিচিত এই অলরাউন্ডারের অবিশ্বাস্য ইনিংসগুলো (যেমন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি) ক্রিকেটপ্রেমীরা কখনো ভুলবে না।

মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)
জানুয়ারিতে সব ফরম্যাট থেকে বিদায়। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি রান করা এই ওপেনারের ২০১৫ বিশ্বকাপে অপরাজিত ২৩৭ রানের ইনিংস ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল আলোচিত থাকবে। ওয়ানডে ডাবল সেঞ্চুরি করা একমাত্র কিউই, বিস্ফোরক ওপেনার।
স্টিভ স্মিথ
অস্ট্রেলিয়ার ডাকসেট ব্যাটার স্টিভ স্মিথ ২০২৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন। ১৭০ ম্যাচে ৫,৮০০ রান ও দুটি বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি নিয়ে একদিনের ক্রিকেটে ইতি টানেন তিনি। যদিও তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলার পরিকল্পনা রেখেছেন। ৫০-ওভারের ক্রিকেটের জায়গায় নতুন প্রতিভাদের সুযোগ দিয়ে একদিনের ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন এই অজি তারকা ক্রিকেটার।
মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর। বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার।
শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে তাঁর ১০০তম টেস্ট খেলার মাইলফলক ছুঁয়ে অবসর গ্রহণ করেন। আফগানিস্তানের পেসার শাপুর জাদরানও জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন।
এই অবসরগুলো ক্রিকেটে নতুন প্রজন্মের দরজা খুলে দিয়েছে। শুভমন গিলের মতো তরুণরা এখন নেতৃত্ব নিচ্ছেন। কিন্তু রোহিত-কোহলি কিংবা স্টিভ স্মিথ বা মার্টিন গাপটিলের মতো তারকাদের শূন্যস্থান পূরণ করা সহজ হবে না। ক্রিকেটের এই বিদায়ী মুহূর্তগুলো দেখে চোখ ভিজে গেছে অনেকের। নতুন বছরে নতুন তারকাদের উত্থান দেখার অপেক্ষায়।

